Print Date & Time : 18 August 2025 Monday 4:01 pm

বহুমুখী সুবিধা নিয়ে চালু হচ্ছে ভিন্ন অপারেটরের সঙ্গে লেনদেন

শেখ আবু তালেব: মোবাইল ব্যাংকিংয়ে আন্তঃঅপারেটর অর্থাৎ এক অপারেটর (বিকাশ, নগদ, রকেট, এমক্যাশ, শিওরক্যাশ) থেকে ভিন্ন অপারেটরের সঙ্গে লেনদেন চালু হচ্ছে আগামী জুন নাগাদ। বর্তমানে শুধু লেনদেনে সীমাবদ্ধ থাকলেও এতে যুক্ত হচ্ছে ই-কমার্স লেনদেনসহ বহুমুখী ফিচার। আইসিটি মন্ত্রণালয়ও কাজ করছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সুবিধা বাড়াতে।

পাইলট প্রকল্প হিসেবে ১২টি ব্যাংক নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরীক্ষামূলক কার্যক্রমে সফলতা এলে সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে এমন তথ্য।

বর্তমানে মোবাইলের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন (মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস-এমএফএস) কার্যক্রম মোবাইল ব্যাংকিং নামে পরিচিত। পেমেন্ট সিস্টেমের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক হওয়ায় মোবাইল ব্যাংকিং সেবাটি যেকোনো বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। বর্তমানে দেশে ১৫টি ব্যাংক এমএফএস সেবা পরিচালনা করছে। কিন্তু ব্র্যাক ব্যাংকের বিকাশ, ডাচ্-বাংলার রকেট হচ্ছে এমএফএস বাজারের প্রায় পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করে।

জানা গেছে, বর্তমানে এক অপারেটরের গ্রাহক ভিন্ন অপারেটরের সঙ্গে অর্থ লেনদেন করতে পারে না। এতে গ্রাহকদের একাধিক হিসাব পরিচালনা করতে হচ্ছে। এমএফএস সেবাটি জনপ্রিয় হওয়ায় আন্তঃঅপারেটর লেনদেন করতে উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত প্রস্তুতিও নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সর্বশেষ গত ২৭ অক্টোবর সেবাটি চালু করারও ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা ও কমিশন ইস্যুতে সেবাটি চালু করতে পারেনি।

পরবর্তী সময়ে সেবাটির সঙ্গে আরও কিছু ফিচার যোগ করার প্রস্তাব দেয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (আইসিটি)। মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী, এমএফএস সেবার আওতায় ই-কমার্স সুবিধাটি যোগ হচ্ছে। ফলে ই-কমার্সের লেনদেনেও এমএফএস সেবা ব্যবহার করা যাবে।

বর্তমানে এমএফএসের মাধ্যমে ব্যক্তি থেকে মার্চেন্ট পেমেন্ট, ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি পেমেন্ট, অর্থ স্থানান্তর করা যায়। নতুন ফিচারে থাকছে ‘রিকুয়েস্ট টু-পে’ অর্থাৎ কোনো কেনাকাটার পর মার্চেন্ট হিসাবধারীর মোবাইল থেকে গ্রাহকের মোবাইলে এসএমএস যাবে অর্থ পরিশোধের জন্য। বকেয়া বিল পরিশোধ, বিল পরিশোধ করতে মনে করিয়ে দেয়াসহ বিভিন্ন ফিচার সংযোজন করা হচ্ছে। এছাড়া মোবাইল হিসাব থেকে ব্যাংকে থাকা হিসাবেও অর্থ স্থানান্তর করা যাবে। এজন্য একটি কমিশন চার্জও নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

