সাম্প্রতিক বন্যায় প্লাবিত দেশের বিভিন্ন জেলার, বিশেষত গ্রামীণ এলাকার ৫০ হাজারেরও বেশি গ্রাহক এখন রয়েছেন বিদ্যুৎ সরবরাহের বাইরে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) জানিয়েছে, পানি ধীরগতিতে নামায় নিরাপত্তাজনিত কারণে ওইসব এলাকায় বন্ধ রাখা হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। এমন খবরও রয়েছে, পানি নেমে গেলেও সরবরাহ লাইন ও ট্রান্সমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিভিন্ন স্থানে স্বাভাবিক করা যায়নি সরবরাহ। কিছু এলাকায় এ অবস্থা বিরাজ করছে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় এটা এক ধরনের বাস্তবতা হলেও তা প্রত্যাশিত নয়। এতে মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে সন্দেহ নেই। যেসব এলাকায় পানি নেমে গেছে, সেখানকার ক্ষতিগ্রস্ত লাইন মেরামত, মিটার ও ট্রান্সমিটার প্রতিস্থাপন করে বিদ্যুৎ সরবরাহ দ্রুত স্বাভাবিক করা দরকার। তাহলে ক্ষতিগ্রস্তদের স্বাভাবিক জীবনধারায় ফেরার প্রক্রিয়াও অনেকটা গতি পাবে।
আধুনিক যুগে মানুষের জীবনধারা অনেক বেশি বিদ্যুৎনির্ভর। শুধু রাতে ঘর আলোকিত করার জন্য নয়, মোবাইল ফোন ও অটোরিকশায় চার্জ দেওয়া, ট্যাংকে পানি সরবরাহ, ফ্রিজ চালু রাখা, চুলা প্রজ্বলনসহ গৃহস্থালি বিভিন্ন কাজে বিদ্যুতের বিকল্প নেই। এর সরবরাহ স্বাভাবিক না থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় খাবার হোটেল, লন্ড্রি, ফটোকপিয়ার, কম্পিউটার, ছবি প্রিন্ট ও মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীও। কয়েক দিন ধরে যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ নেই, সেখানে ওইসব সেবা প্রাপ্তি যে কতটা দুরূহ হয়ে পড়েছেÑতা সহজেই অনুমেয়। এজন্য স্থানীয় হাসপাতালেও বন্ধ রাখতে হচ্ছে অনেক জরুরি সেবা। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় উপদ্রুত অঞ্চলে দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা ও প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টা প্রত্যাশিত।
আরইবি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের সমিতিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মিটার, ট্রান্সফরমার, বৈদ্যুতিক খুঁটি ও লাইন প্রতিস্থাপন করবে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় গ্রাহক হয়রানি ও অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার খবর পাওয়া গেছে অতীতে। এবার যেন এর পুনরাবৃত্তি না ঘটে। বন্যাকবলিত এলাকায় এটা আরও বেশি করে প্রত্যাশিত। এজন্য তদারকি জোরদার করা হোক সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে। শুরু থেকেই নির্দেশনার মাধ্যমে সতর্ক করা হলে তেমন মনোভাব পোষণকারীরা কিছুটা হলেও নিবৃত্ত হবেন।
ক’দিন পরই দেশে উদ্যাপন হবে ঈদুল আজহা। এ উৎসবে কোরবানি করা পশুর মাংস ফ্রিজে সংরক্ষণ করেন অনেকে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি, যথাসময়ে সেটি করা না হলে মাংস সংরক্ষণ ঘিরেও গ্রাহকের ভোগান্তি বাড়বে। একই সঙ্গে অন্যান্য সেবা যদি চালু করা না যায়, তাহলেও ঈদ উদ্যাপন নির্বিঘœ হবে না। আমরা চাই, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি নজরে রাখবে আরইবিভুক্ত সমিতিগুলো। পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহ যাতে স্বাভাবিক করা যায়, সেজন্য জনবল ও অবকাঠামোগত প্রস্তুতিও তাদের থাকা চাই।