বাংলাদেশের রাজনীতির শর্ট সার্কিট এবং বহুবিধ শঙ্কা

মেজবাহ হোসেন: আসছে বছর ৭ জানুয়ারির পানে নির্বাচনের বুলেট ট্রেন ক্রম অগ্রসরমান। তবে এই নির্বাচন যে জাতিকে স্বস্তি দেবে না তাতে কোনো সন্দেহ নেই। নির্বাচনটি হতে পারত ১৯৯১ সালের মতো একটি স্বতঃস্ফূর্ত, অংশগ্রহণমূলক ও তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক; প্রতিষ্ঠিত হতো জাতীয় ঐক্য, শান্তি ও সমৃদ্ধি। দেশ, অর্থনীতি ও জনজীবন দেখা পেতে এক নতুন সকালÑ নতুন সম্ভাবনার হাতছানি। সারাদিন ভোট উৎসব শেষে সন্ধ্যা থেকেই মানুষ ভিড় করে এঁটেসেঁটে বসত টেলিভিশনের সামনে।

এক একটি আসনের ফলাফল জরিপ/ ঘোষণা ও টানটান উত্তেজনা শেষে মধ্যরাতে বিজয়ী পক্ষের আতসবাজির শব্দে ঘুম ভেঙে মানুষ জানত যে কে হতে যাচ্ছে তাদের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু বিধি বাম। ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ পণ্ড করে দিয়ে সেই দিন থেকেই দলটিকে সরকার ক্র্যাকডাউন করা শুরু করে। রাজপথে দলটির জনসম্পৃক্ততা দেখে সরকার কোনো ঝুঁকি নেয়ার সাহস করতে পারেনি, তাই এই জনঢল যাতে রুদ্রমূর্তি লাভ না করতে পারে সেই লক্ষ্যে বিরোধী পক্ষের মাঠের প্রধান নেতাকে পর্যন্ত জেলে নিয়ে বুঝিয়ে দেয়া হলো হয় জেল না হয় পলাতক জীবনেই যেতে হবে বিরোধী সবাইকে। মাঝখানে শুধু জামিন সুখের আশায় দুই একজনের রাজনৈতিক পরকীয়ার জেরে পুরোনো ঘর ভাঙা। লাভ ক্ষতির অঙ্কে তাহলে কে এগিয়ে গেল আর কে পিছিয়ে পড়ল? আওয়ামী লীগ কি সত্যিই জিতে গেল? না, একেবারেই না। এই নীতিহীন খেলায় আওয়ামী লীগ শুধু তার নীতির বিসর্জনই দেয়নি, বরং রাজনৈতিকভাবে মৃত্যুবরণ করেছে। শেখ হাসিনা আজীবন (আমৃত্যু) প্রধানমন্ত্রিত্বের যে ফর্মুলা হাতে নিয়েছে তাতে উনি হয়তো জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে চলে গেছেন কিন্তু যার প্রার্থিতা কাইট্টা দিয়া উনি জনাব ওমর সাহেবকে আওয়ামী লীগে বরণ করে নিলেন বা সাকিব, মাশরাফি ও ফেরদৌসের আসনে যেসব আওয়ামী লীগ নেতা আছেন (যেমন মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক) তারা কি শেখ হাসিনার মতো জবাবদিহিহীনতার ইনডেমনিটি ভোগ করতে পারবে এই শাসন অবসান হওয়ার পরে? না হোক বিএনপি না হোক জামায়াত, কোনো না কোনো পক্ষের কাছে তো তাদের আমলনামা অনুযায়ী বিচারের মুখোমুখি হতেই হবে। তাহলে তারা কী পেল? আর যদি কিছু নাই পায় তবে তারা কী বংশ পরম্পরায় আওয়ামী লীগ করে যাবে? বিপরীতে বিএনপি হয়তো আজ জেলে বন্দি হয়ে গেল কিন্তু জনমনে এই দলটির জন্য যে আবেগ, ভালোবাসা, সহানুভূতি বা সমর্থন জš§ নিল সেটা কি আদর্শ ও নৈতিকতার প্রশ্নে বিএনপিকে বহুগুণ এগিয়ে রাখল না? রাজনীতিতে নীতি বা আদর্শের থেকে বড় দ্বিতীয় কোনো পুঁজি আছে বলে জানা নেই। বিশ্ব রাজনীতিতে পরাক্রমশালী আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে দুটি বড় পরাজয় হলো ভিয়েতনাম যুদ্ধ ও আফগানিস্তান যুদ্ধ। এই দুটি যুদ্ধে দীর্ঘদিন (২০ বছর করে) লড়াই করতে করতে আমেরিকা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল শুধু দেশ দুটির সাধারণ মানুষের নীতি ও আদর্শিক শক্তির কারণে। তো যেদিন এই ফ্যাসিবাদ বা বাকশাল ২.০ শাসনের অবসান হবে সেই দিন হয়তো অনেক গবেষকই নতুন করে কলম ধরবে, এই ফ্যাসিবাদের চরিত্র বিশ্লেষণ করে একটি অবয়ব দেয়ার চেষ্টা করবে। আর সেদিন তারা হয়তো যেই বড় ভুল থেকে এই ফ্যাসিবাদের জš§ সেই ভুল হিসেবে বিডিআর বিদ্রোহকেই চিহ্নিত করবে।

