Print Date & Time : 21 July 2025 Monday 6:44 pm

বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়াই চীনে বিনিয়োগ চুক্তি নাসির গ্রুপের  

মেহেদী হাসান: গ্লাস উৎপাদনে চীনে নতুন একটি ইউনিট স্থাপন করবে নাসির গ্লাস। এজন্য চায়না ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের (সিটিআইইসি) সঙ্গে বিনিয়োগ চুক্তি করেছে কোম্পানিটি। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। যদিও বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোকে বিদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতির প্রয়োজন।

জানা গেছে, গত ২৮ অক্টোবর চীনের সাংহাইয়ে ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রি নির্মাণে নাসির গ্রুপ এবং সিটিআইইসির মধ্যে একটি চুক্তি সই হয়েছে। এতে প্রতিদিন ৬০০ টন উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রি নাসির গ্রুপের তৃতীয় ইউনিট হিসেবে চালু হতে যাচ্ছে। নাসির গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির উদ্দিন বিশ্বাস এবং সিটিআইইসি গ্রুপের চেয়ারম্যান,  চীনের জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য পেং স্যু এ চুক্তিতে সই করেন। নাসির গ্রুপ এবং সিটিআইইসি গ্রুপের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা চুক্তি সই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

গতকাল একটি দৈনিকে চুক্তিসংক্রান্ত বিজ্ঞাপনও দিয়েছে কোম্পানিটি। এতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ ভিশন ২০২১: নাসির গ্রুপের একটি সাহসী পদক্ষেপ।’

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, বিদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নাসির গ্রুপ বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো অনুমোদন নেয়নি। এছাড়া অনুমোদন নেওয়ার কোনো প্রক্রিয়ায়ও নাসির গ্রুপের নাম নেই। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহার মুঠোফোনে কয়েকবার ফোন দিয়েও তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

বর্তমান আইন অনুযায়ী বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো চাইলেই বিদেশে বিনিয়োগ করতে পারে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয়। তবে অনুমোদন ছাড়াই অনেকে অবৈধ পথে অর্থ নিয়ে বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ করেছেন বলে জানা গেছে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন,  বিদেশে বিনিয়োগে অনুমতি না পেলেও টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া চীনে বিনিয়োগ চুক্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে নাসির গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (আমদানি) আলফাজ উদ্দিন শেয়ার বিজকে বলেন, চুক্তি করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি লাগে নাকি। এটা বিদেশে বিনিয়োগ নয়। আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে এটা হবে। আমাদের সঙ্গে সিটিআইইসির যে চুক্তি হয়েছে, এর মাধ্যমে তারা আমাদের গ্লাস ম্যানুফ্যাকচারিং মেশিনারিজ (গ্লাস তৈরির যন্ত্রাংশ) সাপ্লাই করবে।

তিনি আরও বলেন, কেবল চুক্তি হয়েছে। আমরা যখন এলসি করতে যাব তখন অবশ্যই বিনিয়োগ উন্নয়ন বোর্ড এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নেব।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ থেকে সরাসরি বিদেশে বিনিয়োগের কোনো অনুমতি নেই। তবে বিদেশে বিনিয়োগ বা নতুন কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে যেকোনো কোম্পানিকে নির্দিষ্ট নিয়মানুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করতে হয়। এরপর যাচাই-বাছাই করে বাংলাদেশ ব্যাংক তা অনুমোদন দিলে বিদেশে বিনিয়োগ করা যাবে।

এক্ষেত্রে তা অনুসরণ করা হয়নি। যদিও এর আগেও নাসির গ্রুপের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ ওঠে। পরে এ বিষয়ে মামলাও করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গত ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রায় ৫৮ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগের সত্যতা পেয়ে নাসির গ্রুপের চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন বিশ্বাসসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক। মামলার এজাহারে নাম থাকা অন্য ৯ জন ছিলেন নাসির গ্রুপের তিন মহাব্যবস্থাপক আলফাজ উদ্দিন, শামীম আহম্মেদ ও সিদ্দিকুর রহমান, সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোবাইদুল ইসলাম, হিসাবরক্ষক শামীম, এ জে মানি এক্সচেঞ্জের মালিক সাইফুল বিশ্বাস, কর্মচারী এমদাদুল, হুন্ডি ব্যবসায়ী ফিরোজ আহমেদ ও তার ছেলে আদিল আহমেদ।

দুদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, নাসির গ্রুপ দীর্ঘদিন ধরে তাদের প্রতিটি কোম্পানির নামে এলসির বিপরীতে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করে। আমদানি পণ্যের প্রকৃত মূল্যের ৪০-৫০ শতাংশ অর্থের এলসি খোলা হতো। পণ্যমূল্যের বাকি ৫০-৬০ শতাংশ তারা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাঠাত। এক্ষেত্রে চারটি হুন্ডি প্রতিষ্ঠান তাদের সাহায্য করত। এসব প্রতিষ্ঠান বিদেশে অর্থ পাঠিয়ে টাকা আদায়ের রসিদ (মানি রিসিট) ই-মেইলে পাঠিয়ে দিত। আর ই-মেইলে মানি রিসিট পাওয়ার পর নাসির গ্রুপ চেকের মাধ্যমে ওই টাকা পরিশোধ করত। এভাবে প্রতি মাসে কয়েক লাখ টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো হতো। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে।