নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (বরি) মহাপরিচালক (ডিজি) সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দরের বিরুদ্ধে নারী কর্মীকে মানসিক নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে। গত ২ এপ্রিল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর এ-সংক্রান্ত একটি অভিযোগ জমা হয়। বরির বায়োলজিক্যাল ওশানোগ্রাফিক বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বিপাসা সুর অভিযোগটি করেছেন।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘২০২২ সালের ২৯ আগস্ট তিনি বরিতে যোগ দেন। গত ১৬ মার্চ তার সঙ্গে একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে। সকাল ৯টায় ডিজির কক্ষে তাকে ডাকা হয়। সেখানে যাওয়ার পর ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। ভেতরে ডিজি সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর, সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার সাঈদ মুহাম্মদ শরীফ, আবু শরীফ মো. মাহবুব-ই কিবরিয়া, তরিকুল ইসলাম ও সহকারী পরিচালক রনি আব্বাস হাওলাদার ছিলেন। এছাড়া অপরিচিত আরও দুজন ছিলেন। তবে কোনো নারী অফিসার ছিলেন না। সেখানে তাকে মানসিকভাবে হেনস্তা করা হয়। ডিজির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়, যার সঙ্গে বিপাসা সুরের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে ডিজির সন্দেহ। সেই সন্দেহ থেকেই তাকে বিভিন্নভাবে প্রায় তিন ঘণ্টা মানসিক নির্যাতন করা হয়। সাদা কাগজে সই নেয়া হয়। একপর্যায়ে তরিকুল ইসলাম তার সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। বিনা অনুমতিতে ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন এবং পাসওয়ার্ড দিতেও বাধ্য করেন। ভারতীয় সংস্থার এজেন্ট আখ্যায়িত করে চাকরিচ্যুতির হুমকি দেন। সাদা কাগজটির সঙ্গে আরও অনেকগুলো কাগজে সই দিতে বলেন। সই না দেয়ায় বিভাগীয় প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবুল কাশেমের সঙ্গে আমার অবৈধ সম্পর্কের বদনাম দেন। একপর্যায়ে ডিজির লাইসেন্স করা অস্ত্র দেখিয়ে বলেন, এখানে তিনটি বুলেট আছে। একটা তোমার জন্য এবং দুটা আমি নিজের জন্য ব্যবহার করব। গবেষণা কেন্দ্রে দুটি কবর খোঁড়া হয়েছে বলেও হুমকি দেয়া হয়। পরে আমি ভয়ে ওইসব কাগজে সই করি।’
বিপাসা সুর এ ঘটনায় ডিজি ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান। অভিযোগের বিষয়ে ডিজি সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দরের কাছে জানতে চেয়ে মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসানের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনিও রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, নিয়োগ জালিয়াতি, টাকার বিনিময়ে নিয়োগ, নারী সহকর্মীদের সঙ্গে অশোভন আচরণসহ নানা অভিযোগ ওঠে ডিজির বিরুদ্ধে। এসব বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক) একাধিক অভিযোগ জমা পড়ে। গত ২২ জানুয়ারি ডা. একিউএম জিসানুর রহমান ও ৭ মার্চ বরির তিন কর্মকর্তা পৃথকভাবে এসব অভিযোগ দাখিল করেন। দুদকে দাখিল হওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে বরিতে মেডিকেল অফিসার পদে আবেদন করেন চিকিৎসক মো. ওয়াহেদুজ্জামান। প্রবেশপত্রে তার রোল নম্বর ছিল ৮০১। পরে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে নিয়োগ পেয়ে একটি উপজেলা হাসপাতালে যোগ দেন তিনি। এজন্য নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেননি। পরীক্ষা না দিয়েও তিন বছর পর ওই নিয়োগ পরীক্ষার ফলে নিজের রোল নম্বর দেখে বিস্মিত হন তিনি। কৌতূহল থেকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তিনি নাকি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার আবেদনই করেননি! ৮০১ রোল নম্বরে একজন নারী চিকিৎসক পরীক্ষায় বসে চাকরিও পেয়েছেন। ওয়াহেদুজ্জামান অনুপস্থিত থাকায় কৌশলে রাতারাতি ৮০১ রোলের ওই নারী চিকিৎসককে ব্যবহার করার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এতে আবেদন করা, পরীক্ষা দেয়ার জন্য দুই বছর অপেক্ষা করা, এমনকি লিখিত পরীক্ষা দেয়ারও প্রয়োজন পড়েনি তার।