নিজস্ব প্রতিবেদক: চলমান বন্যা শেষে সময়মতো কার্যকর পুনর্বাসন কর্মসূচি নেওয়ার ওপর সংশ্লিষ্টদের জোর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভার বৈঠকে বন্যা নিয়ে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘নির্ধারিত বিষয়ে বন্যা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি আমাদের জানিয়েছেন বন্য যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, সম্ভাবনা আছে, সেক্ষেত্রে আমরা কীভাবে এটাকে মোকাবিলা করব।
এজন্য ফিল্ড লেভেলে ইন বিল্ড (মাঠ পর্যায়ে তৈরিই আছে) একটা ম্যাকানিজম আছে, তারপরও একটা এক্সট্রা এফোর্ট দেওয়া হচ্ছে। বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া আছে, কারণ হলো একটা অ্যাপ্রিহেনশন (উদ্বেগ) আছে যে, পানি নামতে দেরি হতে পারে। যদিও এখন পানি নেমে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেডিকশন আছে, বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের যে দৃশ্যপট আছে তাতে বঙ্গোপসাগরসহ কতগুলো সাগরের কথা বলেছে, সেখানে পানির উচ্চতা এই সময়টাতে বেড়ে যাচ্ছে। সাগরের পানির উচ্চতা বেড়ে গেলে সেক্ষেত্রে পানি নামার ফ্লো কমে যাবে। ভাদ্র মাসের প্রথম থেকে হয়তো একটু লংগার পিরিওড পানি স্ট্যাগার হয়ে থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে আমাদের প্রিপারেশন রাখতে হবে।’
‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের ক্লিয়ার ইন্সট্রাকশন দিয়ে দিয়েছেন, যত রকমের সাহায্য সহযোগিতা মানুষের দরকার সব করতে হবে। কভিডের এই সময় যেহেতু বন্যা তাই একটু বেশি কেয়ারফুল থাকতে হবে। অলরেডি প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়ের মাঠপর্যায়ে যে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ করেন, তারা অবশ্যই সেখানে থাকবেন।’
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘পুনর্বাসন প্রোগ্রামগুলো যেন খুব ভালো হয়, খুব এফেকটিভলি হয়, টাইমলি হয়-সেটার বিষয় মন্ত্রিসভা বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী জোর দিতে বলেছেন।’
বন্যায় আমনের ক্ষতি হলেও পলির কারণে বন্যার পরের সুফলটা নিতে কৃষি বিভাগের
ব্লক সুপারভাইজারদের নির্দেশনা দেওয়ার কথা জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘উঁচু এলাকায় আমনের ফলন ভালো হবে বলে মনে হচ্ছে। কৃষিমন্ত্রী এটা ডিটেইলস এক্সপ্লেইন করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বিশেষ করে ইন্সট্রাকশন দিয়েছেন, রোপা আমনে যেন আমরা খুব অ্যাটেনটিভ থাকি। এর পুরো সুযোগটা যদি আমরা নিতে পারি তবে বোরোতে যে এক্সেস প্রোডাকশন হয়ে গেছে, আশা করা যাচ্ছে আমন ও রোপা আমন মিলে আমাদের উৎপাদন ভালো হলে সেক্ষেত্রে আমাদের জন্য একটা বড় হাতিয়ার হবে। খাদ্যদ্রব্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ আছি। যেখানে যেখানে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র পর্যাপ্ত নয়, সেখানে আমি নিজে নির্দেশনা দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী আমাদের বলেও দিয়েছেন ওই এলাকায় স্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় লোকজন আশ্রয় নিতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বন্যাদুর্গত এলাকায় স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, বিশেষ করে করে গরু-বাছুরকে যে ভ্যাকসিন দেওয়া হয় সেগুলো যেন সব রেগুলার দেওয়া হয়। এগুলো অলরেডি সুপারভিশন করা হচ্ছে, ইন্সট্রাকশন দেওয়া হচ্ছে।’
কভিডের কারণে ত্রাণ সরবরাহের জন্য সরকারের প্রস্তুতি ছিল জানিয়ে খন্দকার আনোয়ার বলেন, ‘সবকিছু ওপেন করে দেওয়ায় ত্রাণের চাহিদা কমে গেছে। ভালো একটা রিলিফ আমাদের কাছে মজুত আছে।’
ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, বন্যায় ৩১ জেলার প্রায় ৪০ লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে চলতি ২০২০ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল-মে-জুন) মন্ত্রিসভা বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৭১ দশমিক ৪৩ শতাংশ বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, গত এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত মন্ত্রিসভার চারটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে মোট ২৮টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে ২০টি। আটটি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। শতকরা হিসাবে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের এ হার ৭১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, এই সময়ে সংসদে আইন পাস হয়েছে তিনটি। গত তিন মাসে মন্ত্রিসভা বৈঠকে কোনো নীতি বা কর্মকৌশল, চুক্তি বা প্রটোকল অনুমোদিত হয়নি।