ড. মোহাম্মাদ গোলাম মোস্তফা: পৃথিবীতে মুদ্রার ধারণা আসার আগে প্রচলন ছিল বিনিময় প্রথার। প্রায় ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে চীনের ঝাউ রাজবংশের শাসনামলে ব্রোঞ্জের তৈরি মুদ্রার প্রচলন হয়। বিনিময় প্রথার সূত্র ধরে বর্তমান সুপার আধুনিক যুগে সেই বিনিময় প্রথার কারণে মুদ্রার অবমূল্যায়ন বা অতিমূল্যায়ন অব্যাহত আছে। বাংলাদেশের বিনিময়ের মাধ্যম হলো টাকা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর পাকিস্তানের রুপির পরিবর্তে দেশটির মুদ্রা হিসেবে ‘টাকা’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ভাষাবিদগণের মতানুসারে বাংলা ‘টাকা’ শব্দটি সংস্কৃত ‘টস্ক’ শব্দ থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যার অর্থ রৌপ্যমুদ্রা। ১৪ শতাব্দীতে ইবনে বতুতা লক্ষ করেছিলেন বাংলা সালতানাতের লোকজন, সোনা ও রুপার ধাতবকে দিনার বা টাকা বলত। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা ডলারের বিপরীতে টাকার মান ধরে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ। আর্থিক মন্দা, যুদ্ধবিগ্রহসহ বিভিন্ন কারণে বৈশ্বিক মুদ্রাবাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ভারসাম্য বড়ায় রাখার জন্য মুদ্রার অবমূল্যায়ন বা অতিমূল্যায়নের প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে টাকার অবমূল্যায়নের ধারা এবং এর প্রভাব সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরার চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ। বাংলাদেশে প্রথম কাগুজে নোট চালু করা হয়েছিল ১৯৭২ সালের ৪ মার্চ। ওই দিন প্রথম এক টাকা ও ১০০ টাকার নোট চালু করা হয়। তাত্ত্বিকভাবে কাগুজে নোটকে ‘নেগোশিয়েবল প্রমিজরি নোট’ বলা হয়। অর্থাৎ ‘চাহিবামাত্র ইহার বাহককে (পাঁচশত টাকা) দিতে বাধ্য থাকিবে’ কথাটা লেখা থাকে।
অবমূল্যায়ন কী?
মুদ্রার অবমূল্যায়ন হলো অন্যান্য মুদ্রার সঙ্গে একটি মুদ্রার মূল্য হ্রাস করা। এটি অন্য মুদ্রা, মুদ্রার গ্রুপ বা স্ট্যান্ডার্ডের সাপেক্ষে একটি দেশের মুদ্রার মূল্যের একটি ইচ্ছাকৃত নি¤œগামী সমন্বয়। সাধারণভাবে মুদ্রার মূল বৈদেশিক বিনিময়ের ক্ষেত্রে হ্রাস পেলে তাকে মুদ্রার অবমূল্যায়ন বলে।
অবমূল্যায়নের উদ্দেশ্য: মুদ্রা অবমূল্যায়নের বেশ কিছু উদ্দেশ্য রয়েছে। তা হলোÑ
ক. রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির চাপ কমানো; খ. কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি ইউনিফায়েড এক্সচেঞ্জ রেট প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য অর্জন করা; গ. অপ্রয়োজনীয় ও বিলাস পণ্যদ্রব্য আমদানিতে নিরুৎসাহিতকরণ; ঘ. বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ বৃদ্ধির লক্ষ্যে রপ্তানিকারকদের উৎসাহিত করতে; ঙ. বিদেশি মুদ্রার অবমূল্যায়নের বিরূপ প্রভাব থেকে দেশীয় বাণিজ্য রক্ষা করার উদ্দেশ্যে; চ. চোরাচালান ও অবৈধ বাণিজ্য রোধ করতে; ছ. বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে; জ. কর্মসংস্থান বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে; ঝ. বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য রক্ষা এবং বৈদেশিক লেনদেনের ক্রমাগত ঘাটতি মোকাবেলা করার জন্য; ঞ. আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় ক্ষেত্রে মুদ্রার মূল্যের মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করা; ট. মুদ্রার অবমূল্যায়ন কার্যক্রমটি মুদ্রার মানের ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয় করার জন্য; ঠ. ডলার ও টাকার ব্যবধান কমিয়ে বাজারে শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য টাকার অবমূল্যায়ন করা হয়।