আজকে আমেরিকা যখন তার ভুল শুধরে বাংলাদেশের গণমানুষের চাওয়ার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করে যাচ্ছে, তখন বাংলাদেশের নির্বাচনকে দেশটির অভ্যন্তরীণ (মূলত সরকারের) বিষয় হিসেবে অভিহিত করা ভারতের চরম উপহাস। বাংলাদেশের নির্বাচন যদি সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় হয়ে থাকে তাহলে প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশের একজন সাবেক সেনাপ্রধানের চাকরির নিশ্চয়তা দিয়েছিল কীভাবে? ২০১৪ সালে সুজাতা সিং এরশাদ সাহেবকে কীভাবে বলেছিল যে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ না নিলে মৌলবাদীরা বাংলাদেশের ক্ষমতায় চলে আসবে। কেনই বা শ্রীরাধা দত্ত ও সুবীর ভৌমিকরা শেখ হাসিনার পক্ষে কলম ধরেছে বা ভারত শেখ হাসিনার পক্ষে ক্রমাগত দূতিয়ালি করেই যাচ্ছে? ভারত অল্পকিছু সময় কিছুটা নীরব থাকলেও সম্প্রতি তার চরিত্রে আবির্ভূত হয়েছে। আবার বিএনপি ও তার চুপ থাকা নীতি থেকে সরে এসে দেরিতে হলেও ভারতের বিপক্ষে কথা বলা শুরু করেছে। এই নীরবতা বিএনপির অনেক আগেই ভাঙা উচিত ছিল। দল ও দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অবস্থান নেয়ায় ভারতের প্রতি শক্ত ভাষায় উদ্বেগ প্রকাশ করা তাদের আবশ্যক কর্তব্য কারণ ভারতের বিপক্ষে যারা একটি শক্তিশালী ও আত্মমর্যাদাশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় তারাই বিএনপি ও জামায়াত ইসলামকে সমর্থন করে ও ভোট দেয়। আয়তন বিবেচনায় বাংলাদেশ যেমনই হোক, ২০ কোটি জনসংখ্যার এই দেশে সাধারণ মানুষের চিন্তাচেতনা, সেন্টিমেন্ট বা অনুভূতিকে উপেক্ষা করে ভারতের সামনে আগানোর সুযোগ নেই। মালদ্বীপের মতো একটি ক্ষুদ্র জনসংখ্যার দেশে যদি শুধু ভারত বিরোধিতার কারণেই মোহাম্মদ মুইজ্জু চুয়ান্ন শতাংশ ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তাহলে ভারত বাংলাদেশের মানুষকে অসম্মান করার কারণে সময়ের পরিক্রমায় বাংলাদেশ হয়তো সেভেন সিস্টার্সের দিকে মনোযোগ দিতে পারে। আর এমনটি হলে দাঁতের ব্যথায় ভারতের পুরো শরীর অবশ হওয়ার উপক্রম হবে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়; সঙ্গে আরও আছে অরুণাচল, আকসাই চীন, কাশ্মীর, শিখ আন্দোলন ও সংখ্যালঘুদের জাতিগত অসন্তোষ। খুব সম্প্রতি ভারতের-র কর্তৃক কানাডিয়ান দুইজন শিখ নাগরিক হত্যা এবং যুক্তরাষ্ট্রের একজন শিখ নাগরিক হত্যার ব্যর্থ চেষ্টা ভারতকে আন্তর্জাতিকভাবে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। উগ্র জাতীয়তাবাদী বিজেপি হয়তো আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে জনসমর্থন টানতেই এমন লোক দেখানো নীল নকশা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের চেষ্টা করে যাচ্ছে, কারণ ওদের দেশে ইলেকশন রিগিং করে দিনের ভোট রাতে করা সম্ভব নয়। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ তার গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্বের ওপর বহিঃস্থ হস্তক্ষেপ নিয়ে ১৫ বছর টিকে থাকলেও ভারত তার একগুচ্ছ ভূরাজনৈতিক সংকট নিয়ে বিপদে পড়লে সেগুলো কীভাবে মোকাবিলা করবে? তাই বাংলাদেশ ছেড়ে শ্রীরাধা ও সুবীর ভৌমিক গংরা এই বিষয় নিয়ে ভাবলে আখেরে তাদের জন্যই মঙ্গল।

