ড. মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা: একটি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক কার্যাবলির ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য দেশীয় আয়ের পাশাপাশি বৈদেশিক ঋণ বা সহায়তা প্রয়োজন হয়। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের দেশটি ১৯৭১ সালে নাম লেখায়। সদ্য স্বাধীন দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন ও অর্থনীতির গতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে বৈদেশিক সাহায্য ও ঋণের প্রয়োজন হয়। ১৯৭২ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণের প্রবৃদ্ধি এবং জিডিপির তুলনায় এর প্রবৃদ্ধি তুলে ধরা হলো।
বৈদেশিক ঋণ: বৈদেশিক ঋণ হলো একটি সরকার, করপোরেশন বা ব্যক্তিগত পরিবারের দ্বারা অন্য দেশের সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা বা বেসরকারি ঋণদাতাদের কাছ থেকে ধার করা অর্থ। বৈদেশিক সহায়তা হতে পারে ঋণ বা অনুদান বা খাদ্য সাহায্য। ঋণ আবার বিভিন্ন ধরনের হয়, যথা অনমনীয়, নমনীয় ঋণ এবং সরবরাহকারীর ঋণ। বৈদেশিক সহায়তা সাধারণত সুনির্দিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যয় করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে প্রচলিত মানরীতি অনুযায়ী বৈদেশিক ঋণ বলতে কেবল রেয়াতি শর্তাবলিতে প্রাপ্ত ঋণ ও দান বোঝায়।
বৈদেশিক ঋণের ইতিহাস: বৈদেশিক ঋণের ইতিহাস বেশ পুরোনো। সভ্যতার শুরুতে বিশেষত গ্রিস ও রোমের শাসকরা বিভিন্ন জাতি বা নগররাষ্ট্র থেকে তখন অর্থ ধার করতেন। মধ্যযুগে ইউরোপীয় রাজা ও বণিকরা ইতালির ব্যাংকারদের কাছ থেকে অর্থ ধার করতেন। ঔপনিবেশিক যুগে ইউরোপে যারা ক্ষমতাশালী ছিলেন তারা সরকার ও বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নিতেন তাদের বৈদেশিক মিশন সফল করার জন্য। উনবিংশ শতাব্দীতে শিল্প বিপ্লবের ফলে রাষ্ট্রগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ ও আধুনিকায়নের জন্য অর্থের প্রয়োজন হয়। যার ফলে ঋণ গ্রহণ ও প্রদানে নতুন যুগের সূচনা হয়। বিংশ শতাব্দীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পুনর্গঠন ও উন্নয়নে বৈদেশিক ঋণ বড় ধরনের ভূমিকা পালন করে। ১৯৪৮ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রম্যান অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার আইনে সই করেন, যা পরবর্তী সময়ে মার্শাল প্ল্যান নামে পরিচিতি লাভ করে। মার্শাল নামটি তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট জর্জ মার্শালের নামানুসারে রাখা হয়, যিনি ১৯৪৭ সালে প্রথম এ প্রস্তাব পেশ করেন। এ মার্শাল প্ল্যানের অধীনে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো তাদের অর্থনীতি পুনর্গঠনে ব্যাপক ঋণ গ্রহণ করে। পরবর্তী সময়ে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো উন্নত দেশ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক দেশ থেকে তাদের উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যাপক ঋণ নেয়। (সূত্র: ড. শামসুল আলম, বণিক বার্তা, ৫ ফেব্রয়ারি ২০২৩)