বাংলাদেশে মুদ্রার অবমূল্যায়নের ইতিহাস
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখার জন্য ব্রেটন উডস ব্যবস্থা চালু হয়। এ ব্যবস্থায় মুদ্রার অবমূল্যায়ন করা যেত না, আর মুদ্রা ছিল সোনায় রূপান্তরযোগ্য। অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ডলারের অবমূল্যায়ন করলে ব্রেটন উডস ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে ডলারের সোনায় রূপান্তরযোগ্য বিধান সাময়িকভাবে স্থগিত করেন, পরবর্র্তীকালে ১৯৭৩ সালে তা চূড়ান্তভাবে বাতিল করা হয়। বাংলাদেশে মুদ্রার বিনিময় হার ঠিক করা হয় ১৯৭২ সালের ১ জানুয়ারি। পাকিস্তান আমলে মধ্যবর্তী মুদ্রা ছিল ব্রিটিশ পাউন্ড স্টার্লিং। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও তা বহাল ছিল। তখন ভারতের মুদ্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান রেখে এর হার নির্ধারণ করা হয়েছিল পাউন্ডপ্রতি ১৮ দশমিক ৯৬৭৭ টাকা। পাউন্ডের এই দর ছিল পাকিস্থান আমলের তুলনায় ৩৩ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ বাংলাদেশি মুদ্রার অবমূল্যায়ন ৩৩ শতাংশ। ১৯৭২ সালের ২৩ জানুয়ারি থেকে পাউন্ডের বিনিময় হার ডলারের সঙ্গে ভাসমান বা ফ্লোটিং করা হয়। তখন প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ৭ দশমিক ২৭০২৭ টাকা। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৪৮ শতাংশ, যার ফলে অর্থনৈতিক ভারসাম্য ঠিক রাখতে টাকার অবমূল্যায়নের প্রয়োজন হয়। ১৯৭৫ অর্থবছরে ১৭ মে বিশ্বব্যাংক দ্বারা ‘বাংলাদেশ এইড গ্রুপ’-এর প্রতিষ্ঠায় সম্মত হয়ে টাকার বিপরীতে পাউন্ডের মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হয় ৩০ টাকা, যা আগে ছিল ১৮ দশমিক ৯৬৭৭ টাকা। অর্থাৎ একবারেই অবমূল্যায়ন ঘটে ৩৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
টেবিল-১
মুদ্রা অবমূল্যায়নের প্রবৃদ্ধি
১৯৭১ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত
বছর
ডলারপ্রতি দাম (টাকা) অবমূল্যায়ন
(টাকা) শতাংশ
১৯৭১ ৭.৭৬ – –
১৯৭৫ ৮.০০ ০.২৪ ৩.০৯
১৯৮০ ১৭.৮৯ ৯.৮৯ ১২৩.৬৩
১৯৮৫ ২৫.৯৬ ৮.০৭ ৪৫.১১
১৯৯০ ৩২.০০ ৬.০৪ ২৩.২৭
১৯৯৫ ৪০.০০ ৮.০০ ২৫.০০
২০০০ ৫৪.০০ ১৪.০০ ৩৫.০০
২০০৫ ৬৯.৬৭ ১৫.৬৭ ২৯.০২
২০১০ ৭১.১৭ ১.৫০ ২.১৫
২০১৫ ৭৭.৮০ ৬.৬৩ ৯.৩২
মোট অবমূল্যায়ন ৭০.০৪ ২৯৫.৫৮
১৯৭১ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মোট ৪৪ বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয় ৭০ দশমিক ০৪ টাকা বা ২৯৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ অবমূল্যায়িত হয়েছে। অতএব, স্বাধীনতার পর গত ৪৪ বছরে এক ডলারের দাম ৭.৭৬ থেকে বেড়ে ৭৭ দশমিক ৮০ টাকা হয়েছে।
টেবিল-২
মুদ্রা অবমূল্যায়নের প্রবৃদ্ধি
২০১৫ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত
বছর
ডলারপ্রতি দাম (টাকা) অবমূল্যায়ন
(টাকা) শতাংশ
২০১৫ ৭৮.৭৮ – –
২০১৬ ৭৮.৮০ ০.০২ ০.০৩
২০১৭ ৮২.৫৫ ৩.৭৫ ৪.৭৬
২০১৮ ৮৩.৯০ ১.৩৫ ১.৬৪
২০১৯ ৮৪.৯০ ১.০০ ১.১৯
২০২০ ৮৪.৮০ -০.১০ -০.১২
২০২১ ৮৫.৮০ ১.০০ ১.১৮
মোট অবমূল্যায়ন ৭.০২ ৮.৬৭
২০১৫ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মোট সাত বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয় ৭ দশমিক ০২ টাকা বা ৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ অবমূল্যায়িত হয়েছে। অতএব, সাত বছরে এক ডলারের দাম ৭৮.৭৮ থেকে বেড়ে ৮৫ দশমিক ৮০ টাকা হয়েছে।
টেবিল-৩
