মো:নিজাম উদ্দিন
এক.
বাংলাদেশের স্বাধীনতা শব্দটির সাথে জিয়াউর রহমান জড়িয়ে আছেন খুব গভীর ভাবে।একাত্তরের এক মহানায়কের নাম মেজর জিয়া।জেড ফোর্সের অধিনায়ক। এক নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার।চট্টগ্রামে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে পাকিস্তানের মতো সামরিক দিক দিয়ে শক্তিশালী একটা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাঙ্গালিদের পক্ষ হয়ে বিদ্রোহ করা খুব সহজ কাজ ছিল না।একাত্তরে কলকাতায় সেক্টর কমান্ডারদের কাউন্সিলে জিয়া মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য পাঁচজন তরুন আর্মি অফিসারের নেতৃত্বে একটি ওয়ার কাউন্সিল গঠনেরও প্রস্তাব দিয়েছিলেন যদিও তা খালেদ মোশাররফ ও ভারতীয় বিরোধীতায় আলোর মুখ দেখেনি!সেই প্রতিপক্ষই পরবর্তীতে জিয়ার রাজনৈতিক শত্রুতে পরিনত হয়।তারপরের ইতিহাস আমাদের জানা!
স্বাধীন দেশের ভাগ্যহত এক জাতি ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষনে উনিশশো পচাত্তর সালের সাতই নবেম্বর ঐতিহাসিক সিপাহি জনতা বিপ্লবের মাধ্যমে মু্ক্ত করে আনে বন্দী জিয়াউর রহমানকে।তখন থেকেই সৈনিক জিয়ার রাজনৈতিক পথচলা শুরু।জিয়াউর রহমানের ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি,সিদ্ধান্তটি তিনি নিতে পেরেছিলেন বলে ইতিহাস তাঁকে সম্পূর্ণ ভিন্ন চোখে দেখে।একাত্তর পরবর্তী সময়ের রাজনীতির সীমাহীন ব্যর্থতা বিএনপি প্রতিষ্ঠার পথ তৈরি করে দেয়।বিএনপির বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের দালালীর সমুচিত জবাব।স্বাধীনতার মাত্র সাত বছরের মাথায় মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে কথা সর্বস্ব রাজনৈতিক দলের প্রতি মোহবঙ্গ হয় দেশবাসীর।জন্ম হয় বিএনপি।প্রথমে জাগদল নামে বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে আহ্বায়ক করে ১৯৭৭সালে একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম তৈরি করা হয়।১৯৭৮ সালে ২৮ আগস্ট জাগদল বিলুপ্ত করা হয়।১লা সেপ্টেম্বর বিএনপি প্রতিষ্ঠা করা হয়।বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন ৭৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির আহবায়ক ছিলেন জিয়াউর রহমান।রমনা রেস্টুরেন্টের প্রথম দিনের সংবাদ সম্মেলনে জিয়াউর রহমান প্রায় দুই ঘন্টা ব্যাপী শুধু সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।জন্ম হয় এক নতুন রাজনীতির পথচলা।
দুই.