রাষ্ট্র গঠনে রাজনীতিবিদদের চরিত্র ও কর্মকাণ্ড খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রাষ্ট্রকে একটি পরিবার কল্পনা করলে রাজনীতিবিদরাই  রাষ্ট্রের মাতা-পিতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় আর জনগণ অনেকটা সন্তান সন্ততির ভূমিকায় চলে যায়। সন্তানকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য বাবা-মায়ের উচ্চশিক্ষা থাকা আবশ্যিক নয়; কিন্তু মূল্যবোধ, রীতিনীতি, ধর্মীয় ও সামাজিক শৃঙ্খলা বোধ এবং ভালো মন্দের পার্থক্য করার ক্ষমতা থাকা জরুরি। কেবল তখনই সন্তানদের তারা সঠিক পথ চিনিয়ে দিতে পারে। অনুরূপভাবে রাজনীতিবিদদের সততা, দেশপ্রেম, একাগ্রতা, নিষ্ঠা, আইনের শাসন বা সুশাসনের প্রতি অঙ্গীকার ধীরে ধীরে নাগরিকের মাঝে সঞ্চালিত হয়। এর অনেক উদাহরণ আছে যেমন ভারতের উগ্র জাতীয়তা রাজনীতি থেকে তার নাগরিকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে অথবা এককালের উগ্র জাপান ও জার্মানির মতো দেশ বর্তমান বিশ্বে সব থেকে বিনয়ী আর শৃঙ্খলিত জাতিতে পরিণত হওয়া বা একই সঙ্গে স্বাধীনতা লাভ করা উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার বর্তমান চেহারা। বাংলাদেশের ইতিহাসেও এর উদাহরণ আছে; ৭২ থেকে ৭৫ সালের লুটেরা, কালোবাজারি,  সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী, রক্ষী বাহিনী, হত্যা, গুম, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রেসিডেন্ট জিয়ার সময়ে হঠাৎ উধাও হয়ে গেল কীভাবে? সামরিক বিশৃঙ্খলা দমনে উনি ইস্পাত কঠিন হলেও সিভিলিয়ান নৈরাজ্য দমনে তো তেমন কোনো বল প্রয়োগ করেননি। আবার শেখ হাসিনা যেভাবে বলে ‘লাশের বদলে লাশ চাই বা ওই হাত ভেঙে ফেলা হবে’, ঠিক একই ভাবে ছাত্রলীগ নেতা বলে মাইরের ওপর ওষুধ নাই। একই মনোভাবের কারণে ওসি ডিসিরা প্রকাশ্যে নৌকায় ভোট চায় বা সচিবরা আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে।

