Print Date & Time : 11 September 2025 Thursday 7:10 am

বন্যা মোকাবিলায় পূর্বপ্রস্তুতি নিন

সাম্প্রতিক সময়ে আগাম বন্যায় বৃহত্তর সিলেটসহ কয়েকটি বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্লাবনে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গত চার থেকে পাঁচ দিনে বন্যার পানি নামতে শুরু করায় অনেকে নতুন করে ঘরে ফেরার যে আশা করেছিলেন, তা আবার শঙ্কার মধ্যে পড়েছে। বন্যাকবলিত মানুষ এখন আবার বিপদের মুখে। শনিবার দেশের সাত জেলার ৯ নদীর ১০ পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ওপর রয়েছে। কয়েক দিন আগে সাত পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ওপর ছিল। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, কেন্দ্রের পূর্বাভাস অনুযায়ী, সুরমা ও কুশিয়ারা নদী ছাড়া দেশের সব প্রধান নদনদীর পানি বাড়ছে।

বন্যাকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলা হলেও আমাদের দেশে এটিকে মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ বলা যায়। যেমন, বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাস আমলে নেয়া হয় না, নদী দখল নিবৃত্ত করতে কার্যকর ও স্থায়ী ব্যবস্থা নেই। ফলে পানি সরে যাওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। ভাঙন ও বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলোর উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে। ২০১৮ সালে এনইসির সভায় বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা পাস হয়। পরিকল্পনায় বন্যা, নদীভাঙন, শাসন, ব্যবস্থাপনা ও নগর বন্যা নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। তখন বলা হয়েছে, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ২০৩০ সালের মধ্যে জিডিপিতে বাড়তি দেড় শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তখনই ফলপ্রসূ হবে যখন বছর বছর বন্যায় লাখ লাখ লোক দুর্ভোগে নিপতিত হবে না।

দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন নেই। কিন্তু অকস্মাৎ বন্যার জন্য বন্যাপ্রবণ এলকায় কিছু বিকল্প ব্যবস্থা রাখা উচিত। দুর্যোগের আগাম খবর পেতে টোলফ্রি হটলাইন (১০৯০) চালু করা হয়েছে। দুর্যোগের আগাম খবর পেয়ে সাধারণ কী প্রস্তুতি নেবে? মূল দায়িত্ব পালন করতে হবে রাষ্ট্রকেই। বন্যার সময় দুর্গতদের কষ্ট লাঘবকে অগ্রাধিকার দিয়ে ব্যবস্থা তাদের জন্য খাদ্য, ওষুধ  ও বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা ও মানবিক সহায়তা কর্মসূচি যাতে ব্যাহত না হয়, সেজন্য আগেভাগে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

পারিবারিক পর্যায়ে বন্যা মোকাবিলায় পূর্বপ্রস্তুতি থাকে। অনেকে ঘরে খাদ্যদ্রব্য ও অন্যান্য সামগ্রী সংরক্ষণের বিষয় জানেন। নিজেদের নিরাপদ আশ্রয়, গবাদি পশুর খাদ্য সংরক্ষণ এবং নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য যানবাহন তথা নৌকা সংগ্রহ করা সবার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না।  তাই জনপ্রতিনিধি,  স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনেরও প্রস্তুতি গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ ঘরে বা আশ্রয়কেন্দ্রÑযেখানেই থাকুন, তাদের খাদ্য ও পানীয়ের সংস্থান করতে হবে। তাদের বাঁচাতে হবে। প্রত্যেক বন্যাদুর্গত মানুষের কাছে সরকারের সহায়তা পৌঁছেছে কি না, মাঠ প্রশাসনকে সার্বক্ষণিকভাবে তা তদারকি করতে হবে। পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় পানিবাহিত বা অন্য কোনো রোগের প্রাদুর্ভাব যেন না ঘটে, সেদিকেও সতর্ক থাকতে হবে।