মওদুদ আহমেদ তাঁর ” চলমান ইতিহাস” বইয়ে লিখেছেন বিএনপি গঠিত হয় মূলত মুসলিম লীগ,যাদু মিয়ার ন্যাপ,শ্রীযুক্ত রসরাজ মন্ডলের সিডিউল কাস্ট ফেডারেশন, ইউনাইটেড পিপলস পার্টি, পিডিপি ও কনভেনসন মুসলিম লীগের নেতৃবৃন্দদের নিয়ে।পরবর্তীতে বাম নেতাদের মধ্যে যারা বিএনপিতে যোগ দিয়েছিলেন তাদের অন্যতম কাজী জাফর আহমদ,তরিকুল ইসলাম,আব্দুল্লাহ আল নোমান, আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া,নজরুল ইসলাম খান,মির্জা গোলাম হাফিজ,সাদেক হোসেন খোকাসহ অনেকেই।যারা ছিলেন সে সময়ের তারকা রাজনীতিবিদ।প্রথম কমিটির শতকরা ৪৫ জন নেতাই ছিলেন বয়সে তরুন।দলটিকে অল্প সময়ের মধ্যেই দেশে সকল মত ও পথের দেশ প্রেমিক রাজনীতিবিদের এক শক্তিশালী ফ্লাটফর্মে পরিনত করা হয়।
বাংলাদেশের রাজনীতির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সন্ধিক্ষনে জিয়া পরিবারের তিন নেতৃত্বের আগমন।একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমান,নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে বেগম খালেদা জিয়া,চলমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দিক নির্দেশায় দেশনায়ক তারেক রহমান।তিন প্রজন্মের রাজনীতিতে উন্নয়ন,উৎপাদন,শিক্ষা, স্বাস্হ্য,সামাজিক,গণতান্ত্রিক যে পরিবেশ বাংলাদেশ নিশ্চিত হলো তা চোখে পড়ার মত।একদলীয় গনতন্ত্রের পথকে রুদ্ধ করে বহুদলীয় গনতন্ত্র কায়েম করা হয়।বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো দল যারা কথায় কথায় গনতন্ত্রের কথা বলে তাদের হাতেই বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রথমে যেই গনতন্ত্র, মানুষের অধিকারকে হরণ করা হয় সেই অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইটাই জন্ম লগ্ন থেকে চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি।
বহুদলীয় গণতন্ত্রকে প্রমোট করা বিএনপির রাজনীতির সবচেয়ে শক্তিশালী দিক।
তিন.
বাংলাদেশকে রাশিয়ার মত পরাশক্তির বাইরে এনে দ্বি-মেরু কেন্দ্রীক বিশ্ব ব্যবস্তার সংঘাত এবং সংঘর্ষ থেকে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনে অটল থাকার শক্তিশালী ভূমিকাই ছিল সেই সময়ে জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত পররাষ্ট্রনীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
সার্ক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়ে জিয়াউর রহমান প্রথম দক্ষিণ এশিয়ায় নিজেদের নিরাপত্তার সার্থে কালেক্টিভ সিকিউরিটির প্রসঙ্গটিকে সফলভাবে সামনে নিয়ে আসেন।পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে তিনি বাংলাদেশের জিও পলিটিক্স বা ভূরাজনীতির বিষয়টিকেই বিশেষ গুরুত্ব দিতে গিয়ে চীনের দিকে দৃষ্টি দিয়েছেন।বাংলাদেশের সাথে চীনের কূটনৈতিক সম্পর্কও জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বেই।যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই বাস্তবতা আর নেই।
পার্বত্য চট্টগ্রামের আয়তন বাংলাদেশের মোট আয়তনের প্রায় দশ ভাগের এক ভাগ।স্বাধীনতার পর সংসদে দাঁড়িয়ে শেখ মুজিবুর রহমান যখন সবাইকে বাঙ্গালি হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলেন সেই সময়ে পাহাড়িদের নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন।তিনি বলেছিলেন একজন বাঙ্গালি যেমন চাকমা হতে পারে না,একজন চাকমা বা পাহাড়িও বাঙ্গালি হতে পারে না।সেই সময়ে আইডেন্টিটি ক্রাইসিসের আশংকায় জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বে পাহাড় অশান্ত হয়ে পড়ে।বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে বিএনপির বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদকে পাহাড়িরা তুলনামূলক ভাবে নিরাপদ ভাবতে থাকে।পার্বত্য চট্টগ্রামে ভারতের মদদে জুম্মল্যান্ড নামে আলাদা রাষ্ট্র তৈরির ষড়যন্ত্র জিয়াউর রহমানের কৌশলী রাজনীতির জন্যই সফল হয়নি।
চীন,জাপান,আমেরিকা,ব্রিটেন, মধ্যপ্রাচ্য, ল্যাটিন আমেরিকা,দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের সাথে
সম্পর্ক উন্নয়ন এবং ইরাক- ইরান যুদ্ধবন্ধ,রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের চেষ্টা, ফিলিস্তিন মুক্তি সংগ্রামে জিয়ার ইতিবাচক ভূমিকা বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে নতুন করে পরিচয় করিয়েছে।
চার.
