Print Date & Time : 7 July 2025 Monday 9:42 pm

বাংলাদেশি দুই জাহাজ উদ্ধারে উদ্যোগ নিন

পৃথিবীর দুই প্রান্তে প্রায় দুই মাস ধরে আটকে আছে বাংলাদেশি পতাকাবাহী দুটি সমুদ্রগামী জাহাজ। এতে তীব্র খাদ্য ও পানি সংকটে মানবেতর জীবনযাপন করছেন জাহাজ দুটির ৫০ বাংলাদেশি নাবিক। বাল্টিক সাগরে রাশিয়ার উসলুগা বন্দরের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে গত ২৯ ডিসেম্বর থেকে আটকে রয়েছে জাহাজ মেঘনা প্রিন্সেস। উসলুগা বন্দরে গেলে সেখানে জিপিএস জ্যামারের কবলে পড়ে পথ হারিয়ে সমুদ্রতলে থাকা পাথরের পাহাড়ের সঙ্গে ধাক্কা লেগে তলা ফেটে যায় জাহাজটির। এতে জাহাজের কয়েকটি ট্যাংকে পানি ঢুকে পড়ে ও প্রপেলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে মেঘনা প্রেস্টিজ জাহাজটি আইনি জটিলতায় গত ২৯ জানুয়ারি থেকে আটকে পড়েছে ভেনিজুয়েলায় পুয়ের্তো ওরদাজ বন্দরে। দুই জাহাজের নাবিকরাই সুপেয় পানি ও খাদ্য সংকটে ভুগছেন। দীর্ঘদিন ধরে স্থির জাহাজে আটকে থাকায় একদিকে যেমন নাবিকদের মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে, অন্যদিকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে নাবিকদের স্বজনদের।

বিএমএমওএ, আন্তর্জাতিক পরিবহন শ্রমিকদের সংস্থা আইটিএফ ও মেঘনা গ্রুপের কয়েক মাসের চেষ্টা ও তদবিরের পর গত সপ্তাহে একটি রুশ স্যালভেজ কোম্পানি জাহাজটি উদ্ধারের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।

এর আগে বাংলাদেশি একাধিক জাহাজ মুক্তিপণ দিয়ে উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনাগুলোয় দস্যুরা মুক্তিপণ দাবি করার জন্য এক থেকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত সময় নিয়েছে। এ সময় তারা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে। মুক্তিপণ দাবি করার জন্য আসল অঙ্ক যা ঠিক হবে, তার চেয়ে বেশি দাবি করে থাকে দস্যুরা। দরকষাকষি কিংবা আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছাতে হয়। সাধারণত এক বন্দর থেকে আরেক বন্দরে যেতে যত দিন সময় লাগে, তার চেয়ে এক থেকে দুই সপ্তাহের বেশি সময়ের খাবার মজুত রাখা হয় জাহাজে। তবে কোনো কারণে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেরি হতে পারে, এমন আশঙ্কায় শুকনা খাবার বেশি দিনের জন্য মজুত রাখা হয়। এ ছাড়া জাহাজে রান্না, গোসল ও পান করার জন্য বিশুদ্ধ পানি মজুত রাখা হয়। জাহাজভেদে দিনে তিন থেকে পাঁচ টন পানি লাগে। ধারণা করছি, আটক জাহাজগুলোর নাবিক ও ক্রুরা নিরাপদে আছেন। তবু দেশে তাদের স্বজনরা দুশ্চিন্তায় আছেন। সরকারের উচিত, এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া। অন্যান্য দেশ জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

সারা বিশ্বে কোন জাহাজ কোথায় কোন রুটে চলছে, তা মোবাইল ফোনের অ্যাপের মাধ্যমেও দেখা যায়। সব জাহাজের অবস্থান দেখা যায়। কোনো জাহাজ সমস্যায় পড়লে আন্তর্জাতিক নির্দিষ্ট চ্যানেলের মাধ্যমে জানানোর ব্যবস্থাও আছে। সহায়তা চাইলে আশপাশ থেকে নিরাপত্তা বাহিনী ছুটে আসে। কিন্তু জাহাজগুলোর মালিকদের তৎপরতাও তেমন ছিল না। অথচ নিকট অতীতে আমাদের যে দুটি জাহাজ উদ্ধার করা হয়েছে, দুটোই একই মালিকের। তারা মুক্তিপণ দিয়েই জাহাজ ও কর্মীদের মুক্ত করেছেন। আমাদের সমুদ্রসীমায় কোনো বিদেশি জাহাজ আটকে পড়লে আমাদের পক্ষ থেকে যত সহায়তা করা দরকার, সেটি আমরা করতাম। সে ধরনের সহায়তা চেয়ে রাষ্ট্র বিষয়টির সুরাহা করবে বলেই প্রত্যাশা।