এক সময় প্যারিস কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে উন্নত দেশগুলো বাংলাদেশকে ঋণ দিত। প্রতি বছর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বৈঠক বসতেন দাতা দেশগুলোর প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী ওই সব বৈঠকে নিজেদের চাহিদার কথা জানাতেন। দাতারাও নানা শর্তে ঋণ দিত। তখন ওই সব দাতাদের নিয়ে যে জোট তৈরি হয়েছিল, তাকে প্যারিস ক্লাব হিসেবে ডাকা হতো। ২০০২ সাল পর্যন্ত প্যারিস কনসোর্টিয়ামের অস্তিত্ব ছিল। এরপর বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরাম (বিডিএফ) গঠিত হয়। বহু বছর পর আইএমএফের প্রতিবেদনে প্যারিস ক্লাবের কথাটি এসেছে। সেই ঋণের পালা এখনও চলছে। সেখানে বলা হয়েছে. জাপান, রাশিয়াসহ প্যারিস ক্লাবের সদস্যভুক্ত দেশগুলোর কাছে বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৫৫১ কোটি ডলার। অন্যদিকে প্যারিস ক্লাবের সদস্য নয়, এমন দেশগুলোর কাছেও বাংলাদেশের বড় অঙ্কের ঋণ আছে। এর পরিমাণ ৬১৬ কোটি ডলার। চীন ও ভারতের মতো দেশ হলো নন-প্যারিস ক্লাবের সদস্য। ভারতের কাছে বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ ১০২ কোটি ডলার। সূত্র: প্রথম আলো, ৪ ফেব্রয়ারি ২০২৩।
বৈদেশিক ঋণ সহায়তা: বিশ্বের বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় (ইরষধঃবৎধষ) এবং বহু পাক্ষিক (গঁষঃরষধঃবৎধষ) উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাংলাদেশ বৈদেশিক সহায়তা সংগ্রহ করে থাকে। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আডিবি, ইউএন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রভৃতি বহু পাক্ষিক এবং রাশিয়া, জাপান, চীন, সৌদি আরব, ভারত প্রভৃতি দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগী অন্যতম। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ঋণ স্থিতি রয়েছে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ১ হাজার ৮১৬ কোটি ডলার। বিশ্বব্যাংকের পরে সবচেয়ে বেশি ঋণ রয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ১ হাজার ৩২৮ কোটি ডলার। এরপর আছে যথাক্রমে জাপান, রাশিয়া ও চীন। জাপানের ৯২৩ কোটি, রাশিয়ার ৫০৯ কোটি এবং চীনের ৪৭৬ কোটি ডলার। আই এমএফের কাছে ঋণের পরিমাণ ৯৮ কোটি ডলার। নতুন করে সংস্থাটির কাছ আরও ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ নিচ্ছে বাংলাদেশ। আইএমএফের বিশ্লেষণ অনুযায়ী বাংলাদেশের ঋণ এখনও ঝুঁকিমুক্ত সীমার মধ্যেই আছে।
বৈদেশিক ঋণের মেয়াদ সাধারণত দীর্ঘমেয়াদের জন্য দেয়া হয়। যথা: বিশ্বব্যাংকের ঋণের মেয়াদ ২৫ থেকে ৪০ বছর এর সঙ্গে গ্রেস পিরিয়ড ৫ থেকে ১০ বছর অন্তর্ভুক্ত থাকে। দক্ষিণ কোরিয়ার ঋণের মেয়াদ ৪০ বছর। মেট্রোরেলের জন্য জাপানি ঋণের মেয়াদ ২০ বছর। বাংলাদেশ এ পর্যন্ত যে ঋণ নিয়েছে তার গড় মেয়াদ ২৮ বছর এবং গ্রেস পিরিয়ড সাড়ে সাত বছর। বর্তমানে বাংলাদেশের যে বৈদেশিক ঋণ রয়েছে তার গড় সুদ হার হলো ১ দশমিক ৫ শতাংশ। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দ্বিপক্ষীয় ঋণের চাইতে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা থেকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বাংলাদেশের জন্য বেশি তাৎপর্যপূর্ণ।
মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণ: বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা নিন্মের টেবিলের মাধ্যমে তুলে ধরা হলো।
