বাংলাদেশ ব্যাংকের ইসলামি ব্যাংক-সংক্রান্ত ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে ১০টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক ১৬০৫টি শাখা, ১১টি প্রচলিত সুদভিত্তিক বাণিজ্যিক ব্যাংক (১টি বিদেশি ব্যাংকসহ) প্রচলিত ধারার ব্যাংকিং কার্যক্রমের পাশাপাশি ২৩টি ইসলামি ব্যাংকিং শাখা এবং ১৩টি প্রচলিত বাণিজ্যিক ব্যাংক ৫১১টি ইসলামিক ব্যাংকিং উইন্ডোর মাধ্যমে ইসলামি ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। সেপ্টেম্বর ২০২২ শেষে ইসলামি ব্যাংকিং খাতের মোট আমানতের পরিমাণ সকল বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট আমানতের যথাক্রমে শতকরা ২৬.৮০ ভাগ এবং মোট বিনিয়োগের (মোট ঋণ) শতকরা ২৮.৯৮ ভাগে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ ইসলামী ব্যাংকিং খাতে আমানত ও বিনিয়োগের পরিমাণ সমগ্র ব্যাংকিং খাতের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।
আমানত
সেপ্টেম্বর ২০২২ শেষে ইসলামি ব্যাংকিং খাতের মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪২১৩.৭৫ বিলিয়ন টাকা, যার মধ্যে ১০টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংক, ১১টি প্রচলিত সুদভিত্তিক বাণিজ্যিক ব্যাংকের ইসলামি ব্যাংকিং শাখা এবং ১১টি প্রচলিত সুদভিত্তিক বাণিজ্যিক ব্যাংকের ইসলামি ব্যাংকিং উইন্ডোর আমানতের পরিমাণ যথাক্রমে ৯২.৯৮, ৩.৩১ এবং ৩.৭২ শতাংশ।
ইসলামি ব্যাংকিং খাতে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের আমানত সবচেয়ে বেশি (৩৬.২৯ শতাংশ)। আমানত গ্রহণের দিক থেকে পরবর্তী অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক (১১.৬১ শতাংশ), এক্সিম ব্যাংক (১০.০০ শতাংশ), আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক (৯.৮৭ শতাংশ), সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (৭.৮১ শতাংশ), শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক (৫.৬৬ শতাংশ), ইউনিয়ন ব্যাংক (৪.৮১ শতাংশ), স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক (৪.০১ শতাংশ), গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক (২.৯০ শতাংশ) এবং আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক (০.৩০ শতাংশ)।
বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংক খাতের শ্রেণিভিত্তিক আমানত পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচ্য ত্রৈমাসিক শেষে ইসলামি ব্যাংকিং খাতের মোট আমানতের মধ্যে মুদারাবা মেয়াদি আমানত সবচেয়ে বেশি (৪৫.৫২ শতাংশ)। আমানত প্রকল্পের মধ্যে পরবর্তী অবস্থানে রয়েছে মুদারাবা সঞ্চয়ী আমানত (২০.৮২ শতাংশ), বিশেষ আমানত প্রকল্প (৭.৪৩ শতাংশ), মুদারাবা বিশেষ সঞ্চয় (পেনশন) আমানত (৯.৪৮ শতাংশ), মুদারাবা বিশেষ নোটিশ আমানত (৪.৭৬ শতাংশ), চলতি হিসাব আমানত (৪.১০ শতাংশ), মুদারাবা হজ আমানত ০.২০ শতাংশ)।
বিনিয়োগ: ইসলামি ব্যাংকিং পরিভাষায় বাণিজ্যিক ঋণকে বিনিয়োগ বলা হয়। সেপ্টেম্বর ২০২২ ত্রৈমাসিক শেষে ইসলামি ব্যাংকিং খাতের মোট বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৮৬২.২১ বিলিয়ন টাকা, যার মধ্যে ১০টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক, প্রচলিত সুদভিত্তিক বাণিজ্যিক ব্যাংকের ইসলামি ব্যাংকিং শাখা এবং প্রচলিত সুদভিত্তিক বাণিজ্যিক ব্যাংকের ইসলামি ব্যাংকিং উইন্ডোর বিনিয়োগের পরিমাণ যথাক্রমে ৯৪.৪৭, ২.৯৭ এবং ২.৫৬ শতাংশ।
