নিজস্ব প্রতিবেদক: দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ায় ১৯ প্রার্থীকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ আখ্যা দিয়ে আজীবন বহিষ্কার করেছে বিএনপি। এর মধ্যে আছেন মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপনও। বাকি ১৮ জনের মধ্যে ১৫ জন কাউন্সিলর প্রার্থী এবং তিনজন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী।
বিএনপি বলেছে, এ নির্বাচনে অংশ নেয়ায় তাদের নাম ‘বেইমান, বিশ্বাসঘাতক ও মীরজাফর’ হিসেবে উচ্চারিত হবে। গতকাল রোববার বরিশাল মহানগর বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা মো. জাহিদুর রহমান রিপন দলের এ সিদ্ধান্তের তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত আজীবন বহিষ্কার আদেশের চিঠি প্রত্যেক প্রার্থীর কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।’
রুপন ২০১৩ সালের ভোটে নির্বাচিত বিএনপির সমর্থনে নির্বাচিত হয়ে মেয়র পদে বসা প্রয়াত আহসান হাবীব কামালের ছেলে। কামাল ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাননি। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে বিএনপি ভোটে না যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার পর রুপন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে টেবিল ঘড়ি প্রতীকে লড়ছেন। তিনি ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য। তবে বিএনপিতে তার কোনো পদ নেই।
গত ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়ে জামানত হারানো সরকার শাহনুর ইসলাম রনিরও বিএনপিতে কোনো পদ ছিল না। তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের ভাতিজা। বিএনপির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ভোটে অংশ নেয়ায় গাজীপুরে কাউন্সিলর পদের ২৯ জনকে বহিষ্কার করলেও রনিকে কিছুই বলেনি বিএনপি।
পদে না থাকার পরও বহিষ্কারের প্রতিক্রিয়ায় রুপন বলেন, ‘বিএনপি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ তবে ভোটে লড়াই করে যাওয়ার প্রত্যয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, এটা আমি প্রথম থেকেই বলে আসছি। নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে জেনেছি অনেক মানুষই ভোট দিতে যাবে না। যারা যাবে তারা নৌকার বিপক্ষে ভোট দিয়ে তাদের জনপ্রিয়তা যে তলানিতে সেটা প্রমাণ করবে।’
দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ভোটে অংশ নেয়ায় গত ২ জুন রাতে ১৯ জনকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়। কিন্তু যে জবাব তারা দেন, তা বিএনপির কাছে ‘সন্তোষজনক’ মনে হয়নি।
বহিষ্কারের চিঠিতে যা বলা আছেÑ
১৯ প্রার্থীকে দেয়া রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, “আগামী ১২ জুনের বরিশাল সিটির ‘প্রহসনের নির্বাচনে’ আপনি প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করার কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব সন্তোষজনক নয়।”
এই নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত গত ১৫ বছর ধরে ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলনে’ ‘গুম, খুন ও সরকারি পৈশাচিক নিপীড়নের শিকার হয়েছে’ এমন পরিবারসহ ‘গণতন্ত্রকামী জনগোষ্ঠীর’ আকাক্সক্ষার প্রতি ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ বলেও উল্লেখ করেছে বিএনপি।
‘গণতন্ত্র উদ্ধারের ইতিহাসে আপনার নাম একজন বেইমান, বিশ্বাসঘাতক ও মীরজাফর হিসেবে উচ্চারিত হবে’Ñএমন কথাও লেখা হয় চিঠিতে।
রুপন ছাড়া যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে তারা হলেনÑ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সৈয়দ হাবিবুর রহমান ফারুক (রেডিও), ৬ নম্বর ওয়ার্ডের হাবিবুর রহমান টিপু (লাটিম), ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মো. হারুন অর রশিদ (ঘুড়ি), সৈয়দ হুমায়ন কবির লিংকু (রেডিও), সেলিম হাওলাদার (ঘুড়ি); ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সিদ্দিকুর রহমান, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের জিয়াউল হক মাসুম (ঘুড়ি), জাবের আব্দুল্লাহ সাদি (টিফিন ক্যারিয়ার), কাজী মোহাম্মদ শাহীন ও মনিরুল ইসলাম (রেডিও); ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের শাহ আমিনুল ইসলাম আমিন (ঘুড়ি), ২২ নম্বর ওয়ার্ডের জেসমিন সামাদ (লাটিম), ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ফিরোজ আহম্মেদ (টিফিন ক্যারিয়ার), ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের ফরিদউদ্দিন হাওলাদার (ঘুড়ি), ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের হুমায়ন কবির (লাটিম)।
এদের মধ্যে কেউ কেউ বিএনপির বিভিন্ন কমিটির, কেউ কেউ সহযোগী সংগঠনের কমিটির নেতা ছিলেন। কয়েকজন ছিলেন কমিটির সদস্য।
সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের প্রার্থী হয়ে বহিষ্কৃত হয়েছেন ২ নম্বর ওয়ার্ডের জাহানারা বেগম (গ্লাস), ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সেলিনা বেগম (আনারস) ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডের রাশিদা পারভীন (আনারস)।