স্বাধীনতা অর্জনের পর আমাদের অনেক সাফল্য থাকলেও নদী শাসন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে তেমন সাফল্য নেই। প্রতিবছরই বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ফসলহানি হয়, হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়। স্থাপনা, অবকাঠামো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গ্রামগঞ্জের কী পরিপরিমাণ ক্ষতি হয়, তা নিরূপণ করা সম্ভব নয়।
নদীভাঙন যেন আমাদের সামষ্টিক নিয়তি। উজানে ভারী বর্ষণে ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি বাড়তে থাকায় আগামী ১০ দিনের মধ্যে দেশের আট জেলার অনেক এলাকা পাঁচ থেকে সাত দিনের বন্যায় পড়তে যাচ্ছে বলে গতকাল শেয়ার বিজে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দেশের অন্তত পাঁচটি নদীর পানি পাশের জেলাগুলোয় ছড়িয়ে পড়তে পারে। ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, তিস্তা, পদ্মা, আত্রাই ও হাওর এলাকার নদীগুলোর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এক সপ্তাহ লাগবে নামতে। সব মিলিয়ে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের ১৮ জেলায় আগামী দুই সপ্তাহ বন্যার পানি থাকতে পারে।
দখলে-দূষণে আমাদের নদীগুলো জর্জরিত। প্রাকৃতিক কারণে এমনিতেই অনেকগুলো নদী মৃতপ্রায়। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে দখলদারদের দৌরাত্ম্য। তাদের তৈরি স্থাপনায় নদী হয়ে যাচ্ছে সরু। নদী নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানও অনেক। নৌপথের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ), নদীর তীর রক্ষা ও খননের কাজ পানি উন্নয়ন বোর্ডের, নদীর জমির মালিক হিসেবে তার ইজারা দিচ্ছে ভূমি মন্ত্রণালয়, নদীর পানির মান দেখার দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের। মৎস্যসম্পদ দেখে মৎস্য অধিদপ্তর। নদীতে থাকা কুমির, ডলফিনের মতো প্রাণী সুরক্ষার দায়িত্বে বন বিভাগ, নদী থেকে সেচের ব্যবস্থা ও রাবার ড্যাম (বিশেষ ধরনের বাঁধ) তৈরি করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন। নদী থেকে পানি তুলে পরিশোধন করে তা শহরে সরবরাহ করছে ওয়াসা ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। আর সামগ্রিকভাবে নদী রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে। উচ্চ আদালতও নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করেছে। এতগুলো সংস্থা কাজ করলেও নদী রক্ষার প্রক্রিয়ায় গতি আসছে না।
পানিপ্রবাহ বিঘিœত হয়ে নদী যেমন শুকিয়ে যাচ্ছে, তেমনই পানি দূষিত হওয়ার কারণেও নদী মরে যাচ্ছে। তাই নদী রক্ষা ও শাসনে কার্যক্রম সারা বছর চলমান থাকা উচিত। দুঃখজনক হলো, নদীর সংখ্যা নিয়েও সঠিক তথ্য নেই। প্রতিবছরই ভাঙনের সময় নদী রক্ষার অঙ্গীকার করা হয়, বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও শোনা যায়। প্রতিবছরই নদীর তীর ভাঙে। মানুষের দুর্ভোগের শেষ হয় না। বন্যার ক্ষতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি এবং দুর্গতদের কষ্ট লাঘবকে অগ্রাধিকার দিয়ে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।