বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে পর্যাপ্ত সহায়তা দিন

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সার-বীজ সহায়তা দিচ্ছে সরকার। শনিবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ১৭ জেলার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে ১১ কোটি টাকার কৃষিবীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। এক লাখ ৮৫ হাজার কৃষকের মধ্যে বীজ ও সার বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রথম ধাপে ৯৪ হাজার কৃষককে পাঁচ কোটি ৮৮ লাখ টাকার আমন বীজ ও সার বিনা খরচে দেয়া হয়। দ্বিতীয় ধাপে বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত চারটি জেলা সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের ৭০০ কৃষককে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকার নাবি জাতের (লেইট ভ্যারাইটি) আমন বীজ ও সার সহায়তা দেয়া হয়েছে। তৃতীয় ধাপে ৯০ হাজার কৃষকের জন্য প্রায় পাঁচ কোটি টাকার পুনর্বাসন সহায়তা বাস্তবায়নের কাজ চলছে।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা দান কর্মসূচি ভালো উদ্যোগ। সহায়তা পর্যাপ্ত কি না, সে প্রশ্ন না তুলে আমরা সহায়তা দানের আগে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক নির্বাচন করা হয়েছে, তা জানা গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে লক্ষ করা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের পরামর্শমতো তালিকা তৈরি হয়। এ কারণে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক প্রণোদনা ও সহায়তা পান না। ক্ষতিগ্রস্ত সব কৃষকের মধ্যে সহায়তা বিতরণ করা গেলেই এ কর্মসূচি সার্থক হবে।

যেহেতু বন্যা প্রতি বছরই হয়, সেহেতু বন্যা মোকাবিলায় আমাদের সাফল্য থাকার কথা। কিন্তু আমাদের কৃষকরা বরাবরই উপেক্ষিত থাকেন। বন্যাদুর্গত এলাকার সবাই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। কিন্তু এটি তো সন্দেহাতীত সত্য, কৃষকরাই সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাদের ফসল নষ্ট হয়, গবাদি পশু মারা যায়, ঘরবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি। বন্যায় প্রতি বছরই নতুন তালিকা করতে হয়। এটি কতটা বাস্তবসম্মত ও পরিকল্পিত, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। একটি জাতীয় তথ্য ভাণ্ডার করা গেলে ওই তালিকা ধরে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক নির্বাচন করা যেত। নির্দিষ্ট সময় অন্তর তা হালনাগাদ করলে এবং তালিকা সর্বসাধারণের জন্য উš§ুক্ত থাকলে, তা যে কেউ দেখতে পারে। প্রয়োজনে তালিকা সংযোজন ও সংশোধন করা যায়।

প্রতি বছর দেশে বন্যা হলেও প্রতি বছর নতুন করে প্রস্তুতি নিতে হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা থেকে শতভাগ মুক্ত থাকা সম্ভব নয়। বন্যাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে বিশেষ কৃষি প্রকল্প নেয়া যেতে পারে। কৃষকের সমস্যা চিহ্নিত করে খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তার লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া জরুরি। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশের স্থিতিশীলতায় কৃষি খাতের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষক প্রায়ই ফসল হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং রাষ্ট্র থেকে যথাযথ সহযোগিতা না পেলে কৃষিকাজে আগ্রহ হারাবে। এটি কৃষি উৎপাদনে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে, যা বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান, গ্রামীণ জনপদের জীবিকা ও জাতীয় অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করতে পারে। এগুলো বিবেচনায় রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।