নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ব্যাংকের চার কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারের প্রায় তিন হাজার কোটি আত্মসাৎ ও পাচারের ঘটনায় গতকাল সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই চার কর্মকর্তা হলেনÑযুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ ফেরদৌস কবির, এবিএম মোবারক হোসেন, উপ-পরিচালক মো. হামিদুল আলম ও সহকারী পরিচালক মো. কাদের। দুদক সংশ্লিষ্ট সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি এ চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চিঠি পাঠিয়েছিল দুদক।
এ প্রসঙ্গে গতকাল এক ব্রিফিংয়ে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ব্যাংকের মনিটরিংয়ে কোনো দুর্বলতা ছিল কি নাÑতা খতিয়ে দেখতেই বাংলাদেশ ব্যাংকের চার কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ফাস ফাইন্যান্স, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এবং পিপলস লিজিং থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো মর্টগেজ ছাড়াই লেয়ারিং করে পিকে হালদার আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিং করে। এ অপরাধে ইতোমধ্যে দুদক ২২টি মামলা করেছে।
তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোতে মনিটরিং দুর্বলতা, অডিট প্রতিবেদনে তথ্য গোপন এবং প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের কী কী দুর্বলতা ছিল এ বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করার জন্য ওই চার কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে অন্য কোনো কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদেরও বক্তব্য নেওয়া হবে।
দুদক সূত্র জানায়, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও পাচারের অভিযোগে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে দুদক। সে মামলার তদন্তে এখন পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের তথ্য পেয়েছে তদন্ত সংস্থা।
তবে মামলা দায়েরের আগেই পিকে হালদার পালিয়ে কানাডা চলে যান। পালিয়ে যাওয়ার আগে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন তিনি। একই সময়ে তিনি চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (আইএলএফএসএল), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি) নিজের নিয়ন্ত্রণে ধরে রাখেন। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা তুলে আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার করেন তিনি।
পিকে হালদারের বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে তার ৬২ জন সহযোগীর খোঁজ পায় দুদক। সহযোগীদের মধ্যে অন্তত এক ডজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জানা গেছে, পিকে হালদার তার নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান থেকে নামসর্বস্ব যে প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ ও পাচার করেছেন সেগুলোর বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মনিটরিং ও অডিট প্রতিবেদনে কী ছিলÑতা জানতে চেয়েছেন দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তারা। তবে জিজ্ঞাসাবাদে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা নিজেদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন।
দুদক সূত্র জানায়, এই ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের আরও কয়েকজন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।
২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ক্যাসিনোর মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনকারী প্রায় ২০০ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। যার মধ্যে অন্যতম ছিল পিকে হালদারের আর্থিক কেলেঙ্কারি। দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চোখ এড়িয়ে বিদেশ পাড়ি দিয়েছেন। ২০২১ সালের ৮ জানুয়ারি দুদকের অনুরোধে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিয়ে রেড অ্যালার্ট জারিও করে ইন্টারপোল। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন তিনি। পিকে কেলেঙ্কারিতে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন ১১ জন। যাদের মধ্যে উজ্জ্বল কুমার নন্দী, পিকে হালদারের সহযোগী শংখ বেপারি, রাশেদুল হক, অবান্তিকা বড়াল ও নাহিদা রুনাইসহ আটজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।