বাংলাদেশের ফরেন রেমিট্যান্সের অন্যতম উৎস জনশক্তি রপ্তানি এবং পোশাক শিল্প জিয়াউর রহমান এবং বিএনপির হাত ধরেই যাত্রা শুরু করে।সামরিক শাসকরা জোর করে ক্ষমতা দখল করলেও জিয়াউর রহমানকে বলতে গেলে জোর করেই জনগন ক্ষমতায় বসিয়েছে।একজন সামরিক শাসকের সাথে জিয়াউর রহমানের পার্থক্য এখানেই।ব্যক্তি জীবনে সাচ্চা মুসলিম,যুদ্ধের ময়দানে সাহসী অধিনায়ক,রাষ্ট্রপরিচালনায় একজন সফল রাষ্ট্রনায়কের নাম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।যার স্বপ্নের ঠিকানা বিএনপি।বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের রাজনীতিতে এমন সৎ শাসকের আগমন বিস্ময়ই বটে!বাংলার রাখাল রাজা মানুষের দুঃখ কষ্টের অংশীদার হতে,দেশকে, তার জনগনকে বুঝতে, চষে বেরিয়েছেন পুরোদেশ।মাইলের পর মাইল হেটে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের সংকট ও সম্ভাবনা বোঝার চেষ্টা করেছে।সহজ সরল জীবন যাপন,ন্যায়ের প্রশ্নে আপোসহীন মনোভাব এবং জিয়ার ব্যক্তিত্বের প্রতি আকর্ষন থেকেই বিএনপিকে একটি মধ্যমপন্থী দল হিসাবে রাজনৈতিক ঠিকানা বানিয়েছে এদেশের রাজনীতিবীদ, ছাত্র, শিক্ষক, আইনজীবী, ডাক্তার,সাংবাদিক, কবি,সাহিত্যেক সহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার সফল মানুষেরা।
” প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ
জীবন বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ “
দলীয় সংগীতের এদুটো লাইনই যথেষ্ট বিএনপিকে বোঝার জন্য যথেষ্ট।
জিয়াউর রহমানের সময় কৃষি বিপ্লবের জন্য হাতে নেয়া হয় ঐতিহাসিক খাল খনন কর্মসূচী।তাঁর শাসনকালে দক্ষ নেতা গড়ার জন্য দলে রাজনৈতিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্তা করেন তিনি।এমনকি দলের প্রশিক্ষণ ইন্সটিউশন খুলে তিনি নিজেই ক্লাস নিতেন।দলীয় আদর্শ ও দর্শনের উপর একসময় মন্ত্রীদের পর্যন্ত পরীক্ষা নিয়েছিলন।তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজ সহ অনেকেই সে পরীক্ষায় ফেলও করেছিলেন!এই ছিল জিয়াউর রহমানের বিএনপি ও রাজনীতি।মুক্তিযোদ্ধাদের দল বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের অবদানকে অনেক বড় করে দেখে বলেই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে নতুন একটি মন্ত্রনালয় প্রতিষ্ঠা করে।বিএনপিতে যত বীরউত্তম, বীরবিক্রম, বীর প্রতীক থেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা আছেন অন্য রাজনৈতিক দলে পাওয়া তা অসম্ভব। মর্যাদা পূর্ন স্বাধীনতাপদক, একুশে পদকও প্রবর্তন করে বিএনপি বাংলাদেশের মেধাবী নাগরিকের সম্মানিত করেছে।পুলিশে প্রথম নারীর অংশ গ্রহন বিএনপির হাত ধরেই।দেশের উন্নয়নে জিয়াউর রহমান মানুষের সামনে তুলেধরেছেন-কাজ,কাজ আর কাজের দর্শন।দুর্নীতির প্রশ্নে জিয়াউর রহমান ছিলেন আপোষহীন। তাঁর সততাই অনেককে বিএনপির রাজনীতির প্রতি আগ্রহী করে তুলে।
এক স্বচ্চ কাচের মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন জিয়াউর রহমান।জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি বাংলাদেশে সুশাসন এবং বহুদলীয় গণতন্ত্রের যে যাত্রা শুরু করেছিল তা অব্যাহত থাকলে দেশ অনেক এগিয়ে যেত।
পাঁচ.
