বাংলা আমার মায়ের ভাষা

কাজী সালমা সুলতানা: ১৯৫২ সালেল ২২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা থেকে ভাষা আন্দোলনের অধিকাংশ নেতা আত্মগোপন করেন। আত্মগোপনে থেকেও তারা ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে নিজেদের যথাসাধ্যভাবে যুক্ত রাখেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রেলওয়ের কর্মচারীরা ধর্মঘট পালন করেন এবং অনেকে উপস্থিত থাকলেও কোনো কাজ করেননি।

এদিন পূর্ববঙ্গ পরিষদে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার জন্য প্রস্তাব গৃহীত হয়। 

শহরে ১৪৪ ধারা থাকলেও হাজার হাজার মানুষকে এদিন রাস্তায় চলাচল করতে দেখা যায়। এদিন কালো ব্যাজ পরে শত শত মানুষ সলিমুল্লাহ হল প্রাঙ্গণে সমবেত হয়ে ২২ ফেব্রুয়ারি নিহত ব্যক্তিদের উদ্দেশে গায়েবানা জানাজা আদায় করেন। একদিন পর ২৪ ফেব্রুয়ারি রোববার আবারও সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত  মতো সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়।

এদিকে ছাত্রকর্মীরা ঠিক করেন, তারা একটি শহিদ মিনার নির্মাণ করবেন। ২১ ফেব্রুয়ারির শহিদদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শহিদ মিনার করার পরিকল্পনা করা হয়। এদিন মেডিকেল কলেজের সব ছাত্র স্বতঃস্ফূর্তভাবে শহিদ মিনার তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন। এভাবে  দলমত-নির্বিশেষে সবাই শহিদ মিনার তৈরির পরিকল্পনা করেন।

পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি সারারাত ধরে প্রস্তুতি চলে। ২৩ ফেব্রুয়ারি কারফিউয়ের মধ্যে বিকাল থেকে শুরু করে সারারাত শহিদ মিনার তৈরির কাজ চলে। যদিও তখনও ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় পুলিশ টহল দিচ্ছিল। কিন্তু তারা কোনো বাধা দেয়নি।

 মেডিকেল কলেজ সম্প্রসারণের জন্য প্রচুর ইট-বালি আনা হয়েছিল। সেখান থেকেই ছাত্ররা নিজেরাই ইট-বালি নিয়ে আসেন, তাদের সঙ্গে দুজন মিস্ত্রি ছিলেন। শহিদদের স্মরণে প্রথম নির্মিত এ শহিদ মিনারের অন্যতম পরিকল্পক ছিলেন ডা. সাঈদ হায়দার।

১১ ফুট দীর্ঘ মিনারের নির্মাণ করা কাজ শেষ হলে, সেটা দড়ি দিয়ে ঘিরে সেখানে এর নকশাটাকেও টানিয়ে রাখা হয়। পরদিন এই শহিদ মিনার দেখতে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়।

অনেকে শহিদ মিনারে নিজের টাকা-পয়সা ফেলে রেখে যান। অনেক মহিলারা তাদের স্বর্ণের গহনা শহিদ মিনারে ফেলে দিয়ে যান।

অবিভক্ত আবুল কাশেম ফজলুল হক শহিদ মিনারে এসে উপস্থিত হন। তিনি মিনারের সামনে দাঁড়িয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকেন। তার কান্নার সঙ্গে উপস্থিত সবার কান্নার রোল ওঠে এক অভাবনীয় দৃশ্যের অবতারণা হয়। (সূত্র: ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস-বশির আল হেলাল)