নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের আগুন লাগা সেই বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের ফ্লোরে এখন বিদ্যুৎ ও নেট সংযোগ নেই। ফলে বন্ধ রয়েছে বিভাগটির ব্যাংকিং কার্যক্রম। অন্ধকার আর পোড়া গন্ধের ওই ফ্লোরটিতে চলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্ত আর ধোয়ামোছার কাজ। আগুন লাগার পর প্রথম কার্যদিবস গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগে সরেজমিন পরিদর্শনে এ চিত্র দেখা যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের আগুন লাগা ফ্লোরটির নির্দিষ্ট স্থানে হলুদ রঙের ফিতা দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। যেখানে তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ছাড়া অন্যদের যাওয়া নিষেধ। তবে ফিতার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ফ্লোরের অনেক কিছুই দেখা সম্ভব হয়। ফ্লোরটিতে কিছু ফাইল ও কাগজপত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। ফাইল রাখা আলমারিগুলো খোলা, ফ্লোরের নিচে ছোপ ছোপ কালো দাগ আর পানি জমে আছে। সংশ্লিষ্ট ফ্লোরটিতে কোনো কার্যক্রম না চললেও উপর-নিচের ফ্লোরগুলোয় ধোয়ামোছার কাজ হচ্ছে। উপর-নিচের দুটি ফ্লোরের কর্মকর্তারা নিজ নিজ আসনে বসেছেন। কেউ কেউ নিজেদের ফাইলগুলো গুছিয়ে নিচ্ছেন। আগুনে ১৩তম ফ্লোরে অবস্থিত বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের দুটি ডেস্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের পানির কারণে ভিজে যাওয়া কাগজপত্র গোছানো হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত এ ফ্লোরগুলো ছাড়া অন্য সব শাখার কাজ যথারীতি চলছে।
ফ্লোরগুলোয় দেখা যায়, বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের উপরে অবস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম
গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ ‘ডিপার্টমেন্ট অব অপসাইড সুপারভিশন’ (ডস) ফ্লোরের ধোঁয়া ও পোড়ার গন্ধ রয়ে গেছে। এ গন্ধ ১৮তম ফ্লোর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। ডস-এ ধোয়া-মোছার কাজ চলছে। আগুন যাতে না ছড়িয়ে পড়ে এজন্য এই ফ্লোরের পূর্ব পাশের জানালা ভেঙে পানি দেওয়া হয়েছিল। সেই কারণে এ ফ্লোরটিতেও ধোয়া ঢুকে পড়ে। তবে এ ফ্লোরে আগুন আসতে পারেনি, তার আগেই ফায়ার সার্ভিসের লোকজন নিভিয়ে ফেলে।
বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের নিচে অপর গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ বিআরপিডির পোড়া গন্ধ কিছুটা কম হলেও সবার মাঝে অগ্নিকাণ্ডের আলোচনা। কাজে পুরোপুরি মনোনিবেশ করানোর চেষ্টা করছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ব্যাংক অনুমোদন, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধানদের নিয়োগসহ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে ‘সুইজ হাউজ’ বলে বিবেচিত বিআরপিডির কর্মকর্তারা সতর্ক নিজ নিজ ডেস্ক থাকার ফাইলগুলোর ব্যাপারে।
আগুন লাগার ওই ঘটনার পর গতকাল ছিল প্রথম কর্মদিবস। শুক্র ও শনিবার সাধারণ সরকারি ছুটি এবং রোববার মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ব্যাংকের সব কার্যক্রম বন্ধ ছিল। গতকাল ঘটনাস্থল ঘুরে জানা যায়, সকাল থেকেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত আছেন। তারা বিভাগের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব তদন্ত বিভাগও কাজ করছে। পাশাপাশি বিভাগটিকে নতুন করে ঠিক করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে কাজ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে ভবনের ১৪ তলায় আগুন লাগে। প্রত্যক্ষদর্শী ও ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, ওইদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৩১ তলা ভবনের ১৪ তলার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপকের (জিএম) কক্ষে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে তা কক্ষে ছড়িয়ে পড়ে। আধা ঘণ্টা চেষ্টার পর রাত ১০টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। ওইদিন রাতে এ ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।