জানা গেছে, মূলত ছোট অঙ্কের অর্থ পরিশোধে ব্যাংকের বিকল্প হিসেবে দাঁড় করানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ই-কমার্সকে উৎসাহিত ও লেনদেন সহজ করতে ভবিষ্যতে আরও ফিচার সংযোজনের সুযোগ রাখা হচ্ছে। এজন্য আইসিটি বিভাগের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নতুন ফিচার সংযোজন করে পরীক্ষামূলকভাবে পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে যুক্ত করা হয়েছে ১২টি ব্যাংক। এই ব্যাংকের কর্মকর্তারা ভিন্ন অপারেটরে অর্থ লেনদেন করে দেখছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এমএফএস সেবার পরিধি বাড়ানো হচ্ছে। আইসিটি বিভাগের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করা হচ্ছে, যাতে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম আরও উপকৃত হবে। এজন্য একটু সময় লাগছে। পাইলট প্রকল্প হিসেবে কিছু ব্যাংকের এমএফএস সেবায় আন্তঃঅপারেটর লেনদেন করা হচ্ছে। সফল হলে আনুষ্ঠানিকভাবে উম্মুক্ত করা হবে।’

জানা গেছে, চলতি বছরের জুন নাগাদ এ সেবাটি আনুষ্ঠানিকভাবে আসছে। সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচে যোগ করা হচ্ছে বিশেষ কিছু সফটওয়্যার। করোনা মহামারিতে কিছু সফটওয়্যার আমদানি করতে বিলম্ব হচ্ছে। লেনদেন পদ্ধতি নিরাপদ করতে সব রকম ঝুঁকি সাইবার হামলা, হ্যাকিং ইত্যাদি যাচাই ও তা প্রতিরোধের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নগদ অর্থের লেনদেন কমিয়ে আনতে ভূমিকা রাখবে নতুন উদ্যোগগুলো। আবার করোনাকালে মানুষ অনলাইন কেনাকাটা, বিল পরিশোধ ইত্যাদিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। এতে সময় বেঁচে যাচ্ছে। সামাজিক দূরত্বও রক্ষা হচ্ছে। সবচেয়ে সুবিধা হচ্ছে দ্রুত লেনদেন সম্পন্ন করা যাচ্ছে। এজন্য এমএফএস সেবার চাহিদাও বাড়ছে দিন দিন। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, জানুয়ারি শেষে এমএফএস তথা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি পাঁচ লাখ ৫৩ হাজার ৮৩১ জন। সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা হচ্ছে তিন কোটি ২৪ লাখ।

গত জানুয়ারিতেই ৫৭ হাজার ২৮৯ কোটি ১০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। এ পরিমাণ লেনদেনের মধ্যে রয়েছে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি, ব্যক্তি থেকে মার্চেন্ট, বিল পরিশোধ, মোবাইলে রিচার্জ, সরকারি ভাতা প্রদান, ক্যাশ ইন ও আউট এবং বেতন প্রদান করা হয়েছে।

জানা গেছে, দেশে এমএফএস সেবা চালু হয় ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের হাত ধরে ২০১১ সালের মার্চে। বর্তমানে তাদের এ সেবাটির নাম ‘রকেট’। তিন কোটির ওপর গ্রাহক রয়েছে তাদের। এরপরে এ ২০১৯ সালে সেবায় নাম লেখায় ব্র্যাক ব্যাংকের বিকাশ। বর্তমানে বাজার নিয়ন্ত্রণকারী এ প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকসংখ্যা পাঁচ কোটি ২০ লাখ। কিন্তু সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা হচ্ছে প্রায় পৌনে দুই কোটির মতো। সম্প্রতি মোবাইলের মাধ্যমে অর্থ সেবা দিচ্ছে ডাক বিভাগের নগদ। কিন্তু এমএফএস নীতিমালা অনুযায়ী এখনও অনুমোদন পায়নি বাংলাদেশ ব্যাংকের। সাময়িক অনুমোদন নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছে।

বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী, এমএফএস সেবা দিতে হবে বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংক নিজে বা সাবসিডিয়ারি কোম্পানির মাধ্যমে যৌথভাবেও এটি পরিচালিত করতে পারবে। সেক্ষেত্রে ন্যূনতম ৫১ শতাংশের মালিকানা ব্যাংকের হাতেই থাকবে। কিন্তু নগদ হচ্ছে ডাক-বিভাগের প্রতিষ্ঠান। সেক্ষেত্রে বিদ্যমান নীতিমালায় পরিবর্তনের কথা ভাবছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে ১৫টি ব্যাংকের এমএফএস সেবা রয়েছে।