মুদ্রা অবমূল্যায়নের প্রবৃদ্ধি
মার্চ-২০২২ থেকে জুলাই ২০২৩ পর্যন্ত
ক্রমিক
নং মাস
ডলারপ্রতি দাম (টাকা) অবমূল্যায়ন
(টাকা) শতাংশ
১. মার্চ-২২ ৮৬.১৬৩
২. এপ্রিল-২২ ৮৬.৩১২ ০.১৫ ০.১৭
৩. মে-২২ ৮৬.৬৬২১ ০.৩৫ ০.৪১
৪. জুন-২২ ৯২.০৩০ ৫.৩৭ ৬.১৯
৫. জুলাই-২২ ৯৩.৮৯০ ১.৮৬ ২.০২
৬. আগস্ট-২২ ৯৪.৯১০ ১.০২ ১.০৯
৭. সেপ্টেম্বর-২২ ৯৫.৬২০ ০.৭১ ০.৭৫
৮. অক্টোবর-২২ ৯৬.৬২০ ১.০০ ১.০৫
৯. নভেম্বর-২২ ৯৭.৬২০ ১.০০ ১.০৩
১০. ডিসেম্বর-২২ ৯৮.৮৫০ ১.২৩ ১.২৬
১১. জানুয়ারি-২৩ ৯৯.৮৯০ ১.০৪ ১.০৫
১২. ফেব্রুয়ারি-২৩ ১০০.৯৬০ ১.০৭ ১.০৭
১৩. মার্চ-২৩ ১০১.৯৬০ ১.০০ ০.৯৯
১৪. এপ্রিল-২৩ ১০২.৯২০ ০.৯৬ ০.৯৪
১৫. মে-২৩ ১০৪.৩৯০ ১.৪৭ ১.৪৩
১৬. জুন-২৩ ১০৮.০১০ ৩.৬২ ৩.৪৭
১৭. জুলাই-২৩ ১০৯.২৭৬ ০.৮৪ ০.৭৮
মোট অবমূল্যায়ন ২৩.১১ ২৪.০৯
২০২২ সালের মার্চ থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত মোট ১৭ মাসে মোট ২৩ দশমিক ১১ টাকা অবমূল্যায়ন হয়েছে বা ২৪ দশমিক ০৯ শতাংশ অবমূল্যায়িত হয়েছে।
২০০৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৮৩ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত মোট ৮৯ বার টাকার দর সমন্বয় করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৮৩ বারই অবমূল্যায়ন করা হয় এবং ৬ বার বাড়ানো হয় (সূত্র: প্রথম আলো, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২) আর যদি স্বাধীনতার পর থেকে ধরা হয়, তাহলে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ১ হাজার ৩৬৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
মুদ্রা অবমূল্যায়নের ফলাফল
মার্কিন ডলার প্রধানতম বৈশ্বিক মুদ্রা। ডলারের বিপরীতে টাকার দ্রুত অবমূল্যায়ন এবং আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটে বাংলাদেশকে খাদ্য, জ্বালানি, বিদ্যুৎ প্রভৃতিতে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ বাড়িয়ে ৪০ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা করতে হয়েছিল। মুদ্রা অবমূল্যায়নের ফলে বৈদেশিক মুদ্রার ঋণ স্থানীয় মুদ্রায় অধিক মাত্রায় বেড়ে যায়। কারণ বৈদেশিক ঋণ নেয়া হয় ডলারে এবং তা পরিশোধও করা হয় ডলারে। এক হিসাব অনুযায়ী গত দেড় বছরে শুধু ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে বৈদেশিক ঋণ বেড়েছে দুই লাখ সাত হাজার কোটি টাকা। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক অর্থনীতিতেই। এ বিষয়ে আইএমএফের এক গবেষণায় বলা হয়, একটি দেশের মুদ্রামানের ১০ শতাংশ অবমূল্যায়ন করা হলে দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
ডলারের মূল্য নির্ধারণ: বর্তমানে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণ করে থাকে। এতদিন বাংলাদেশ ব্যাংক যে দামে ডলার বেচাকেনা করত, সেটিকেই আন্তঃব্যাংক দর বিবেচনা করা হতো। নিজেদের ঘোষণা করা দরই ওয়েবসাইটে উল্লেখ করত বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০০৩ সালের ২৯ মে বাংলাদেশ ব্যাংক স্থিরীকৃত মুদ্রা বিনিময় হারের টাকাকে ভাসমান মুদ্রা হিসেবে ঘোষণা দেয়। এর মানে হলো চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে ঠিক হবে মুদ্রার বিনিময় হার। