Print Date & Time : 5 July 2025 Saturday 7:24 pm

বন্যার ক্ষয়ক্ষতি বিষয়ে পরামর্শ বিবেচনায় নিন

বৃহস্পতিবার ‘বন্যা ২০১৭: পরিস্থিতি ও করণীয়’ শীর্ষক সংলাপে মূল্যায়ন প্রতিবেদন পেশ করেছে মর্যাদাসম্পন্ন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের দু’দফা বন্যায় ফসল, মৎস্য ও বিভিন্ন অবকাঠামোর যে ক্ষতি হয়েছে, তা জিডিপির দশমিক ৪৪ শতাংশ। সংলাপে মূল্যায়ন প্রতিবেদনের ওপর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের অংশীজনও মত দিয়েছেন। এতে উঠে এসেছে বিভিন্ন বিষয়। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে বিস্তৃত হাওরাঞ্চলে পাকা ফসলের ক্ষেত জলমগ্ন হয়েছে। অন্য অঞ্চলের বন্যায়ও রয়েছে এমন কারণ। ফলে সংলাপে বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। আলোচকরা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এবং বন্যা-পরবর্তী সংস্কারকাজে স্থানীয় জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন। আলোচিত হয়েছে পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়া নদী ড্রেজিংয়ের বিষয়ও। মন্ত্রণালয়ের অর্ধেক বরাদ্দই এতে খরচ হবে বলে জানিয়েছেন পানিসম্পদমন্ত্রী। এক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা গেলে ড্রেজিং ফলপ্রসূ হবে।

সংলাপে জোর দিয়ে বলা হয়েছে এবং আমরাও এটা জানি, বিপুল অর্থব্যয়ে বানানো বড় অবকাঠামোগুলোর নির্মাণ-পরবর্তী রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার তেমন হয় না। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ক্ষেত্রে এটি হলে তা বেশি উদ্বেগজনক। কেননা পানির ক্রমাগত তোড়ে বাঁধে কোনো ধরনের ফাটল, ফাঁকফোকর হলে তা বড়ই হবে। সেদিকে সযতœ নজর রাখা দরকার। প্রায়ই গুরুত্বপূর্ণ বাঁধের ওপর বসতি গড়ে ওঠাসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড চলতে দেখা যায়। অবকাঠামো নির্মাণকালেই এর আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করা হয়। পরে যথানিয়মে রক্ষণাবেক্ষণ না হলে ওই স্থাপনার আয়ু কমে যায়। ওইসব বাঁধের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেছে কি না, তা খতিয়ে দেখা চাই। কিছুদিন আগে শেয়ার বিজে প্রকাশিত খবরে তিস্তা বাঁধের ওপর দিয়ে অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই যান চলাচলের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পানিসম্পদমন্ত্রী ওই সংলাপে বলেছেন, বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণে জনবল কম। এটি সত্য হলে সেক্ষেত্রে পরিবর্তন আনার উদ্যোগ তাকেই নিতে হবে। বাঁধের নানা অপব্যবহার নিয়ে উদাসীনতাকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। অন্য যেসব সমস্যার কথা সেখানে এসেছে, সেগুলো প্রতিকারের দায়িত্ব নিতে হবে মন্ত্রণালয়কেই।

দিনাজপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় এবার বন্যায় যে ক্ষতি হয়েছে, তাতে অবাক হয়েছেন অনেকে। নিকট অতীতে সেখানে এমন বন্যা হয়েছে, তা অনেকেরই মনে পড়ে না। এখানেও বন্যার জন্য বাঁধের ত্রæটিকে দায়ী করা হয়। বাঁধের ত্রæটি বলে আসলে কিছু থাকার কথা নয়। আমরাই নির্মাণ বা নির্মাণ-পরবর্তী রক্ষণাবেক্ষণে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারিনি, যেজন্য বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেশি হয়েছে।

বন্যার নিয়ন্ত্রণযোগ্য ক্ষতি ঠেকাতে ব্যর্থ ব্যক্তিরা জবাবদিহির বাইরে থেকে গেলে এমনতরো ঘটনা হয়তো আবার ঘটবে। এ ধরনের বিপর্যয়ে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় সংকট বাড়ে। এ বছরে উদ্ভ‚ত এই সমস্যা মোকাবিলায় করণীয় সম্পর্কে কিছু ধারণা দিয়েছে সিপিডি। দেশে কর্মরত অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরামর্শও সরকার বিবেচনায় নেবে বলে প্রত্যাশা। দাতাসংস্থার পরামর্শও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।