ইসলামি ব্যাংকিং খাতে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের বিনিয়োগের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি (৩৫.৬৩ শতাংশ)। বিনিয়োগ প্রদানের দিক থেকে পরবর্তী অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিঃ (১২.২০ শতাংশ), এক্সিম ব্যাংক লিঃ (১০.৪৬ শতাংশ), আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিঃ (৯.৩৩ শতাংশ), সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিঃ (৮.৪৪ শতাংশ), শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক লিঃ (৬.১৫ শতাংশ), ইউনিয়ন ব্যাংক লিঃ (৫.০০%), স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিঃ (৪.১৮ শতাংশ), গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক লিঃ (২.৮৮ শতাংশ) এবং আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক লিঃ (০.২১ শতাংশ)।
ইসলামী ব্যাংকিংয়ের খাতভিত্তিক বিনিয়োগ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ব্যবসা-বাণিজ্য খাতে বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি, যা মোট বিনিয়োগের ৩৭.৫৭ শতাংশ। বিনিয়োগের অন্য খাতসমূহ হচ্ছে বৃহৎ শিল্পখাত (৩০.০৮ শতাংশ), সিএমএসএমই খাত (১১.৪২ শতাংশ), নির্মাণ (৬.৬৫ শতাংশ), সেবা (৪.৭৬ শতাংশ), ভোক্তা (৩.৯৭ শতাংশ), কৃষি-বনজ (১.৯৩ শতাংশ)।
ইসলামি ব্যাংকিং খাতের অর্থায়ন পদ্ধতি (গড়ফব) ভিত্তিক বিনিয়োগ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বাই মুরাবাহা পদ্ধতিতে বিনিয়োগের পরিমাণ সর্বোচ্চ (৪৭.৭৮ শতাংশ)। অর্থায়ন পদ্ধতিভিত্তিক বিনিয়োগে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বাই-মুয়াজ্জাল (২৩.৩১ শতাংশ) এবং এইচপিএসএম (শতকরা ১৭.৭৫ ভাগ)। অন্য বিনিয়োগ পদ্ধতিগুলো হচ্ছে ইজারাহ (৪.০৬ শতাংশ), ইসতিসনা (০.০৩ শতাংশ), সালাম (১.৬২ শতাংশ), মুশারাকা (০.২৭ শতাংশ) ও মুদারাহা (০.২৮ শতাংশ)।
বাংলাদেশে ইসলামিক ব্যাংকিং ও প্রচলিত ধারার ব্যাংকিং কার্যক্রমের তূলনামূলক চিত্র
গত চল্লিশ বছর ধরে বাংলাদেশে ইসলামিক ব্যাংকিং খাতের প্রসার ঘটছে এবং বর্তমানে আমানত, বিনিয়োগ ও রেমিট্যান্সের এক-তৃতীয়াংশের অংশীদার। এ খাত প্রচলিত ধারার ব্যাংকিং কার্যক্রমের তুলনায় অধিকতর সাফল্য অর্জন করছে। বর্তমানে ইসলামিক ব্যাংক খাতের সম্পদের আয় হার (জঙঅ) এবং ইকুইটির আয়হার (জঙঊ) প্রচলিত ধারার ব্যাংকিংয়ের তুলনায় বেশি। ২০২১ সালের আর্থিক স্থিতিশীলতা রিপোর্ট অনুযায়ী ইসলামিক ব্যাংকিং শিল্পের সম্পদের আয়হার এবং ইকুইটির আয় হার ছিল ০.৫ ও ৯.৯ শতাংশ; প্রচলিত ধারার ব্যাংকিংয়ে আয় হার এবং ইকুইটির আয় হার ছিল ০.২ ও ৪.৪ শতাংশ।
বাংলাদেশে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের চ্যালেঞ্জগুলো ও করণীয়
বাংলাদেশে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের বর্তমান মুখ্য চ্যালেঞ্জসমূহ ও করণীয় বিষয়গুলো নিন্মে তুলে ধরা হলো।
আইনি কাঠামো জোরদারকরণÑবাংলাদেশে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের জন্য ২০০৯ সালের গাইডলাইন হালনাগাদকরণ এবং পৃথক আইন চালুর জন্য যে কার্যক্রম চলছে তা জোরদারকরণ;
অংশীদারি কারবারে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য আইন প্রণয়ন প্রয়োজন। উল্লেখ্য, বর্তমানে ইসলামিক ব্যাংকের বিনিয়োগের সিংহভাগ হচ্ছে ক্রয়-বিক্রয় নীতিভিত্তিক এবং অংশীদারি কারবারে বিনিয়োগের পরিমাণ ২ শতাংশেরও কম;
সুপারভিশন কাঠামো শক্তিশালীকরণÑএটা অর্জনের লক্ষ্যে পরিদর্শকদের ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের মৌলিক ধারণাসহ পরিদর্শনের কলাকৌশল বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান;
