বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের আমনের চারা সরবরাহের উদ্যোগ

প্রতিনিধি, বাকৃবি: বন্যাপরবর্তী খাদ্য সংকট হওয়া নতুন কিছু নয়। এর আগেও বন্যাপরবর্তী দেশে খাদ্য সংকট হয়েছিল। এবারও ভারতে আকস্মিক বাঁধ খুলে দেয়ার কারণে দেশের প্রায় ১২টি জেলা তলিয়ে গেছে। যে যার অবস্থান থেকে উদ্ধার ও ত্রাণ সহায়তা করছে। দেশের শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করছেন। কিন্তু এই আকস্মিক বন্যায় ডুবে নষ্ট হয়েছে আমন ধানের চারা। কিন্তু কিছুদিন পর বন্যার পানি নেমে গেলেও, আবার চারা তৈরি করতে এক মাসের মতো সময় লাগবে। এতে করে আমন ধান লাগানোর সময় চলে যাবে। আবার বন্যার কারণে চারা তৈরি করতে কৃষকরা সমস্যায় পড়বেন। দেশে দেখা দেবে খাদ্য সংকট। এই খাদ্য সংকটের কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা বন্যাপরবর্তী কৃষকদের ধানের চারা দিয়ে সহায়তা করার উদ্যোগ নিয়েছেন। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে অন্যান্য কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক- শিক্ষার্থী, বীজ কোম্পানি এবং কৃষি উদ্যোক্তারা।

জানা যায়, বন্যাপরবর্তী সময়ে ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বন্যাদুর্গত এলাকায় কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে আমন ধানের চারা বিতরণ করার উদ্যোগ নিয়েছে এই শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরেই লেট আমন ধানের চারা সরবরাহ করবেন। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরেই দ্রুত চারা সরবরাহ করা গেলে দেশের খাদ্য সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব হবে বলে জানান তারা। এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত বিইউ ধান-১ ধানের জাতের চারা সরবরাহ করবে। ধানের বীজের পরে সবজির বীজও সরবরাহ করা হবে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।

গত শনিবার দুপুরে বাকৃবির কৃষিতত্ত্ব বিভাগের গ্যালারিতে একটি আলোচনা সভায় বিভিন্ন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু উদ্যমী ছাত্রছাত্রীর নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন অধ্যাপক, কৃষি বিজ্ঞানী, কৃষি উদ্যোক্তা এবং করপোরেট ব্যক্তির পরামর্শক্রমে বন্যার্তদের চারা সরবরাহের উদ্দেশ্যে এগ্রি স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স গঠন করা হয়।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ১৪ থেকে ২১ দিন বন্যা অবস্থা থাকলে বা তার বেশি সময় পার হয়ে গেলে আমরা আমন মৌসুম আর ধরতে পারব না। সেক্ষেত্রে চাহিদা মেটাতে আমাদের বিশাল পরিমাণে চাল আমদানি করতে হবে বা দুর্ভিক্ষ অবস্থা হতে পারে। এতে কয়েক হাজার কোটি ডলার রিজার্ভ থেকে চলে যাবে। সেটা মোকাবিলায় আমাদের খুব দ্রুতই চারা তৈরি করা শুরু করতে হবে। যেন আমরা পানি নেমে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে চারা সরবরাহ করতে পারি। এতে আমরা অনেক এগিয়ে থাকবো। পরবর্তী সময়ে বোরো মৌসুম যথাযথসময়ে ধরতে পারব এবং এটাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।

এ বিষয়ে বাকৃবির স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মো. আব্দুল্লাহ আল মুন্না বলেন, প্রাথমিকভাবে পাঁচ একর জমির ব্যবস্থা হয়েছে বীজ বপন করার জন্যে। বাকৃবি ক্যাম্পাস থেকে চার একর এবং নোয়াখালী থেকে এক একর জমিতে বীজ বপন করে চারা তৈরির কাজ করা হবে। জমির পরিমাণ আরও বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। আমরা ধান বীজ সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করছি। আমরা যত বেশি বীজ সংগ্রহ করতে পারব তত বেশি বন্যাদুর্গত এলাকায় ধানের চারা রোপণ করতে পারব। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার আশপাশের অঞ্চলে জমির ব্যবস্থা করতে পারলে সেটা খুবই ফলপ্রসূ হবে। এতে যোগাযোগ সহজ হবে, খুব সহজেই চারা গাছ ওই এলাকার মাটির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে।

এ বিষয়ে বাকৃবির খামার ব্যবস্থাপনা শাখার প্রধান তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) মো. জিয়াউর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমাদের চারা সংকট রয়েছে। তবে আমরা খামার ব্যবস্থাপনা শাখা থেকে তিন একর জায়গা দিয়ে সাহায্য করতে পারব। শিক্ষার্থীরা তিন একর জায়গায় বীজধান বপন করে ধানের চারা উৎপাদন করতে পারবে।