প্রতিনিধি, রাজশাহী: রাজশাহীর বরেন্দ্রাঞ্চলে এখন পাটের মৌসুম চলছে। এবারের মৌসুমে চাষিরা পাটের ভালো দাম পেয়ে অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত। বরেন্দ্র অঞ্চলের উর্বর মাটিতে চাষ করা এই পাট স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং চাষিরা তাদের ফসল থেকে ভালো আয় প্রত্যাশা করছেন। ভরা মৌসুমে এ অঞ্চলে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে প্রায় তিন হাজার টাকা দরে। এতে বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রান্তিক চাষিরা বেশ খুশি হয়েছেন।
জেলার কয়েকটি উপজেলার পাট বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, মানভেদে প্রতি মণ পাট দুই হাজার ৩০০ থেকে তিন হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে মাঠে পাট কাটা, জাগ দেয়া, আঁশ ছাড়ানো এবং শুকানোর কাজে চাষি ও শ্রমিকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর রাজশাহীতে ১৭ হাজার ৮৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় দুই হাজার ৫১৫ হেক্টর কম। গত বছর চাষ হয়েছিল ১৯ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। তবে গত বছরের চেয়ে এ বছর পাট চাষের পরিমাণ কমার পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে রয়েছে পানির অভাব। চাষিরা গত বছর পাট জাগ দেয়ার সময় ভোগান্তিতে পড়েছিলেন, যার কারণে এ বছর চাষ কিছুটা কমেছে।
পাট ব্যবসায়ীরা বলছেন, হাটে ভোর থেকেই পাটের বাজার জমে উঠছে। তবে সাপ্তাহিক হাটবারগুলোয় বেচাকেনা বেশি হচ্ছে। একবার পাট হাটে আসার পর এটি কয়েক হাত পেরিয়ে পাট প্রক্রিয়াকরণ কারখানাগুলোয় পৌঁছে যাচ্ছে। এ বছর পাটের চাহিদা বেশি থাকায় পাটের দামও ভালো রয়েছে।
পাট ব্যবসায়ী আনারুল ইসলাম বলেন, এবারের মৌসুমে পাটের দাম বেশ ভালো। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর পাটের চাহিদা অনেক বেশি। তবে স্থানীয়ভাবে পাটকলগুলোর চাহিদা হাটের পাট দিয়েও পুরোপুরি পূরণ হচ্ছে না। মোকামেও পাটের চাহিদা ভালো, তাই আশা করছি দাম আরও বাড়বে।”
পবার পাটচাষি উজ্জ্বল হোসেন বলেন, পাটের বীজ বপনের সময়ে বৃষ্টিপাতের অভাব ছিল, ফলে অনেকের পাটের জীবন নষ্ট হয়ে গেছে। তবুও আমি দেড় বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। দুই সপ্তাহ আগেও পাট জাগ দেয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল। তবে বৃষ্টির কারণে এখন খালবিলে পানি এসেছে, ফলে জাগ দেয়ার সময় আর পানির অভাব হচ্ছে না।
গোদাগাড়ী উপজেলার চর আসাড়িয়াদহ এলাকার কৃষক মোজাম্মেল হোসেন জানান, এ বছর তারা পাটের ভালো দাম পাচ্ছেন, যা তাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। অনেক বছর ধরে তারা কষ্ট করে পাট চাষ করে এলেও সঠিক মূল্য না পাওয়ায় হতাশ হয়েছিলেন। তবে এবার বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় তাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। এতে তাদের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থাও উন্নতি হবে, যা ভবিষ্যতে আরও পাট চাষে উৎসাহ জোগাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
বাঘা উপজেলার আরেক চাষি আমিরুল ইসলাম বলেন, এবার পাটের দাম বেশি হলেও উৎপাদন খরচও বেড়েছে। জমিতে পানি থাকার কারণে পাট কাটার জন্য শ্রমিকদের মজুরি বেশি দিতে হচ্ছে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছুতেই খরচ বেড়েছে। তবে দাম ভালো থাকায় লাভের আশা করছি।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, এবার পাটের উৎপাদন ভালো হয়েছে, আর দামও ভালো পাচ্ছেন চাষিরা। চাষিরা এ বছরও লাভবান হবেন বলে আমরা আশা করছি। তবে চাষিরা যদি আরও আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করেন, তাহলে ভবিষ্যতে উৎপাদন ও লাভ দুটোই বাড়বে।