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম দ্রুত বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে বাফেদাকে রপ্তানি, আমদানি ও রেমিট্যান্সের জন্য ভিন্ন ভিন্ন বিনিময় হার নির্ধারণের নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশ অনুযায়ী বর্তমানে বাজারে ডলারের তিনটি বিনিময় হার চালু আছেÑক. রপ্তানিকারকরা বর্তমানে প্রতি ডলার পাচ্ছেন ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা; খ. রেমিট্যান্স গ্রাহক পাচ্ছেন ১০৯ টাকা এবং গ. আমদানি কারকরা পাচ্ছেন ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। এছাড়া কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে প্রতি ডলার সর্বোচ্চ ১১৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এবং ব্যাংকগুলো গড়ে ১১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১১২ টাকা দরে ডলার বিক্রি হচ্ছে।
রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির হার: ২০২১-২২ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে বিক্রি করতে হয়েছিল ৭৪০ কোটি ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের নির্দেশিকা অনুসারে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন মোট রিজার্ভ ২৩ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার।
মুদ্রার অবমূল্যায়ন নেতিবাচক না ইতিবাচক, সেই সিদ্ধান্ত দেশ অনুযায়ী আপেক্ষিক। বাণিজ্যের স্বার্থে বিশ্বের প্রায় সব দেশ বিভিন্ন সময়ে ডলারের বিপরীতে নিজেদের মুদ্রার অবমূল্যায়ন বা সমন্বয় করতে হয়। বাংলাদেশ এর বাইরে নয়। তাই বিভিন্ন কারণে ডলারের দামের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটা অর্থনীতির একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ২০২১ সালের জুনের আগে ১০ বছর ধরে দেশে ডলারের দাম স্থিতিশীল ছিল। ২০২০ সালের কভিড মহামারি এবং বর্তমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব সারাবিশ্বের অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। পণ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে গেছে, ফলে বৃদ্ধি পেয়েছে আমদানি ও পরিবহন ব্যয়। এতে দেশে ডলারের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। অপরদিকে আমদানির লাগাম টানার কারণে রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে, যার ফলে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে পৌঁছেছে। রিজার্ভের অব্যাহত পতন ঠেকাতে ডলারের বিনিময় হার আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলারের মূল্য বৃদ্ধির প্রধান কারণ হলো বিভিন্ন এমএলএম কোম্পানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হওয়া। সম্প্রতি এমটিএফই মাধ্যমে দেশ থেকে ১১ হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে গেছে। এছাড়া কতিপয় অসাধু সরকারি আমলা ও ব্যবসায়ী চক্র বিভিন্নভাবে বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার করছে। টাকার অবমূল্যায়ন রোধ করতে হলে এসব অবৈধ উপায়ে বিদেশে টাকা পাচার বন্ধ করতে হবে। মুদ্রার অবমূল্যায়ন করলে মূল্যস্ফীতি বাড়ে। গত মে মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। ফলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। রেমিট্যান্স বৃদ্ধির জন্য দেশের ব্যাংকিং চ্যানেলকে উৎসাহিত করতে বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। হুন্ডি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। সর্বোপরি দেশের ব্যাংকিং খাতসহ সব আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিতকরণের জন্য প্রয়োজনীয় সময়োপযোগী আইন তৈরি ও প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারলেই দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হবে।
কর্মকর্তা
শরিয়াহ্ সেক্রেটারিয়েট
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড
ফৎসফমঁষধসসঁংঃধভধÑমসধরষ.পড়স