Print Date & Time : 27 August 2025 Wednesday 9:09 pm

বাংলাদেশ ছাড়লো বারিস্তা লাভাজ্জা

নাজমুল হুসাইন: ইতালিভিত্তিক চেইন কফিশপ বারিস্তা লাভাজ্জা বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে বাংলাদেশে থাকা তাদের সব আউটলেট। ফ্রাঞ্চাইজির মেয়াদ শেষ হওয়ায় এগুলো বন্ধ হয়েছে বলে জানা গেছে। গত মাসের শেষের দিকে বাংলাদেশে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটির ১০টি আউটলেটই বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৮ সালে এদেশে যাত্রা করা বারিস্তা লাভাজ্জার কফি শপগুলো কয়েক বছরেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।

জানা গেছে, সারা বিশ্বে প্রায় ৯০টির বেশি দেশে কফিশপ পরিচালনা করে প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশে বারিস্তা লাভাজ্জার ফ্রেঞ্চাইজি পরিচালনা করতো এমএজিএইচ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এমজিএইচ রেস্টুরেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড। তাদের সঙ্গে ফ্রাঞ্চাইজির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে নতুন করে কোনো চুক্তি হয়নি। ফলে বাংলাদেশ ছেড়েছে বিশ্বখ্যাত কফির ব্র্যান্ডটি।

বারিস্তা ও লাভাজ্জা ২০০৭ সালে একীভূত হয়ে যৌথ মালিকাধীন কোম্পানি হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে। এর পরের বছর তারা বাংলাদেশে যাত্রা করেছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ইতালির মূল প্রতিষ্ঠান লাভাজ্জা ভারতভিত্তিক বারিস্তার সঙ্গে যৌথ কার্যক্রম থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করে। এরই মধ্যে অনেক দেশে তারা আলাদা হয়ে গেছে, যা বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ।

বর্তমানে আলাদা হওয়া বারিস্তা ব্র্যান্ডটি পরিচালিত হচ্ছে ভারত থেকে। বাংলাদেশে যৌথ মালিকানায় থাকা বারিস্তা লাভাজ্জার সঙ্গে চুক্তিশেষে নতুন দুই প্রতিষ্ঠানের কারও সঙ্গে রয়ালিটির মিল হয়নি এমএজিএইচ গ্রুপের। ফলে কোনো ব্র্যান্ডের সঙ্গে চুক্তি না হওয়াতে বারিস্তা লাভাজ্জা বন্ধ হয়ে গেছে।

ইতালির শহর তুরিনে ১৮৯৫ সালে লুইগি লাভাজ্জা নামে এক ব্যক্তি মাত্র ২০ ডলার নিয়ে শুরু করেন ছোট্ট একটা কফিশপ। বছর কয়েকের মধ্যে তার কফির সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। শুধু ইতালি নয়, এর বাইরেও। আর তার একমাত্র কারণ বিশেষ রেসিপি, বিশেষ কফিবিন থেকে তৈরি বিশেষ কফি। এখন ৯০টিরও বেশি দেশে লাভাজ্জা ছড়িয়ে দিচ্ছে এর কফির সুবাস। পরবর্তী সময়ে ভারতের চেইন রেস্টুরেন্ট বারিস্তার সঙ্গে যুক্ত হয় লাভাজ্জা। উপমহাদেশে কয়েক বছর আগেও বারিস্তা লাভাজ্জা নামেই ব্যবসা করে যাচ্ছিল প্রতিষ্ঠানটি। গত দু বছর আগে ভারতে বারিস্তাকে বিক্রি করে দেয় লাভাজ্জা। সেখানে ১৯০টি শপ ছিল যৌথ প্রতিষ্ঠানটির।

২০০৮ সালে বারিস্তা লাভাজ্জা বাংলাদেশে চালুর পর থেকে তাদের শপগুলোতে ইতালির নিজস্ব লাভাজ্জা ব্র্যান্ডের বিন দিয়ে কফি প্রস্তুত করা হতো, যা দ্রুত বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও অভিজাত শ্রেণির কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এসপ্রেসো, কাপুচিয়ানো, লাটে, মোকাসহ আরও নানা রকমের কফি পাওয়া যেত তাদের আউটলেটগুলোতে। সঙ্গে ছিমছাম বসার ব্যবস্থা। দেয়ালের রং ও আলোর ব্যবহারে বেশ মানানসই ছিল সব শপ। তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী হওয়াতে ছাত্র বা পেশাজীবী সবাই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন বারিস্তা লাভাজ্জায়। এতে দেশে লাভজনকভাবে পরিচালিত হতে থাকে বিশ্বজয়ী ব্র্যান্ডশপটি।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার, গুলশান, ধানমন্ডি ও উত্তরায় বড় পরিসরে চারটি শপ ছিল বারিস্তা লাভাজ্জার। আর ছোট-বড় মিলে কয়েক বছরে মোট ১০টি আউটলেট গড়ে ওঠে এই কয়েক বছরের মধ্যেই। কফির পাশাপাশি এসব আউটলেটে পাওয়া যেত কেক, ডেজার্ট, স্যান্ডউইচের মতো মজাদার কিছু খাবারও। গতকাল সরেজমিনে সবগুলো শপ বন্ধ পাওয়া গেছে।

এদিকে জানা গেছে, আগের শপগুলোর স্থানে নতুন করে ‘পেয়ালা’ নামের একটি রেস্টুরেন্ট চালু করছে এমজিএইচ রেস্টুরেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড, যা বারিস্তার আদলেই কফি শপের চাহিদা পূরণ করবে বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন। তবে এসব বিষয়ে কোম্পানির সংশ্লিষ্ট কারও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।