Print Date & Time : 5 July 2025 Saturday 10:15 pm

বন্যা-ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান সংস্কার হোক

‘চোখের সামনে পদ্মায় ডুবল স্কুল ভবনটি’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, তা অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বন্দরখোলা ইউনিয়নের এসইএসডিপি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের তিনতলা ভবন পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেল সবার চোখের সামনে। গত বুধবার মধ্যরাতে নূরুদ্দিন মাদবরেরকান্দি গ্রামের এ বিদ্যালয় ভবন মাঝ বরাবর দ্বিখণ্ডিত হয়ে হেলে পড়ে। পরদিন পুরোপুরি পদ্মায় বিলীন হয়ে যায়। একই দিন চাঁদপুরের রাজরাজেশ্বর ওমর আলী উচ্চবিদ্যালয়ের তিনতলা ভবনটিও মেঘনায় বিলীন হয়ে যায়।

জানা গেছে, ২০০৯ সালে শিবচরে পদ্মার চরাঞ্চলবেষ্টিত বন্দরখোলা ইউনিয়নের নূরুদ্দিন মাদবরেরকান্দি এলাকায় স্থাপন করা হয় এসইএসডিপি মডেল উচ্চবিদ্যালয়। এটি চরের ‘বাতিঘর’ হিসেবে পরিচিত ছিল। স্কুল ভবন নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে অসংখ্য মানুষ ট্রলারে করে বিদ্যালয়টি দেখতে আসে।

চোখের সামনে এভাবে বিদ্যালয় ভবনটি ভেঙে নদীতে পড়ার সময় অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।

বিদ্যালয়টিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের সবাই চরের বাসিন্দা। মূল ভূখণ্ড এখান থেকে বেশ দূরে হওয়ায় চরাঞ্চলের ছেলেমেয়েরা অন্যত্র গিয়ে লেখাপড়া করার সুযোগ পেত না। এ বিদ্যালয় হওয়ার পর চরের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ার সুযোগ পায়। ছোট-বড় প্রায় ২৪টি গ্রামের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী ছিল বিদ্যালয়ে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন জানান,  বিদ্যালয়টি নদীতে বিলীন হয়ে ছেলেমেয়েদের শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে গেল। কভিড মহামারি শেষ হওয়ার পরও আর পড়াশোনা চালু করতে পারব কি না জানি না।’

প্রতি বছর বন্যায় ফসল, জমি, গবাদিপশু ও সরকারি বেসরকারি অবকাঠামো-স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে বা বিনষ্ট হয়ে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়। এসব ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে বিদ্যালয়, কমিউনিটি সেন্টার, সাইক্লোন শেল্টার প্রভৃতি সামাজিক প্রতিষ্ঠান স্থাপনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। যথাসম্ভব কম সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করে বন্যা শেষ হলে দ্রুত বরাদ্দ দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করতে হবে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর এবং করোনাভাইরাস মুক্ত হলে ভাড়া বাড়িতে কিংবা অস্থায়ীভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে।

ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে অগ্রাধিকার নির্ধারণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে বৈষম্যহীন পদক্ষেপ নিতে হবে। কোন প্রতিষ্ঠান নতুন করে স্থাপন করতে হবে, কোনটি সংস্কার করতে হবে, তা আগে চিহ্নিত করা উচিত। বরাদ্দ বেশি পাওয়ার আশায় অনেকে সঠিক তথ্য দেয় না। তদবিরে প্রভাবিত না হয়ে অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় প্রকৃত অবস্থা বিষয়ে সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে।