বাংলাদেশে বিনিয়োগে আস্থা আছে ৭০ শতাংশের বেশি জাপানি বিনিয়োগকারীর 

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি বলেছেন, জেট্রো-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাপানি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে বিনিয়োগে আস্থা ও সম্প্রসারণের বিষয়ে মতামত দিয়েছেন, যা অত্যন্ত ইতিবাচক। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) কর্তৃক স্থাপিত ওএসএস সেন্টারের প্রথম আঞ্চলিক কেন্দ্র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গতকাল মঙ্গলবার তিনি এ কথা বলেন। রাষ্ট্রদূত বলেন, সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্থার জটিল প্রক্রিয়াকে সহজীকরণে ওএসএস কেন্দ্রীয় এবং আঞ্চলিক কেন্দ্র নিঃসন্দেহে ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোনে প্রথম আঞ্চলিক ওএসএস কেন্দ্র স্থাপনের জন্য তিনি বেজাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাইকা বাংলাদেশের চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ তমাহিদে ইচগুচি এবং বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারো কাউয়াচি।

বেজা বলছে, দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শিল্প স্থাপন করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর থেকে বিভিন্ন বিষয়ে অনুমোদন গ্রহণ করতে হয়। এসব অনুমোদন গ্রহণ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে বিনিয়োগকারীদের জন্য ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ প্রদানের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, যার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট স্থান থেকে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ-সংক্রান্ত সব ধরনের সেবা প্রদান করা যাবে। সে উদ্দেশ্যে বেজার উদ্যোগী ভূমিকায় ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস আইন, ২০১৮’ পাস করা হয়। এ আইনের আওতায় ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ) বিধিমালা, ২০১৮’ জারির ফলে বিনিয়োগকারীদের সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাসময়ে সেবা প্রদানের বাধ্যবাধকতার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। জাইকার কারিগরি সহায়তায় ২৭টি ক্যাটেগরির ১২৫টি সেবা ওএসএস সেন্টার থেকে দেয়া হচ্ছে, যার মধ্যে ৫৩টি অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের কোন সেবা কত দিনের মধ্যে দিতে হবে, তা স্টান্ডার্ড প্রসিডিউর (এসওপি) দিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে জাপান সরকারের টেকনিক্যাল অ্যাসিসটেন্স প্রকল্পের আওতায় আঞ্চলিক ওএসএস সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। আঞ্চলিক ওএসএস সেন্টার স্থাপনের ফলে বিনিয়োগকারী ও ডেভেলপার উভয়েই জোন থেকেই প্রয়োজনীয় সেবা নিতে পারবেন, যা সেবা প্রদান প্রক্রিয়ায় গুণগত পরিবর্তন আনার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত ও কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করবে। পর্যায়ক্রমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরসহ সব অর্থনৈতিক অঞ্চলের আঞ্চলিক ওএসএস সেন্টার স্থাপনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।

অনুষ্ঠানে জাইকার চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোনে প্রথমবারের মতো আঞ্চলিক ওএসএস সেন্টার স্থাপনের জন্য বেজা, জোন কর্তৃপক্ষ এবং জাইকার সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে এবং প্রতিদিনই উন্নয়নের পট পরিবর্তন হচ্ছে, যা সত্যিই অসাধারণ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের দূরদর্শী পরিকল্পনায় পরিবহন ও যোগাযোগ ছাড়াও সব খাতে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করেছে এবং এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশা করেন।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, আঞ্চলিক ওএসএস কেন্দ্র স্থাপন বেজার জন্য একটি মাইলফলক। তিনি আরও বলেন, ওএসএস কেন্দ্র ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলে স্থাপন করা হবে। তিনি আরও বলেন, এর ফলে বিনিয়োগকারীরা সব সেবা সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকেই গ্রহণ করতে পারবেন। তিনি বলেন, সরকারি সেবা প্রদান এরই মধ্যে বিভিন্ন সংস্থায় বিকেন্দ্রীকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে এবং বেজাও এটি অব্যাহত রাখবে। কারিগরি প্রকল্প অব্যাহত করার মাধ্যমে ওএসএস সেবা প্রদানের জন্য তিনি জাইকা ও জাপান সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

অনুষ্ঠানে বেজা’র আওতায় ‘জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’-এর মাধ্যমে ভূমি উন্নয়ন সম্পন্ন হওয়া ৮৮ একর ভূমি বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোনকে হস্তান্তর করা হয়, যা পরবর্তী সময় বিনিয়োগের জন্য বরাদ্দ দেয়া হবে। উল্লেখ্য, ফেজ-১-এর মাধ্যমে প্রায় ২০০ একর ভূমি এর আগে বিএসইজেড’কে হস্তান্তর করা হয়েছে।