Print Date & Time : 7 September 2025 Sunday 9:19 am

বন্যাদুর্গত এলাকায় সহায়তা বিতরণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করুন

বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য ৫০ লাখ ডলার সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থার ঢাকা কার্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার জানানো হয়, জাতিসংঘের কেন্দ্রীয় জরুরি সাড়াদান তহবিল (সিইআইএফ) থেকে দেয়া হচ্ছে এ সহায়তা। ঢাকায় জাতিসংঘের এক প্রতিনিধিদল সিলেট অঞ্চল ঘুরে এসেছে। বন্যার করুণ চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কের একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এ অঞ্চলে এবারের বন্যার মাত্রা স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র। অনেক পরিবার বাস্তবিক অর্থেই সবকিছু হারিয়েছে। অনেকে এখনও আশ্রয়কেন্দ্রে বাস করছেন। কেননা, বন্যার পানি নামছে খুব আস্তে আস্তে, আর তাদের বাড়িঘর একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সহায়তা কার্যক্রমে সরকারকে সহায়তা করার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য খাদ্য, সুপেয় পানি, নগদ অর্থ, জরুরি ওষুধ, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, হাইজিন কিটসহ বিভিন্ন সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছে জাতিসংঘ।

বন্যা মোকাবিলায় আমাদের সাফল্য প্রশ্নাতীত। তবু মাঝে মধ্যে কিছু অনিয়ম অব্যবস্থাপনার খবর আমাদের ব্যথিত বরে, সরকারকে বিব্রত করে। আমরা আশা করি, সরকার এ বিষয়ে সচেতন আছে। জাতিসংঘের দেয়া ত্রাণ সহায়তা যাতে প্রকৃত বন্যাদুর্গতরা পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। 

বন্যায় অনেকের কাজ নেই। কর্মহীনভাবে অলস সময় পার করতে বাধ্য হচ্ছে কৃষক, দিনমজুর। তাই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিতে হবে।

বানভাসি মানুষ অভাবে ও অর্ধাহারে-অনাহারে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে দিন যাপন করছে। এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে নাগরিকদেরও। সামর্থ্য অনুসারে বন্যাদুর্গতদের অর্থ, ত্রাণসামগ্রী, খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধ ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা যেতে পারে। ক্ষতিগ্রস্তদের বেশিরভাগই নিরীহ, অসহায়। প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করার সাহস ও সুযোগ নেই তাদের। এমন ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে সরকারি-বেসরকারি সাহায্য পেতে পারে, অপেক্ষাকৃত প্রভাবশালীরা সে বিষয়ে ভূমিকা রাখতে পারেন। সাহায্য-সহযোগিতা যেন লোকদেখানো বা ফটোসেশনের জন্য না হয়। মনে রাখতে হবে, বিভিন্ন সময় আমাদের মানবিক কার্যক্রমের প্রশংসা করেছেন জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য অর্থ তহবিল সংগ্রহ, সাহায্য-সহযোগিতা ও বিতরণের সময় স্থানীয় প্রশাসন, উন্নয়নকর্মী বা স্বেচ্ছাসেবী দলের সঙ্গে সমন্বয় করে ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচিকে অর্থবহ করতে হবে। আমাদের কোনো কার্যক্রম নিয়ে যেন কোনো প্রশ্ন তুলতে না পারেন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিরা।

ত্রাণ বিতরণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার পাশাপাশ অন্যের সহায়তার অপেক্ষা না করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বন্যার্তদের মধ্যে সাধ্যমতো সহায়তা করতে হবে। বিভিন্ন পেশাজীবীরা খাদ্য, সুপেয় পানি, জরুরি ওষুধ, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট প্রভৃতি বিতরণ করতে পারেন, দুর্গতদের বিনা খরচে স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শ দিতে পারেন। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কর্মীদের সঙ্গে ত্রাণ-সহায়তা বিতরণেও সহায়তা করতে পারেন তারা।