শরিয়াহ গভর্ন্যান্স কাঠামো ও পরিপালন কার্যক্রম শক্তিশালীকরণÑশরিয়াহ গভর্ন্যান্স কাঠামো ও পরিপালন কার্যক্রম শক্তিশালীকরণের জন্য পৃথক গাইডলানই ইস্য করা, যাতে শরিয়াহ বোর্ড গঠন, সদস্যদের যোগ্যতা নির্ধারণ এবং একই সদস্যের একাধিক ব্যাংকের শরিয়াহ বোর্ডে নিয়োগ সীমিত রাখা যায়;
ইসলামিক ব্যাংকের বিনিয়োগ কর্মসূচিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতকে অগ্রাধিকার প্রদান করা;
সুবিধাবঞ্চিত দরিদ্রদের জন্য সামাজিক অর্থায়ন তথা জাকাত, ওয়াকফ এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকে উৎসাহ প্রদান;
মুদ্রা ও রাজস্ব নীতিতে ইসলামিক হাতিয়ারসমূহের অন্তর্ভুক্তি-মুদ্রা ও রাজস্ব নীতিতে ইসলামিক হাতিয়ারসমূহের কার্যকর অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশে ইসলামিক ব্যাংকিং শিল্পকে অধিকতর সাফল্য এনে দিতে পারে;
বাংলাদেশে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি ইসলামিক মূলধন বাজার ও বিমা (তাকাফুল) শিল্পকে উন্নয়ন করতে হবে, যা মেয়াদি অর্থায়নের মাধ্যমে ব্যাংকের ওপর চাপ হ্রাস করবে এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় সুফল বয়ে আনবে;
শীর্ষ নির্বাহী পদগুলোতে অভিজ্ঞ পেশাজীবীদের নিয়োগÑইসলামিক ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহী পদগুলোতে ইসলামিক অর্থনীতি, ব্যাংকিং এবং ফাইন্যান্স বিষয়ে ডিগ্রিধারী ও অভিজ্ঞ পেশাজীবীদের নিয়োগ নিশ্চিতকরণ;
বিশ্বদ্যিালয়গুলোতে ইসলামি অর্থনীতি, ব্যাংকিং এবং ফাইন্যান্স শিক্ষা কার্যক্রম চালু-বাংলাদেশে শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের এক-তৃতীয়াংশ বাজার হিস্যা থাকলেও ইসলামিক অর্থনীতি, ব্যাংকিং এবং ফাইন্যান্স বিষয়ে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ কোনো প্রোগ্রাম চালু নেই। ইসলামিক ফাইন্যান্স শিল্পের সুষম উন্নয়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইসলামি অর্থনীতি, ব্যাংকিং এবং ফাইন্যান্স শিক্ষা বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রোগ্রাম চালু করা প্রয়োজন।
অপ্রতুল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা: বর্তমানে ইসলামিক ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের জন্য বিদ্যমান প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা অপ্রতুল বিধায় পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা;
ইসলামিক অর্থনীতি, ব্যাংকিংয়েব ফাইন্যান্স বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম জোরদারকরণ-বাংলাদেশে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের অগ্রগতির জন্য ইসলামিক অর্থনীতি, ব্যাংকিং এবং ফাইন্যান্স বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম একেবারেই দুর্বল। এ আর্থিক খাতের সম্প্রসারণের জন্য ইসলামিক অর্থনীতি, ব্যাংকিং এবং ফাইন্যান্স বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।
