এস এম রুবেল, কক্সবাজার:বনায়নের নামে পাহাড়ে আগুন লাগিয়ে কৃষকদের পানের বরজ, গাছপালা, বিভিন্ন জীববৈচিত্র্য, পশুপাখিসহ তাদের আবাসস্থল পুড়িয়ে দিয়েছে শাপলাপুর বনবিট কর্মকর্তা নুরে আলম নাহিদের নেতৃত্বে বনপ্রহরীরা। এ সময় ৪টি পান বরজ, ছোট-বড়-মাঝারি সাইজের ৪-৫শ গাছ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বিনষ্ট হয়ে যায় পশুপাখিদের আবাসস্থল। ধারণা করা হচ্ছে আগুনে বহু পশুপাখির মৃত্যুও হয়েছে। এমনটি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
তারা আরও জানান, ২৯ এপ্রিল দিনের বেলায় মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের জেএমঘাট এলাকার চিকনীর পথ পাহাড়ি এলাকায় আগুন লাগানো হলেও আগুন ২ মে দুপুরেও জ্বলতে দেখা গেছে। সেই আগুনে ওই গ্রামের ছালেহ আহমদের ছেলে বদিউল আলম, জালাল আহমদের ছেলে নুরুল ইসলাম, মুহাম্মদ রফিক উদ্দীনের ছেলে শেফায়েত এবং মৃত নুরুল হকের ছেলে নাছির উদ্দীনের মালিকানাধীন ৪টি পানের বরজ পুড়ে গিয়ে প্রায় ৬ লাখ টাকার ক্ষতি সাধিত হয়।
ভুক্তভোগী নাছির উদ্দীন ও শেফায়েত জানান, পাহাড়ের পাদদেশে নতুন পানবরজ করতে বিট কর্মকর্তাকে ২০ হাজার টাকা এবং পুরাতন বরজ থেকে ১০ হাজার টাকা করে ঘুষ দিতে হয়। অন্যথায় পাহাড়ি জমি সরকারের বলে পান বরজ ভেঙে দেয়। বাধ্য হয়ে অনেকেই বিট কর্মকর্তাকে টাকা দিয়েছেন। তারা আরও জানান, তাদের কাছেও টাকা দাবি করেছিল বনবিট কর্মকর্তা নুরে আলম নাহিদ। সেই টাকা না পেয়ে পানের বরজে আগুন লাগিয়ে দেয়।
অপর ভুক্তভোগী বদিউল আলম ও নুরুল ইসলাম জানান, পানের বরজ পুড়িয়ে দেয়ার বিষয়ে এলাকাবাসী মানববন্ধন করার কারণে বনবিট কর্মকর্তা ক্ষিপ্ত হয়ে বনপ্রহরীদের দিয়ে ঘটনাস্থলে গোলাগুলি করে এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। এখন এলাকার লোকজন চরম ভয়ের মধ্যে আছে। তারা আরও বলেন, ‘স্থানীয়দের ভয় দেখাতে বনবিট কর্মকর্তা নুরে আলম নাহিদ স্থানীয় মৃত সোলতান আহমদের ছেলে জামাল হোসেন, এখলাছুর রহমানের স্ত্রী হানিফা খাতুন এবং বশির আলমের কন্যা হাদিছা বেগমের ঘর ভাঙচুর করে। এলাকাবাসী জানান, বন বিভাগের অত্যচার থেকে বাঁচতে আমরা ইতোমধ্যে সংসদ সদস্য, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, মহেশখালী বন কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালী। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর দ্বীপটির পরিবেশ রক্ষার চেয়ে বিপর্যয় ঘটাতে ভূমিকা রাখছে বন বিভাগের লোকজন। বনায়নের নামে গাছ কাটা, পাহাড় ও গাছ খেকোদের সঙ্গে আঁতাত করে পাহাড় কাটা ও গাছ কাটায় পরোক্ষ ভূমিকা রাখছে দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের নাকের ডগায় প্রতিদিন রাতে পাহাড় কেটে মাটি ও গাছ পরিবহন করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কোনো পদেক্ষপ গ্রহণ করে না বন বিভাগের কর্মকর্তারা। পরিবেশ রক্ষায় বন বিভাগের কেন এই উদাসীনতা সেই বিষয়ে জানতে চাইলে বন বিভাগের কেউই মুখ খুলতে রাজি হয়নি।
পাহাড়ে আগুন লাগানোর বিষয়টি অস্বীকার করে শাপলাপুর বনবিট কর্মকর্তা নুরে আলম নাহিদ বলেন, এটি আমার বিরুদ্ধে কিছু মানুষ ষড়যন্ত্র করছে। আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে তা আমরা অনুসন্ধান করছি।”
চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবদুর রহমান পাহাড়ে আগুন দেয়ার ঘটনাটি শুনেছেন জানিয়ে বলেন, বন কর্মকর্তাদের ভুলে কৃষকদের পান বরজ পুড়েছে। মূলত বনায়নের জন্যই বন পরিষ্কারের কাজ করেছে বন বিভাগের লোকজন। বনে আগুন লাগিয়ে বন পরিষ্কার কোন আইনে করা হয়েছে সেই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘আগুন লাগানোর কোনো আইন নাই। তবুও আগুন দিয়ে বন পরিষ্কারের নিয়মটি দীর্ঘদিন থেকে চলে আসছে।’