তিন প্রজন্মের বিএনপিকে সবচেয়ে বেশী সময় নেতৃত্ব দেয়ার অভিজ্ঞতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার।বিএনপির নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে এরশাদ ক্ষমতা দখল করলে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই এদেশে মানুষের অধিকার ও গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।বিশেষ করে নারী শিক্ষায় এক নিরব বিপ্লবের অধিকারী তিনি।এক সাধারন গৃহবধূ থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নাম দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।এই দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করতে গিয়েই হারিয়েছেন স্বামী প্রেসিডেন্ট জিয়াকে,রাজনীতির জন্যই তিরান্নব্বই দিনের আন্দোলনে অফিসে বন্দী অবস্থায় পুত্রের লাশের কফিন ধরে কাঁদতে হয়েছে, একমাত্র এদেশের মানুষের জন্যই দেশনায়ক তারেক রহমান আজ নির্বাসনে।দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বানোয়াট এক মামলার রায়ে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থেকেও গৃহবন্দী!তবুও তিনি আপোষ করেননি।বেগম খালেদা জিয়া আপোষ করলে চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেই তিনি মুক্তি পেতে পারেন।সরকারও এমনটাই চায়।কিন্তু সমস্যা হল অন্যায়ের কাছে মাথা নত করার নাম বেগম খালেদা জিয়া নয়।
পয়তাল্লিশ বছরের রাজনীতিতে বিএনপির সবচেয়ে বড় অর্জন ছাত্রদলের মাধ্যমে শক্তিশালী এক নতুন রাজনৈতিক প্রজন্ম তৈরি করতে পারা।যারা রাজনীতিতে উদারপন্থী।আশি ও নব্বইয়ের দশকে ছাত্রদল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রসমাজের মাঝে ছাত্ররাজনীতির এক ঝড় বইয়ে দেয়।ঢাকার ওয়ালে ওয়ালে সে সময় লিখা থাকত-Bnp:Is the choice of new generation.ডাকসু সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রসংসদে সে সময় ছাত্রদলের আধিপত্য ছিল চোখে পড়ার মত।ছাত্রদলের প্রজন্মই মূলত এখন বিএনপির মূলশক্তি।যা ভবিষ্যতে দলের স্তিতিশীলতার জন্য খুব বেশি প্রয়োজন।বিএনপির স্থায়ী কমিটিতেও বর্তমানে ছাত্রদলের প্রজন্ম স্হান করে নিয়েছে।খুব কম সময়ের মধ্যেই বিএনপির হাইকমান্ডে নেতৃত্ব দিবে এমন একটি প্রজন্ম যাদের রাজনীতি হয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার হাত ধরে। অর্থাৎ তরুণ নেতৃত্ব।তারেক রহমান সেই লক্ষেই দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
ছয়.
বিএনপিকে এরশাদের নয় বছর, বর্তমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের পনের বছর ও ওয়ান ইলেভেনের দুই বছর এই ছাব্বিশ বছর শুধু গনতন্ত্রের জন্যই লড়াই করতে হচ্ছে।বার বার মোকাবেলা করতে হচ্ছে রাষ্ট্রীয় দানবকে।বিগত দিন গুলোতে বিএনপির নেতৃত্বে যে আন্দোলন হয়েছে তাও নজির বিহীন।আমাদের মনে রাখতে হবে সরকার পতনকেই শুধুমাত্র আন্দোলনের সফলতা বুঝায় না!জালিমের বিরুদ্ধে জুলুমের প্রতিবাদই সত্যিকারের রাজনীতি।নির্বাসনে নেতা।তার অপেক্ষায় বাংলাদেশ।এ আজ কবিতার ছন্দের মত পরিচিত। তারেক রহমানের নির্বাসিত জীবনের রাজনীতি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে ক্ষমতার রাজনীতির চেয়ে অনেক বড়।জেল,জুলুম, নির্যাতন, নির্বাসন একজন জাতীয় নেতাকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শ্রদ্ধা ভালবাসা আর সম্মানের জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করে।তারেক রহমানও এর ব্যতিক্রম নন।ইরানের আয়াতুল্লাহ খোমেনীকেও ফ্রান্সে নির্বাসিত থেকেই দেশে একটি সফল বিপ্লবে নেতৃত্ব দিতে হয়েছিলেন।সাতাশ বছরের কারাবাসই আফ্রিকায় একজন নেলসন মেন্ডেলা তৈরি করেছে।তারেক রহমানের তৃনমূল প্রতিনিধিসভা বিএনপির কালজয়ী রাজনৈতিক দর্শন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও সাংগঠনিক কাঠামোকে শক্তিশালী করনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।সম্প্রতি শেষ হওয়া তারুণ্যের সমাবেশও দেশের রাজনীতিতে একটি পজেটিভ বার্তা দিয়ে গেল।দেশব্যাপী পদযাত্রা, গণমিছিল সহ বিএনপির চলমান কর্মসূচী গুলোতে এখন হাজার হাজার মানুষ অংশ নিচ্ছে-তারা গণতন্ত্র চায়,সুশাসন চায়।
