Print Date & Time : 20 July 2025 Sunday 8:44 pm

বাংলালিংককে ভ্যাটের ৫৮ কোটি টাকা দিতেই হবে

রহমত রহমান: বেসরকারি মোবাইল অপারেটর বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশন্স লিমিটেডকে ভ্যাটের ৫৮ কোটি টাকা দিতে হবে। যদিও আগে এর পরিমাণ ছিল ১০৭ কোটি টাকার বেশি, তবে রেভিনিউ শেয়ারিং ও সোশ্যাল অবলিগেশন ফান্ড (এসওএফ) খাতে ভ্যাট কমেছে প্রায় ৪৯ কোটি টাকা।

ভ্যাট পরিশোধ করতে বাংলালিংককে নোটিস দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ), মূল্য সংযোজন কর শাখা। সম্প্রতি পৃথক দুইটি ‘কর নির্ধারণী নোটিস’ দেয়া হয়। ২০ দিনের মধ্যে প্রযোজ্য ভ্যাট পরিশোধ করতে নির্দেশনা দিয়ে বাংলালিংককে নোটিস দেয়া হয়। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রথম নোটিসে বলা হয়, ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কমিউনিকেশন (বিটিআরসি) বাংলালিংকের অনাদায়ী ভ্যাটের বিষয়ে এলটিইউকে চিঠি দেয়। এলটিইউ ২৬ আগস্ট বিটিআরসি ও বাংলালিংককে চিঠি দেয়। দুটি চিঠি পর্যালোচনায় দেখা যায়, বাংলালিংক ২০১৯ সালের জুন থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত রেভিনিউ শেয়ারিং, স্পেকট্রাম চার্জ, সোশ্যাল অবলিগেশন ফান্ড (এসওএফ), বার্ষিক লাইসেন্স ফি-২জি, ৩-জি, ৪-জি (২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছর) এবং স্পেকট্রাম অ্যাসাইনমেন্ট ফি-৪-জি (২০২০-২১ অর্থবছর) বিটিআরসিতে পরিশোধিত অর্থের বিপরীতে ১৫ শতাংশ হারে প্রযোজ্য ৯৩ কোটি ৫৫ লাখ ৪৭ হাজার ৪২০ টাকা উৎসে ভ্যাট পরিশোধ করেনি। যার মধ্যে ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত রেভিনিউ শেয়ারিং হিসেবে প্রায় ২২৩ কোটি টাকা (এআইটিসহ) পরিশোধ করে, যাতে প্রযোজ্য ভ্যাট প্রায় সাড়ে ৩৩ কোটি টাকা, স্পেকট্রাম চার্জ হিসেবে প্রায় ৯০ কোটি টাকা, যাতে প্রযোজ্য ভ্যাট প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি টাকা এবং এসওএফ হিসেবে প্রায় ৪৩ কোটি টাকা পরিশোধ করে, যাতে প্রযোজ্য ভ্যাট প্রায় ছয় কোটি টাকা। এছাড়া ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছর লাইসেন্স ফি (২-জি, ৩-জি, ৪-জি) হিসেবে ১৫ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে, যাতে প্রযোজ্য ভ্যাট প্রায় দুই কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছর স্পেকট্রাম অ্যাসাইনমেন্ট ফি-৪-জি প্রায় ২৫৬ কোটি টাকা পরিশোধ করে, যাতে প্রযোজ্য ভ্যাট প্রায় ৩৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ বাংলালিংক রেভিনিউ শেয়ারিং, স্পেকট্রাম চার্জ, এসওএফ, লাইসেন্স ফি, স্পেকট্রাম অ্যাসাইনমেন্ট ফি হিসেবে প্রায় ৬২৪ কোটি টাকা পরিশোধ করে, যাতে প্রযোজ্য মোট ভ্যাট প্রায় ৯৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।

নোটিসে বলা হয়, ১২ জানুয়ারি শুনানিতে অংশ নিতে বাংলালিংককে চিঠি দেয় এলটিইউ। শুনানিতে অংশ নিয়ে বাংলালিংকের কর্মকর্তারা জানান, মূল্য সংযোজন কর আইন, ১৯৯১ ও এনবিআরের একটি বিশেষ আদেশে রেভিনিউ শেয়ারিংয়ের বিপরীতে দ্বৈতকর পরিহারের কথা বলা হয়েছে। ফলে রেভিনিউ শেয়ারিংয়ের বিপরীতে প্রযোজ্য ভ্যাট প্রায় সাড়ে ৩৩ কোটি টাকা প্রত্যাহারের অনুরোধ করা হয়। একইভাবে নতুন ভ্যাট আইন অনুসারে এসওএফের বিপরীতে ভ্যাট অব্যাহতি রয়েছে। ফলে এ খাতে প্রযোজ্য প্রায় ছয় কোটি টাকা ভ্যাট প্রত্যাহারের অনুরোধ করা হয়। পর্যালোচনা শেষে এলটিইউ দুটি খাতে প্রযোজ্য ভ্যাট প্রত্যাহার করে নেয়। বাকি স্পেকট্রাম চার্জ, লাইসেন্স ফি ও স্পেকট্রাম অ্যাসাইনমেন্ট ফি’র বিপরীতে প্রযোজ্য প্রায় ৫৪ কোটি টাকা ভ্যাট পরিশোধে ২০ দিনের সময় দেয়া হয়।

অপর কর নির্ধারণী নোটিসে বলা হয়, একইভাবে ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর বিটিআরসি এলটিইউকে চিঠি দেয়। এলটিইউ বাংলালিংককে প্রযোজ্য প্রায় ১৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা পরিশোধে চিঠি দেয়। ২০২০ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রেভিনিউ শেয়ারিং, স্পেকট্রাম চার্জ, এসওএফ এবং বার্ষিক লাইসেন্স ফি বাবদ বিটিআরসিতে পরিশোধিত প্রায় ৯৩ কোটি টাকার বিপরীতে এ ভ্যাট পরিশোধ করতে বলা হয়। শুনানিতে অংশ নিয়ে বাংলালিংক কর্মকর্তারা রেভিনিউ শেয়ারিং ও এসওএফের বিপরীতে ভ্যাট প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ জানান। পরে তা প্রত্যাহার করা হয়। তবে স্পেকট্রাম চার্জ ও লাইসেন্স ফি’র বিপরীতে প্রযোজ্য তিন কোটি ৯০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে নোটিসে বাংলালিংককে ২০ দিনের সময় দেয়া হয়। উভয় নোটিসে বলা হয়, নোটিস জারির ৯০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হবে।

এ বিষয়ে বাংলালিংকের হেড অব করপোরেট (কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড সাস্টেইনিবিলিটি) আংকিত সুরেকা শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এ বিষয়ে বাংলালিংক অবগত নয়। তাছাড়া বিটিআরসি’কে পরিশোধিত অর্থের ক্ষেত্রে বর্তমানে বাংলালিংকের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির কোনো মামলা নেই। বরং টেলিকম খাতের প্রয়োজন বিবেচনা করে এনবিআর রেভিনিউ শেয়ারিং ও এসওএফের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে। এর পাশাপাশি এনবিআর স্পেকট্রামের মূল্য ও বার্ষিক লাইসেন্স ফি’র ওপর ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে সাত শতাংশে এনেছে। নতুন এই ভ্যাটের হার ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে চালু হয়েছে। আমরা এনবিআরের নির্দেশ সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সাড়ে সাত শতাংশ হারে পাঁচ কোটি টাকা বার্ষিক লাইসেন্স ফি হিসেবে পরিশোধ করেছি।’