নিজস্ব প্রতিবেদক: অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বিনিয়োগ তুলনামূলক বেশি সাশ্রয়ী, আকর্ষণীয় ও নিরাপদ। এখানে রয়েছে প্রচুর সুযোগ-সুবিধা। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ চলছে, বিনিয়োগও আসতে শুরু করেছে। এসব দিক বিবেচনায় অন্যান্য দেশকেও এখানে বিনিয়োগের আহ্বান জানান দেশের বিশিষ্টজনেরা।
গতকাল রোববার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র আয়োজনে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক বিজনেস সামিটে এ আহ্বান জানান তারা। গতকাল ছিল বাংলাদেশ বিজনেস সামিটের দ্বিতীয় দিন। ব্যবসায়িক ধারণা আদান-প্রদান ও পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে এ সামিটের আয়োজন করে এফবিসিসিআই।
গত শনিবার সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তিন দিনব্যাপী এ শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই দিন সামিটের অন্যতম আকর্ষণ ‘বেস্ট অব বাংলাদেশ এক্সপো’র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ উৎপাদন ব্যবস্থায় দক্ষতা আনার চেষ্টা করছে। ৬০ বিলিয়ন থেকে ২০৩১ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে সরকার। সরকারের নানা উদ্যোগের কারণে বর্তমানে
ভালো বিনিয়োগ পরিবেশ রয়েছে। পাওয়ার সেক্টরের জন্য আমরা এরই মধ্যে কাতার ও সৌদি আরবের সঙ্গে কাজ করছি। গ্যাসের সমস্যা সমাধানে অভ্যন্তরীণ উৎসকেও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
অনুষ্ঠানের প্রথম সেশনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, সরকার সব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বিনিয়োগবান্ধব করে। চীন, কোরিয়া, জাপান এরই মধ্যে আমাদের অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করেছে। আমাদের ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজও এগিয়েছে। বিডা অলরেডি ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করেছে। ডিসিপ্লিন এসেছে ই-কমার্স খাতে। ১০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগে কাজ করছে দেশ। এ বিনিয়োগে আমাদের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করছে এফবিসিসিআই।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ-বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, ইকোনমিক জোন এবং বিনিয়োগকারীদের সুযোগ-সুবিধা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চেয়ে সাশ্রয়ী ও নিরাপদ বিনিয়োগ পরিবেশ রয়েছে আমাদের এখানে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের এখানে বিনিয়োগ করলে ৪৭ থেকে ৮৪ শতাংশ শ্রমিক খাতে সাশ্রয় হবে, ম্যানেজারস স্যালারিতে সাশ্রয় হবে ৪১ থেকে ৬৯ শতাংশ পর্যন্ত। এছাড়া ছয় থেকে ৮৯ শতাংশ সাশ্রয় হবে পানিতে, বিদ্যুতে সাশ্রয় হবে ১০ থেকে ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত।
একই সঙ্গে দুর্নীতির বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারপ্রধান এ বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। কোনো ধরনের অনিয়মকে আমরা ছাড় দিই না। আমাদের অবকাঠামো উন্নয়নসহ নানা সুবিধা রয়েছে। সব দিক বিবেচনায় বলতে পারি আমাদের দেশে আপনার বিনিয়োগ হবে নিরাপদ।
এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি হামীম গ্রুপের চেয়ারম্যান এ কে আজাদ বলেন, বিশ্বে এখন ম্যানমেইড ফাইবারের চাহিদা বাড়ছে। শ্রমবাজার ক্রেতারা তাদের ম্যানমেইড ফাইবার পণ্য চায়, এ খাতে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এফবিসিসিআই’র এমন সংলাপ থাকলে ১০০ বিলিয়নের ডলারের বিনিয়োগ আরও সহজ হবে। আমাদের দেশে ভালো জব মার্কেটে আছে, যেটা অন্য দেশের চেয়ে সাশ্রয়ী। ইকোনমিক জোনে নন-স্টপ সার্ভিস শুরু হয়েছে। অতএব এ দেশে নিরাপদে বিনিয়োগ করতে পারেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, আমাদের মেগা প্রজেক্ট ঘিরে অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে। পদ্মা সেতু, টানেল, পায়রা সেতুসহ আরও অনেক উন্নয়ন হয়েছে বিনিয়োগ-ব্যবসাকে সহজ করতে। বিশ্বের মধ্যে সবুজ কারখানায় সবচেয়ে বেশি আমাদের দেশে। বিশ্বের সবচেয়ে ক্লিন সবুজ কারখানাটিও আমাদের দেশে। নিরাপদ কর্মপরিবেশ রয়েছে আমাদের, আসুন আমাদের এখানে, সব সুবিধা রয়েছে, বিনিয়োগ করুন। দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্ববহ এ দেশ, এখানে প্রচুর ফ্যাসিলিটি রয়েছে। তিনি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
আয়োজিত সামিটে যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, চীন, ভুটান, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ সাতটি দেশের মন্ত্রী, ১২টি বহুজাতিক কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ১৭টি দেশের ২০০টির বেশি বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিনিধি এবং ব্যবসায়ী নেতারা অংশ নিয়েছেন। প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর উদ্যাপন উপলক্ষে সামিটের আয়োজন করেছে এফবিসিসিআই।
এফবিসিসিআই ৫০ বছরে অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অর্জন এবং রপ্তানি ও স্থানীয় ভোক্তা বাজারের পাশাপাশি বিনিয়োগ সক্ষমতা বিদেশিদের কাছে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছে। বাংলাদেশ বিজনেস সামিটে এফবিসিসিআইয়ের অংশীদার হিসেবে কাজ করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বিডা। বিভিন্ন কৌশলগত বিষয়ে তিনটি প্লেনারি সেশন, ১৪টি প্যারালাল সেশন, বিজনেস টু বিজনেস মিট, নেটওয়ার্কিং সেশন, একটি ওপেন হাউস রিসেপশন ও আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের জন্য গাইডেড ট্যুর রয়েছে এ সামিটে।