তারেক রহমানের নেতৃত্বেই এগিয়ে চলছে দলের তরুণ নেতৃত্ব।বিএনপির ক্ষমতার স্বাদ নিয়ে যারা দলত্যাগ করেছে,নতুন দল করেছে তাদের কারও পরিনতিই খুব একটা ভাল হয়নি।কেউই সফল হতে পারেনি,ভবিষ্যতেও সে স্বপ্নদেখা বাতুলতা।বিএনপি বলতে এদেশের মানুষ জিয়া পরিবারের নেতৃত্ব ছাড়া আর কিছুই বুঝতে চায়না,বুঝেনা।
বাংলা ভাই, শায়খ আবদুর রহমানের মত জঙ্গিদের ধরে বিচার করে বিএনপি দৃষ্টান্ত স্হাপন করেছে যে দলটি জঙ্গিবাদকে ঘৃণা করে, প্রত্যাখ্যান করে।
তবে হ্যা কিছু সীমাবদ্ধতা বিএনপির ও ছিল।বর্তমান বিশ্বব্যবস্হায় রাজনৈতিক আদর্শকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য মিডিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করলেও ক্ষমতায় থাকতে আমরা নিজস্ব কোন মিডিয়া জগত তৈরি করতে পারিনি।যা অপপ্রচারের দাত ভাঙ্গা জবাব দেবে।যে অভাব দল এখন অনুভব করছে।এখন পর্যন্ত দলে আওয়ামী লীগের থিংকট্যাংক সিআরআই-কে তথ্য ও পলিসি দিয়ে সমুচিত জবাব দেওয়ার মত আমরা দলে কোনো শক্তিশালী গবেষণা প্রতিষ্ঠান তৈরী করতে পারিনাই।পলিটিক্স এখন পলিসি নির্ভর এটা মনে হয় দল হিসাবে বিএনপি বার বারই কম গুরুত্ব দিয়ে আসছে এতদিন।তবে আমার বিশ্বাস আগামীদিনগুলোতে এ সেক্টরে বিএনপি তার অভাব কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে।
সাত.
৬ষ্ঠ কাউন্সিলে ঘোষিত বিএনপির রুপকল্প-২০৩০ ধারনাটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল।ভিশন-২০৩০ তে দেশনেত্রী থ্রি জি তথা সুশাসন, সুনীতি, সু-সরকার,(3g-good government, good governance, good policy) রেইনবো ন্যাশন বা রংধনুজাতি(সকল মত ও পথের মানুষকে নিয়ে জাতি গঠন),ব্লু ইকোনমি ও জনগনের বাংলাদেশের মালিকানা জনগনের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার যে পরিকল্পনা ঘোষনা করেছিলেন তা বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনো দলের কাউন্সিলে খুব কমই দেখা গেছে, যা ঐ সময়ে ছিল টক অব দি কান্ট্রি।এছাড়া ব্রিটেনের বিরোধী দলের মত shadow govt.বা ছায়া সরকারের আদলে বিএনপির মন্ত্রনালয় ভিত্তিক দলীয় দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তটিও খুব চমৎকার।আশা করি এই কাজটিও বিএনপি বাস্তবায়ন করবে দ্রুত। একনেতার একপদ দলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।এটাও বাস্তবায়ন জরুরী।সফল হয়েছে এক কোটি নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান।এত খারাপ সময়েও বিএনপি বন্যায় হাওরে,উত্তরবঙ্গে,পাহাড় ধ্বসে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে সামর্থ্যানুযায়ী বার বার।বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট,মাথাপিছু আয় পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার,প্রবৃদ্ধির হার দুই অংকে নিয়ে আসা,উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত করা,গণ ভোট প্রবর্তন, ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠা,চাকরীতে কোটা যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসা,ডাকসুসহ সকল ছাত্রসংসদে নিয়মিত নির্বাচন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়ন সম্ভলিত রাষ্ট্রীয় কাঠামো পূর্নগনে বিএনপির রুপকল্পটিও যথেষ্ট ইতিবাচক পরিকল্পনা হিসাবেই মানুষ গ্রহণ করেছিল। সেই রুপকল্পের এক্সটেনশনই হচ্ছে আজকের বিএনপির রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা।
আট.