ইসলামের সোনালি যুগে তথা খোলাফায়ে রাশিদান (৬৩২-৬৬২ খ্রি.), উমাইয়া (৬৬১-৭৫০ খ্রি.), আব্বাসি (৭৫০-১২৫৮ খ্রি.), ওসমানি (১২৯৯-১৯২২ খ্রি.) ও মুঘল আমলে (১৫২৬-১৮৫৭ খ্রি.) বিশ্ব অর্থনীতি ও বাণিজ্যে মুসলিম উম্মার ছিল একক আধিপত্য ও দাপট। ১৯৭৪ সালে ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) প্রতিষ্ঠা বিশ্ব অর্থনীতিতে মুসলিম উম্মার হারোনো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারের পথ নকশা। ১৯৭৪ সালে আইডিবিতে যোগদানের মাধ্যমে বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের পটভূমি সৃষ্টি এবং ১৯৮৩ সালে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের সফল যাত্রাকে বাংলাদেশের আর্থিক খাত তথা অর্থনীতিতে চধৎধফরমস ংযরভঃ হিসেবে অভিহিত করা যায়। কেননা, এ পরিবর্তন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সুদভিত্তিক ঋণনির্ভর ব্যবস্থা থেকে ইসলামি শরিয়াহ নির্ভর মুনাফা ইকুইটিভিত্তিক আর্থিক ব্যবস্থায় রূপান্তরের পথ সুগম করে। অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ আর্থিক বাজার ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনাকে সুদভিত্তিক ঋণনির্ভর ব্যবস্থা থেকে মুনাফাভিত্তিক ইকুইটিনির্ভর ব্যবস্থায় রূপান্তরের মাধ্যমে বাংলাদেশের আর্থিক বাজার ও রাজস্ব ব্যবস্থা অধিকতর অংশীদারিত্বমূলক, স্থিতিশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জনকল্যাণমুখী হতে পারে।
ইসলামিক ফাইন্যান্স খাতের সার্বিক সুফল পেতে দরকার এর বর্তমান চ্যালেঞ্জসমূহ দূরীকরণে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থাদি গ্রহণ। মেয়াদি অর্থায়নের মাধ্যমে ব্যাংকের ওপর চাপ হ্রাস এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজন ইসলামিক মূলধন বাজার এবং বিমা (তাকাফুল) শিল্পের বিকাশ সাধন করা জরুরি। ইসলামিক ব্যাংকের বিনিয়োগ কর্মসূচিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতকে অগ্রাধিকার প্রদান এবং সুবিধা বঞ্চিত দরিদ্রদের জন্য সামাজিক অর্থায়ন তথা জাকাত, ওয়াকফ এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকে অতীব গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।
যেহেতু মাকাশিদ আল শরিয়াহর তথা ইসলামি শরিয়াহর উদ্দেশ্য হচ্ছে কল্যাণ সাধন ও ক্ষতি বর্জন তাই ইসলামিক ফাইন্যান্সের মূল লক্ষ্য হতে হবে সমাজের সকল শ্রেণি তথা ধনী, মধ্যবিত্ত, স্বল্প আয়ের দরিদ্র এবং অসহায় ও নিঃস্ব মানুষের কল্যাণে আমানত-বিনিয়োগসহ সামাজিক কার্যক্রমকে পরিচালনা করা। প্রচলিত ধারার ফাইন্যান্সের রয়েছে শুধু বাণিজ্যিক হাতিয়ার, যা শুধু ধনী ও সম্পদশালী লোকদের আমানত-বিনিয়োগ প্রদান করতে পারে এবং দরিদ্র মানুষের কল্যাণে কোনো ভূমিকা পালনে ব্যর্থ। অন্যদিকে, ইসলামিক ফাইন্যান্সের দার্শনিক এবং প্রায়োগিক শক্তি ও সৌন্দর্য হলো এর বাণিজ্যিক এবং অ-বাণিজ্যিক হাতিয়ারসমূহ উভয়েরই ব্যবহারের সক্ষমতা। ফাইন্যান্সের বাণিজ্যিক তথা মুনাফাভিত্তিক হাতিয়ার ব্যবহারের মাধ্যমে ধনী লোকদের যেমন আমানত-বিনিয়োগ সেবা প্রদান করতে পারে, তেমনি অ-বাণিজ্যিক হাতিয়ার তথা জাকাত, ওয়াকফ এবং সুদমুক্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগ সেবা প্রদানের মাধ্যমে দরিদ্র এবং অসহায় ও নিঃস্ব মানুষদের কল্যাণ সাধন করতে পারে। ইসলামিক ফাইন্যান্সের প্রতিটি অঙ্গ তথা ব্যাংকিং, মূলধন বাজার, তাকাফুল এবং সামাজিক অর্থায়নের ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়নের মাধ্যমেই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমাজের প্রত্যেক মানুষের কল্যাণ সাধনের দ্বারা মাকাশিদ আল শরিয়াহর তথা ইসলামি শরিয়াহর উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
[নিবন্ধটিতে বর্ণিত মতামত লেখকের একান্ত নিজের; এতে তার অফিশিয়াল অবস্থানের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই]
নিবন্ধকার বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমির (বিবিটিএ) পরিচালক (গবেষণা)