‘১৩ জেলার ২০ পয়েন্টে ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ বেশি’ শিরোনামে যে খবর ছাপা হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, তা কাউকে উদ্বিগ্ন না করে পারে না। রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, এর মাঝে পূর্বাঞ্চলীয় জেলা চারটি এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় নয়টি। লক্ষ করার বিষয়, ২০১৩ সালের আগস্টে চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রীতি দাশ নামে এক প্রকৌশলী নিহত হন চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায়। সম্প্রতি একই রকম ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন খুলনায় কর্মরত এক রেলওয়ে কর্মচারী। কাকতালীয় কি না জানা নেই, বিগত জাতীয় নির্বাচন-পূর্ববর্তী সময়ে অর্থাৎ ২০১৩ সালে লক্ষণীয়ভাবে বেড়ে যায় চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা। এদিকে গত এক বছরে দেড় শতাধিক পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে দুই শতাধিক ব্যক্তি।
বিগত কয়েক দশকে দেশে সড়ক অবকাঠামোর প্রভূত উন্নয়ন সত্ত্বেও রেলপথে বিশেষত যাত্রী পরিবহনের চাহিদা কিছুমাত্র ক্ষুণœ হয়েছে, এ কথা বলা যাবে না। তারপরও সংস্থাটি লোকসানি হওয়ার কারণ হলো এর নানা অনিয়ম। রেলসেবা নিয়ে মানুষের অভিযোগও কম নয়। এটিও অনস্বীকার্য, হালে এ সেবার উন্নতি ঘটেছে চোখে পড়ার মতো। এর অধিকতর উন্নয়নে সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টাও দৃশ্যমান। এখন যদি পাথর নিক্ষেপের মতো ঘটনায় নিরাপত্তা বিঘিœত হয়, তাহলে তা রেলসেবা গ্রহণে যাত্রীদের মনোভাবকে নেতিবাচক করে তুলতে পারে। তাদের মধ্যে বাড়িয়ে তুলতে পারে নিরাপত্তাহীনতার বোধ। এতে ট্রেনযাত্রায় স্বস্তি হ্রাস পেতে পারে। ফলে যথা শিগগির চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ বন্ধ করা দরকার।
কে বা কারা এভাবে পাথর নিক্ষেপ করে, সে বিষয়ে বিভিন্ন তত্ত্ব চালু রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, একশ্রেণির দুষ্কৃতকারী নিছক বিকৃত আনন্দ লাভের উদ্দেশ্যে অপকর্মটি করে থাকে। কারও কারও মতে, ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ উদ্দেশ্যমূলক। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সম্প্রতি খুলনায় যে রেল কর্মচারী পাথর নিক্ষেপে আহত হয়েছেনÑঅবৈধভাবে ভ্রমণকারীদের জরিমানা করতেন বলে নাকি তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল একটি অসাধু চক্র! এক্ষেত্রে প্রকৃত কারণ কী, তা চিহ্নিতপূর্বক ব্যবস্থা নিতে হবে কর্তৃপক্ষকেই। এখানে স্থানীয় কমিউনিটিরও করণীয় রয়েছে। সচেতন পাঠকদের মনে থাকার কথা, ক’বছর আগে একটি বিশেষ রেল রুটে ছিনতাই বেড়ে গিয়েছিল আশঙ্কাজনকভাবে। যাত্রীর সর্বস্ব হরণের পর গলায় গামছা পেঁচিয়ে হত্যার মতো ঘটনাও কয়েকটি ঘটে তখন। শেষ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ একাধিক দুর্বৃত্ত নিহত হওয়ার পর ওই রুটে পরিস্থিতির নাটকীয় উত্তরণ ঘটে। চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় একই রকম দাওয়াই প্রয়োগ হোক, সেটা নিশ্চয়ই কারও কাম্য নয়। তবে সংশ্লিষ্টরা যেন ওই পথে যেতে বাধ্য না হন, সে লক্ষ্যে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও কমিউনিটিরই অধিক সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন। পাথর নিক্ষেপের পয়েন্টগুলো যেহেতু চিহ্নিত হয়েছে, তাই এক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থাও দ্রুত গৃহীত হবে বলে প্রত্যাশা।