একটি রাজনৈতিক দলের সফলতা শুধুমাত্র রাষ্ট্রপরিচালনার উপর নির্ভর করেনা বিরোধী দল হিসাবে দায়িত্বশীল ভূমিকার উপরও নির্ভর করে।বিএনপি এক্ষেত্রে খুব বেশি একটা ভুল করেছে বলে আমি বিশ্বাস করিনা।আসলে সময় খারাপ হলে বিএনপিকে নিয়ে সমালোচনার টেবিলে বুদ্ধিজীবীর কোন অভাব হয়না।তিন প্রজন্মের রাজনীতিতে পয়তাল্লিশ বছরে বিএনপির অর্জন বহুদলীয় গনতন্ত্র, মানবাধিকার, মুক্তবুদ্ধির চর্চাকে প্রমোট করা,মুসলিম বিশ্বের সাথে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন, উন্নয়ন আর উৎপাদন।চলমান গনতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনেও বিএনপি নজির বিহীন সংগ্রাম করেছে।অসংখ্য ইলিয়াস আলীকে গুম করা হয়েছে!জনি,বাপ্পী, নুরু,নুরে আলম আর শাওনের রক্তে রাঙ্গা আজ বাংলাদেশের রাজপথ, মুক্তির কাফেলা!অসংখ্য অগণিত মামলা নিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মী আজ কারাগারের অন্ধকার সেলে!কেউ কেউ ঘর সংসার ছেড়ে ফেরারী আসামী!কেউ ভয়ে এলাকা ছাড়া!শারীরিক পঙ্গুত্ব নিয়েও কেউ কেউ মুক্তির অপেক্ষায়!মানুষ এখন আর শুধু ব্যক্তির পরিবর্তন চায়না,চায় নোংরা সিস্টেমের পরিবর্তন!বিএনপি আগামীদিনে জনগনের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য দুর্নীতি দুঃশাসনের সিস্টেম পরিবর্তনের রাজনীতি করছে।আর অতীতমুখী নয় বর্তমান বাস্তবতার সাথে মিল রেখে ভবিষ্যৎ মুখী রাজনীতিই করছে বিএনপি।এই লড়াইয়ে বিএনপির আপোষহীন প্রজন্মের বিজয় অনিবার্য ইনশাআল্লাহ।বাকশালের হাত থেকে গনতন্ত্রকে মুক্তি দিয়েছে বিএনপি।এরশাদের সামরিক স্বৈরশাসন থেকেও মূল লড়াইটা বিএনপিকেই করতে হয়েছে।লড়তে হয়েছে ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দীনের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধেও!অনেক রক্ত জীবন লাশের পথ পেরিয়েই এগিয়ে চলছে বিএনপির কাফেলা।বিএনপির ইতিহাসে হয়ত সবচেয়ে খারাপ সময় মোকাবেলা করছে এখন,তবে এটাও সত্য এই লড়াইয়ে দেশবাসীর হৃদয়ের মনিকোঠায় বিএনপির জায়গায় এখন অনেক বেশি আস্থা ও বিশ্বাসের।২০০৮,২০১৪,২০১৮ সালে বাংলাদেশে নির্বাচনের নামে গনতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে।বিএনপি নির্বাসিত গনতন্ত্র ও বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির জন্যই আপোষহীন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।রাজনৈতিক দল হিসাবে রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণে গত পয়তাল্লিশ বছরে জনগণের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে বিএনপির অর্জন বিস্ময়করই বটে।মানুষ ভোট দিতে পারলে যেকোনো সময়ের নির্বাচনে বিএনপি আবারও ক্ষমতায় আসবে।
লেখক :
রাজনৈতিক বিশ্লেষক