টেবিল:০১
মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণ ২০১৩ – ২০২২
সাল মাথাপিছু ঋণ প্রবৃদ্ধি
ডলার শতাংশ
২০১৩ ১৪৯.৭২ – –
২০১৪ ১৭৩.৫৩ ২৩.৮১ ১৫.৯০
২০১৫ ২৫৭.০০ ৮৩.৪৭ ৪৮.১০
২০১৬ ২৫৯.২০ ২.২০ ০.৮৬
২০১৭ ৩১৪.৩২ ৫৫.১২ ২১.২৭
২০১৮ ৩৪৬.৭২ ৩২.৪০ ১০.৩১
২০১৯ ৩৭৮.৩৮ ৩১.৬৬ ৯.১৩
২০২০ ৪৩৫.৩১ ৫৬.৯৩ ১৫.০৫
২০২১ ৫৩৬.২৪ ১০০.৯৩ ২৩.১৯
২০২২ ৫৬১.৮৮ ২৫.৬৪ ৪.৭৮
১০ বছরে মোট প্রবৃদ্ধি ৪১২.১৬ ১৪৮.৫৮
গড় প্রবৃদ্ধি ৪১.২২ ১৪.৮৬
তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ ব্যাংক
টেবিল: ০১ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, গত ১০ বছরে দেশে মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৪১২ দশমিক ১৬ ডলার বা ১৪৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ। অর্থনীতির ভাষায়, মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণ বৃদ্ধি পেলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়।
জিডিপি ও বৈদেশিক ঋণের প্রবৃদ্ধি: ১৯৭২ সাল থেকে ২০২২ পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণের প্রবৃদ্ধি ও জিডিপির কত শতাংশ; তা নিচের ছকের মাধ্যমে তুলে ধরা হলো।
টেবিল-০২
জিডিপি ও বৈদেশিক ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৯৭২-২০২২
(বিলিয়ন ডলার)
সাল বৈদেশিক ঋণ প্রবৃদ্ধি জিডিপি শতাংশ
ডলার শতাংশ
১৯৭২ ০.১৫ – – ৬.২৯ ২.৩৩
১৯৭৫ ১.৬৮ ১.৫৩ ১০৪৭.০৯ ১৯.৪৫ ৮.৬৪
১৯৮০ ৩.৮০ ২.১২ ১২৬.২৬ ১৮.১৪ ২০.৯৬
১৯৮৫ ৬.৫৩ ২.৭৩ ৭১.৭৪ ২২.২৮ ২৯.৩১
১৯৯০ ১২.২৯ ৫.৭৬ ৮৮.২৩ ৩১.৬০ ৩৮.৯০
১৯৯৫ ১৫.৭৩ ৩.৪৪ ২৮.০১ ৩৭.৯৮ ৪১.৪৩
২০০০ ১৫.৬০ -০.১৩ -০.৮৫ ৫৩.৩৭ ২৯.২৩
২৮ বছরে মোট প্রবৃদ্ধি ১৫.৪৫ ১৩৬০.৪৮ ১৭০.৮০
গড় প্রবৃদ্ধি ০.৫৫ ৪৮.৫৯ ৬.১০
২০০০ ১৫.৬০ – – ৫৩.৩৭ ২৯.২৩
২০০১ ১৪.৯৮ (০.৬২) (৩.৯৭) ৫৩.৯৯ ২৭.৭৫
২০০২ ১৬.৬৯ ১.৭১ ১১.৪২ ৫৪.৭২ ৩০.৫০
২০০৩ ১৮.৪৪ ১.৭৫ ১০.৪৯ ৬০.১৬ ৩০.৬৫
২০০৪ ১৯.৭১ ১.২৭ ৬.৮৯ ৬৫.১১ ৩০.২৭
২০০৫ ১৮.৫০ (১.২১) (৬.১৪) ৬৯.৪৪ ২৬.৬৪
২০০৬ ২০.১৬ ১.৬৬ ৮.৯৭ ৭১.৮২ ২৮.০৭
২০০৭ ২১.৫২ ১.৩৬ ৬.৭৫ ৭৯.৬১ ২৭.০৩
২০০৮ ২৩.৩৫ ১.৮৩ ৮.৪৯ ৯১.৬৩ ২৫.৪৮
২০০৯ ২৫.৩৮ ২.০৩ ৮.৭০ ১০২.৫০ ২৪.৭৬
২০১০ ২৬.৫৭ ১.১৯ ৪.৭০ ১১৫.৩০ ২৩.০৫
২০১১ ২৭.০৫ ০.৪৭ ১.৭৯ ১২৮.৬০ ২১.০৩
২০১২ ২৯.১৬ ২.১১ ৭.৮০ ১৩৩.৪০ ২১.৮৬
২০১৩ ৩২.৪৫ ৩.৩০ ১১.৩১ ১৫০.০০ ২১.৬৪
২০১৪ ৩৫.২৭ ২.৮১ ৮.৬৭ ১৭২.৯০ ২০.৪০
২০১৫ ৩৮.৭০ ৩.৪৩ ৯.৭২ ১৯৫.১০ ১৯.৮৩
২০১৬ ৪১.৫৫ ২.৮৬ ৭.৩৯ ২৬৫.২০ ১৫.৬৭
২০১৭ ৫১.০৪ ৯.৪৯ ২২.৮৩ ২৯৩.৮০ ১৭.৩৭
২০১৮ ৫৭.০৯ ৬.০৫ ১১.৮৫ ৩২১.৪০ ১৭.৭৬
২০১৯ ৬২.৪৩ ৫.৩৪ ৯.৩৫ ৩৫১.২০ ১৭.৭৮
২০২০ ৭৩.৫১ ১১.০৮ ১৭.৭৫ ৩৭৩.৯০ ১৯.৬৬
২০২১ ৯১.৪৩ ১৭.৯২ ২৪.৩৮ ৪১৬.৩০ ২১.৯৬
২০২২ ৯৬.২৫ ৪.৮২ ৫.২৭ ৪৬০.২০ ২০.৯১
২৩ বছরে মোট প্রবৃদ্ধি ৮০.৬৫ ১৯৪.৩৯ ৫৩৯.৩০
গড় প্রবৃদ্ধি ৩.৫১ ৮.৪৫ ২৩.৪৫
ডেটা সূত্র: বিশ্ব ব্যাংক
