বহুজাতিক কোম্পানিতে সূচকের বড় উত্থান

মো. আসাদুজ্জামান নূর: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল মূল্য সূচকের বড় উত্থানে লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে। সূচকে যোগ হয়েছে ৯৭ পয়েন্ট। এর মধ্য দিয়ে টানা চার কর্মদিবস বাড়ল সূচক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে ধস ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার দুটি পদক্ষেপের কারণেই ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে বাজার।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার প্রতিক্রিয়ায় আট কর্মদিবসে ৩৮৩ পয়েন্ট সূচক পতন হয়। এরপরেই পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল থেকে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের নির্দেশ এবং এক দিনে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ নির্ধারণের আদেশ দেয়ার পর চার দিনে সূচকে যোগ হলো ৩০৯ পয়েন্ট।

তবে সূচক হারানো অবস্থান ফিরে পেলেও লেনদেনে সেভাবে গতি আসেনি এখনও। বরং গত বৃহস্পতিবার লেনদেন এক হাজার কোটি টাকার ঘর ছাড়ালেও রোববার তা আবার নেমে এসেছে হাজার কোটির নিচে। ৯ কর্মদিবস পর বৃহস্পতিবার লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে হয়েছিল এক হাজার ৬১ কোটি ২০ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। পরের কর্মদিবসে সেটি কমে হয়েছে ৯৯৮ কোটি ৭৩ লাখ ৬৯ হাজার টাকা।

লেনদেন সবচেয়ে বেশি হয়েছে বস্ত্র খাতে। ১৫.৪ শতাংশ লেনদেন হয়েছে খাতটিতে। এরপরেই রয়েছে যথাক্রমে প্রকৌশল ১৩.৪ শতাংশ, ফার্মা ১৩.১ শতাংশ, বিবিধ ১০.৭ শতাংশ, আইটি ৯.২ শতাংশ, খাদ্য ৬.৩ শতাংশ ও ব্যাংক খাতে ৫.৭ শতাংশ লেনদেন হয়েছে।

অথচ দরপতন ঠেকাতে বিএসইসি এই দুটি সিদ্ধান্তের সঙ্গে তারল্য বাড়াতেও ব্যাংক ও সম্পদ ব্যবস্থাপকদের সঙ্গেও বৈঠকে বসেছিল। দুই পক্ষই বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে একমত হয়। বুধবার প্রথম বৈঠক শেষে ঘোষণা ছিল, যেসব ব্যাংকের বিনিয়োগ তাদের মূলধনের ২৫ শতাংশের নিচে, সেগুলো দ্রুত ২ শতাংশ বিনিয়োগ বাড়াবে। যেসব কোম্পানি বিশেষ তহবিলে এখনও ২০০ কোটি টাকা জমা দেয়নি, সেগুলো দ্রুত জমা দেবে আর যেসব ব্যাংক টাকা জমা দিয়েও বিনিয়োগে যায়নি, তারা দ্রুত বিনিয়োগে যাবে।

পরের দিন মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর সঙ্গে বৈঠক শেষে জানানো হয়, মৌলভিত্তির অনেক কোম্পানির শেয়ারদর অনেকটাই কমে এসেছে। এই মুহূর্তে সেগুলোয় বিনিয়োগ লাভজনক হতে পারে। বিনিয়োগ বাড়ানোর ঘোষণা আসে এই বৈঠক শেষেও।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটা বড় ধাক্কা সামলে বাজার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। পতন ঠেকাতে বিএসইসির পদক্ষেপগুলো কাজে দিচ্ছে। বাজার এখন আস্তে আস্তে ভালোর দিকে যাবে। গত কয়েক দিনের লেনদেনে তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

গতকাল সকাল থেকেই লেনদেন হয় সূচক বেড়ে। ৯ পয়েন্ট বেড়ে শুরু হওয়া লেনদেন বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে আরও বেশি। লেনদেন শেষের কিছুক্ষণ আগে তা বেশি ছিল ১১১ পয়েন্ট। তবে শেষ সময়ের সমন্বয়ে ৯৭ পয়েন্ট বেড়ে শেষ হয় লেনদেন। ডিএসইএক্স অবস্থান করছে ছয় হাজার ৭৬৫ পয়েন্টে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস ১৭ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৪৫৩ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ৩৮ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে দুই হাজার ৪৬৩ পয়েন্টে।

সূচকের প্রায় এক তৃতীয়াংশই বাড়িয়েছে বহুজাতিক চারটি কোম্পানি। এগুলো হলোÑগ্রামীণফোন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, লাফার্জহোলসিম সিমেন্ট ও রবি। এ ছাড়া স্কয়ার ফার্মা, বেক্সিমকো লিমিটেড, পাওয়ারগ্রিড, বেক্সিমকো ফার্মা, সামিট পাওয়ার এবং সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে। সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচকে যোগ করেছে ৪৭.৮৪ পয়েন্ট। এর মধ্যে বহুজাতিক চার কোম্পানির ভূমিকাই ৩২.৫৮ পয়েন্ট।

এদিন লেনদেন হওয়া সিকিউরিটিজের মধ্যে দর বেড়েছে ২৭৩টি কোম্পানির, কমেছে ৮৭টির আর অপরিবর্তিত ছিল ২০টির দর। আর্থিক খাতের কোনো কোম্পানির শেয়ারের দর কমেনি। দুটি কোম্পানির দর ছিল অপরিবর্তিত, বেড়েছে বাকি সবগুলোর। বস্ত্র খাতে কমেছে ৫টি কোম্পানির দর, অপরিবর্তিত ছিল আরও ৫টির, বেড়েছে বাকি ৪৮টির দর। ওষুধ ও রসায়ন, জ্বালানি, মিউচুয়াল ফান্ড, ব্যাংক, প্রকৌশল, বিবিধ ও সিরামিক খাতের বেশিরভাগ কোম্পানির বিনিয়োগকারীরাই হাসিমুখে শেষ করেছেন লেনদেন।