শেখ হাসিনা ভুল খেলার মাধ্যমে যে শুধু রাজনীতির ক্ষতি করেছেন বিষয়টা এমন নয় বরং বিভিন্ন পেশাজীবীদের মধ্যে লোভ লালসা ঢুকিয়ে দিয়ে তাদের পেশাদারিত্বকে নষ্ট করে ফেলেছেন। ভারতের নোংরামির কারণে তাদের প্রতি আমার যেমন ঘৃণা বিদ্বেষ আছে বিপরীতে তাদের ভালো কাজগুলো আমাকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করে। ওদের রাজনীতিবিদরা মোটা দাগে দেশ ও জনগণের প্রতি তাদের দায়িত্ব কর্তব্য সঠিকভাবে পালনে সক্ষম হয়েছে যার দরুন ওরা শতফুল ফোটাতে পেরেছে, যেটা আমরা পারিনি। যেমন ভারতের বিজনেস কিং আদানি ও আম্বানীদের কে রাজনীতিতে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে হয়নি কিন্তু আমাদের সালমান সাহেব সরাসরি রাজনীতিতে এসেছে, সরকারে বসে সরকারের সাথেই ব্যবসা করছে (করোনা টিকা কেনা)। ভারতের ফিল্ম কিং শাহরুখ বা সালমান খান; ক্রিকেট কিং মহেন্দ্র ধোনি, সৌরভ গাঙ্গুলি; মিউজিক কিং কুমার শানু বা উদিত নারায়ণদের এমপি এমএলএ হওয়ার জন্য রাজনীতিতে আসতে হয়নি; আবার রাজনীতিও কখনও তাদের উপরে ওঠার পথে বাধা সৃষ্টি করেনি। ওদের অধ্যাপকরা নিরলস পরিশ্রম করে আইআইটিগুলিকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে পেরেছে। নিজের জগতে যিনি যোগ্যতা ও দক্ষতা বলে কিং হতে পেরেছেন রাজনীতিতে এসে তার কিং হওয়ার তো কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু আমাদের ভুল রাজনীতির কারণে নায়ক, গায়ক, ক্রিকেটার, ডাক্তার, অধ্যাপক সবাই তাদের নিজেদের কিংডম ছেড়ে এসেছে রাজনীতিতে কিং হবে বলে (কেন এসেছে সেটা সামাজিক গবেষণার বিষয়)। ২৫-৩০ বছর বয়সে একজন মানুষ যখন কর্মজীবনে প্রবেশ করে তারপর ১৫ থেকে ২০ বছর সময় অতিবাহিত হওয়ার পরে তিনি ওই বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠতে পারেন আর সব থেকে মেধাবী বিশেষজ্ঞরাই হয়ে ওঠে কিং। ক্রিকেটার মাশরাফি ও সাকিব আল হাসান যে সময় কিং হয়ে ওঠার কথা ঠিক সেই সময় ওরা হলো এমপি। তাহলে ক্রিকেটের হাল কে ধরবে বা ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ কী? মাশরাফি ও সাকিব তাদের দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্যময় জীবনে যে অভিজ্ঞতা ও বাস্তব শিক্ষা অর্জন করেছে সেগুলো কি পরবর্তী ক্রিকেট জেনারেশনের মধ্যে প্রবাহিত হবে? আর যদি না হয় তাহলে এই ক্ষতি কার, আর এর দায়ভার কার? অনুরূপভাবে দুই বাংলায় সমানভাবে জনপ্রিয় নায়ক ফেরদৌস যখন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির একজন লিডার বা কিং হয়ে উঠতে পারত সেও তখন এমপি হয়ে গেলে। একজন সাবেক পুলিশ প্রধানের হওয়ার কথা ছিল অপরাধ বিশেষজ্ঞ যে অবসরে দেশ ও রাষ্ট্রে কোন কোন অপরাধের ঝুঁকি আছে সেগুলো নিয়ে গবেষণা করতে পারত, সরকারকে পরামর্শ দিতে পারত তদনুযায়ী। একজন সাবেক জেনারেল যার হওয়ার কথা ছিল নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, কিন্তু সবাই মিলেমিশে এখন শুধুই এমপি। হƒদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেবি শেঠি পুরো পৃথিবীর কাছে একজন ইনস্টিটিউট অথচ আমাদের প্রাণ গোপাল দত্ত যখন নাক কান গলার বিষয়ে একজন সত্যিকার অর্থেই কিং হতে পারত তখন সেও হলো এমপি। চিকিৎসা সেবায় ভারত যেখানে রোগীদের কাছে আস্থার মূর্ত প্রতীক হয়ে উঠেছে, সেখানে আমাদের বিএসএমএমইউ ও ঢাকা মেডিকেল হয়ে উঠেছে দালালদের অভয়াশ্রম। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যেখানে কয়লা চুরি, গরুপাচার ও চাকরি জালিয়াতি (এসএসসি) মামলায় ক্ষমতাসীনদের নাকানিচুবানি খাওয়ায় সেখানে আমাদের বিচারক কাম শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদেরা বসে বসে গণতন্ত্রের নতুন নতুন সংজ্ঞা ও শর্ত আবিষ্কার করে। ভারতীয় তরুণেরা যখন সিইও হয়ে ভারত মাতার মুখ উজ্জ্বল করে, বহির্বিশ্বে ভারতের সক্ষমতার পরিচয়কে তুলে ধরে তখন আমাদের তরুণেরা বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে কোনো এক ব্যক্তি বিশেষের স্বপ্ন পূরণে নিজেদের যৌবনকে বলি দিতে ব্যস্ত। সুতরাং উল্লেখিত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে এ কথা বলাই যায় যে রাজনীতি কোনো ছেলের হাতের মোয়া নয়। রাজনীতির সমীকরণে জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, দূরদৃষ্টি, সতর্কতা আর দেশপ্রেম হলো খুবই স্পর্শকাতর চলক। ব্যক্তিস্বার্থ, ক্রোধ, লালসা, বিকৃত মানসিকতা যদি সেই সমীকরণে চলকের আসন লাভ করে তাহলে রাজনীতিতে যে শর্ট সার্কিট ঘটবে তা যেকোনো রাষ্ট্রের ভাগ্যেই সিরিয়ার পরিণতি বয়ে আনবে; আর এমনটা হলে সেই অগ্নিস্ফুলিঙ্গের হাত থেকে পড়শির ঘরও রক্ষা পাবে না। [লেখায় প্রকাশিত মত লেখকের নিজস্ব]

 

শিক্ষক, রসায়ন বিভাগ, হাবিপ্রবি (যুক্তরাষ্ট্র থেকে)