টেবিল ০২ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ১৯৭২ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত মোট ২৮ বছরে বৈদেশিক ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫.৪৫ বিলিয়ন ডলার বা ১৩৬০ দশমিক ৪৮ শতাংশ। গড় হিসেবে প্রতি বছর প্রবৃদ্ধি হয়েছে ০.৫৫ বিলিয়ন ডলার বা ৪৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং বৈদেশিক ঋণের গড় হার ছিল জিডিপির ৬ দশমিক ১০ শতাংশ। ২০০০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ২৩ বছরে বৈদেশিক ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮০ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ১৯৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ। গড় হিসেবে প্রতি বছর প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এ ২৩ বছরে গড়ে মোট বিদেশি ঋণ ছিল জিডিপির ২৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের মানদণ্ডে একটি দেশ তার মোট জিডিপির ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণের স্থিতি যে কোনো দেশের জন্য নিরাপদ। অর্থনীতিবিদদের মতে জিডিপির ২০ শতাংশ পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণ নেয়ায় কোনো ঝুঁকি নেই। গত ২৩ বছরে বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ মোট জিডিপির গড় হিসেবে ২৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এই মুহূর্তে ভারত সরকারের ঋণের পরিমাণ জিডিপির ৫৪ দশমিক ৩ শতাংশ, পাকিস্থানের ৭৪ দশমিক ৯ শতাংশ। (যুগান্তর, ২৬ ফেব্রয়ারি, ২০২৩)। সেই তুলনায় আমাদের অবস্থান স্বাভাবিক পর্যায়ে মনে হলেও সত্যিকার অর্থে আমরা কি নিরাপদ অর্থনৈতিক পরিবেশে আছি? এ প্রশ্নের জবাব সময়ই বলে দেবে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে এবং মুদ্রাবাজারকে স্থিতিশীল রাখতে বেশির ভাগ দেশই বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ করে থাকে। আবার আপৎকালীন সময়েও বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ করে থাকে অনেক দেশ। বৈদেশিক ঋণ নিয়ে অনেক দেশ উন্নত হয়েছে আবার অনেক দেশ দুর্বল হয়ে গেছে। যেমন নাইজেরিয়া, মিসর, শ্রীলংকা। বাংলাদেশ ব্যাংক জুলাই মাসে তার সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ১৬.১৪ লাখ কোটি টাকা। এক গবেষণায় দেখা যায়, যে পরিমাণ বৈদেশিক ঋণ বাংলাদেশের আছে, নতুন করে আর কোনো বিদেশি ঋণ না নিলেও, তা সুদ ও আসলসহ শোধ করতে ২০৬২ সাল পর্যন্ত লেগে যাবে।
বিশ্বব্যাংকের মতে, উচ্চঋণ-জিডিপির অনুপাত অর্থাৎ জিডিপির চেয়ে ঋণের বেশি হওয়া দেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের একটি প্রধান কারণ। ওই টেবিলের তথ্য অনুযায়ী বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ করতে পারে। বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ধীরে ধীরে হ্রাস করতে হবে। নিজস্ব আয়ের স্বক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। কারণ বৈদেশিক ঋণের বোঝা অনেক দেশকে দারিদ্র্যের ফাঁদে ফেলেছে। দেশের শ্রম শক্তিকে কাজে লাগিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। যার ফলে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে বৈদেশিক রিজার্ভ বৃদ্ধি পায়। অতএব, অবকাঠামো উন্নয়ন, মেঘা প্রকল্প বাস্তবায়ন, বাজেট ঘাটতি এবং উৎপাদনশীল প্রকল্প বাস্তবায়নে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ তখনই ফলপ্রসূ হবে যখন সকল প্রকার দুর্নীতিরোধ, অপচয় এবং নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
কর্মকর্তা
শরিয়াহ্ সেক্রেটারিয়েট
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি
Email: drmdgulammustafa@gmail.com