নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের ঋণমান কমাল আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা ফিচ। সংস্থাটির মতে ঋণমানে বাংলাদেশ এতদিন স্থিতিশীল ছিল। এখন সংস্থাটি ঋণমান কমিয়ে ‘নেতিবাচক’ করেছে। এক্ষেত্রে সংস্থাটি দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা ইস্যুয়ার ডিফল্ট রেটিং (আইডিআর) স্থিতিশীল থেকে নেতিবাচক করেছে। ফিচ রেটিং বাংলাদেশের আইডিআরকে ‘বিবি মাইনাস’ বলে নিশ্চিত করেছে।
গতকাল সোমবার শীর্ষস্থানীয় এই ঋণমান সংস্থার প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
আইডিআর স্থিতিশীল থেকে নেতিবাচক হওয়ার অর্থ হচ্ছে, বাংলাদেশের খেলাপি হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি, তবে বাংলাদেশ এখনো তার ঋণের দায় মেটাতে বা বাধ্যবাধকতা পূরণে সক্ষম। এ ছাড়া সরকারে ঋণও সম পর্যায়ের অন্যান্য দেশের তুলনায় কম—জিডিপি প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাও ভালো; কিন্তু রাজস্ব–জিডিপির নিম্ন অনুপাত, নিম্ন মাথাপিছু আয়, ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা ও সুশসানের ঘাটতির কারণে ভালো দিকগুলো ফিকে হয়ে যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু উদ্বেগ রয়েছে, যা ভবিষ্যতে তার বৈদেশিক মুদ্রা ঋণের বাধ্যবাধকতা পূরণ করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। কারণ ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে, যেমন মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণের পদ্ধতি পরিবর্তন, ঋণদাতাদের সহায়তা নেওয়া—এসব করেও বিদেশি মুদ্রার মজুতের পতন ঠেকানো যায়নি বা বাজারে ডলারে সংকট মেটানো যায়নি। বাংলাদেশ ধীরে ধীরে এসব বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিলেও সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব হয়নি।
এর আগে ৩১ মে আন্তর্জাতিক ঋণমান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান মুডিসও বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়ে দিয়েছে। ওই সময় সংস্থাটি বাংলাদেশের ঋণমান এক ধাপ কমিয়ে বিএ৩ থেকে বি১-এ নামিয়েছে। এরপর অপর আন্তর্জাতিক ঋণমান যাচাইকারী সংস্থা এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল বাংলাদেশের ঋণমান স্থিতিশীল থেকে কমিয়ে ‘নেতিবাচক’ করে। একই সঙ্গে দেশের সার্বভৌম বা সভরেন ঋণমান দীর্ঘমেয়াদে ‘বিবি মাইনাস’ ও স্বল্পমেয়াদে ‘বি’ নিশ্চিত করেছিল।
বিশেষজ্ঞ এবং ব্যাংকাররা বলেছেন, একটি দেশের ঋণমান দৃষ্টিভঙ্গি নেতিবাচকভাব করা হয়। তাহলে আন্তর্জাতিক আর্থিক বাজারে থেকে তহবিল সংগ্রহে অনেক বেগ পেত হয়। পেলেও উচ্চতর সুদ দিতে হয়। এটি সরকার এবং দেশের ব্যবসার জন্য আন্তর্জাতিক পুঁজি সংগ্রহ করা আরও ব্যয়বহুল করে তুলতে পারে।
তারা আরও বলেন, নেতিবাচক করার ফলে বিদেশি বিনিয়োগের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। কারণ বিদেশিরা বিভিন্ন সংস্থার রেটিং দেখে একটি দেশে বিনিয়োগ করে থাকে। এছাড়াও এটি মুদ্রার উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা আমদানিকৃত পণ্যের খরচ বাড়াতে পারে এবং সম্ভাব্য মুদ্রাস্ফীতিতে অবদান রাখতে পারে।
ক্রমবর্ধমান আমদানি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপের কারণে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাপের মধ্যে থাকবে। এ জন্য বছর শেষে রিজার্ভ ১৯ শতাংশ কমে ২৭ দশমিক ৩ বিলিয়নে নামবে। রির্জাভ থেকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন তহবিল (বিআইডিএফ) বাদ দিলে আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী রিজার্ভ নেমে আসবে ২১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে।
ফিচ রেটিং বলছে, রিজার্ভ পরিস্থিতি এখনো চ্যালেঞ্জের মধ্যে, বিনিময় হার নিয়ন্ত্রিত, তেলের দাম বেশি এবং ভবিষ্যতে আমদানি বিধিনিষেধ শিথিল করার চাপের কারণে চলতি হিসাবে ঘাটতি ২০২৫ সাল পর্যন্ত থাকতে পারে। সংস্থাটি আরও বলেছে, ২০২৪–২৫ সাল পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তা পূরণের সক্ষমতা অর্জন করা উচিত বাংলাদেশের।