বাইব্যাক আইন চান বিনিয়োগকারীরা

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ:পুঁজিবাজার তথা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সেই সঙ্গে দুর্বল কোম্পানির তালিকাভুক্তি বন্ধে বাইব্যাক আইন চান সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এ আইন অনুযায়ী পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ারদর অভিহিত দর বা ইস্যু দরের নিচে নেমে গেলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি কিংবা ইস্যু ম্যানেজারকে এ শেয়ার কিনে নিতে হয়।
পৃথিবীর অনেক দেশে বাইব্যাক পদ্ধতির প্রচলন থাকলেও দেশের বিদ্যমান কোম্পানি আইনে তা অনুপস্থিত। যে কারণে পুঁজিবাজারে দুর্বল কোম্পানি তালিকাভুক্তির সুযোগ পাচ্ছে। অন্যদিকে পার পেয়ে যাচ্ছেন কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। আর ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের।
আন্তর্জাতিক বাজারে বাইব্যাক ছাড়া ও ‘প্রাইস পেগিং’-এর প্রচলন রয়েছে। এটি বাজারকে স্থির রাখার একটি পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে বড় অঙ্কের শেয়ার কোনো ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী কিনে নেয়। ফলে শেয়ারদরে বড় ধরনের কোনো পতন নেমে আসে না বা বড় পতন ঘটলেও পেগিং হওয়ার পর বাজার দরস্থির অবস্থার দিকে অগ্রসর হয়। স্টক এক্সচেঞ্জের তদারকিতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনের জন্যই মূলত এ সেবা দেওয়া হয়।
সূত্রমতে, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লি. ভারতের পুঁজিবাজারে ১৯৭৭ সালে তালিকাভুক্ত হয়। ২০১২-২০১৩ সালে যখন তাদের শেয়ারের দর অনেক নিচে নেমে যায় তখন ভারতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা তার কারণ জানতে চান। তখন রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লি.-এর মার্কেট প্রাইস চলছিল ৭৯৩ রুপি করে। প্রায় ১৪ হাজার কোটি রুপির শেয়ার বাইব্যাক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ওই কোম্পানিটি। তারা ৮৭০ রুপি পর্যন্ত এক বছর শেয়ার ক্রয় আদেশ দিয়েছিলেন।
অন্যদিকে দীর্ঘদিনের চাওয়া থাকলেও আমাদের দেশে এ নিয়মের প্রচলন নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাইব্যাক আইন না থাকায় ক্রমান্বয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। প্রিমিয়াম দিয়ে আইপিওর শেয়ার কিনে তা ইস্যু মূল্যের নিচে নেমে আসায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।
অন্যদিকে শেয়ার পুনঃক্রয়ের বিধান না থাকায় বিনিয়োগকারীদের ঘাড়ে মাত্রাতিরিক্ত দরে শেয়ার ছেড়ে দিয়েই খালাস হচ্ছে কোম্পানিগুলো। যদি বাইব্যাক আইন বাস্তবায়িত হতো তাহলে বিনিয়োগকারীরা আর্থিক ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারতেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০১১ সালের শুরুর দিকে পুঁজিবাজারে বড় ধরনের বিপর্যয়ের পর কোম্পানি আইন সংস্কার করে বাইব্যাক অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি আলোচনায় আসে। সিদ্ধান্ত হয় এটি কোম্পানি আইনের অংশ বলে বাইব্যাক মূলত কোম্পানি আইনে অন্তর্ভুক্ত হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে কোম্পানি আইন সংশোধন করে বাইব্যাক ধারা অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পরবর্তীতে বিষয়টি আবারও আড়ালে চলে যায়।
এদিকে পুঁজিবাজারের স্বার্থে বাইব্যাক আইন প্রচলন করা দরকার বলে মনে করেন পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই এ আইন রয়েছে। শেয়ারের দর কমে গেলে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ সেই শেয়ার ক্রয় করে নেন। কিন্তু আমাদের দেশে এখনও এ আইন হয়নি। পুঁজিবাজার তথা বিনিয়োগকারীর স্বার্থে এ আইন দরকার। আমাদের দেশের পুঁজিবাজারে দুর্বল কোম্পানির সংখ্যাই বেশি। এসব কোম্পানির অনেকেই ভুয়া আর্থিক প্রতিবেদন দেখিতে তালিকাভুক্ত হয়। পরবর্তীতে তারা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করে। এটা রোধ করার জন্যও বাইব্যাক আইন জরুরি।
একই প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, বাইব্যাক আইন পুঁজিবাজারের জন্য ভালো। তবে আমাদের দেশে এটা বাস্তবায়ন কঠিন। পুঁজিবাজারে যদি ভালোমানের কোম্পানির তালিকাভুক্তি ঘটানো যায় তা হলে বাই ব্যাকের দরকার পড়ে না।

পরোয়ানার ২০ দিন পর ওসি মোয়াজ্জেম গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাইবার ট্রাইব্যুনাল পরোয়ানা জারির ২০ দিন পর ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ সদস্যরা। ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সর্দার গতকাল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আজ (গতকাল) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে হাইকোর্ট এলাকার আশপাশ থেকে তাকে গ্রেফতার করে শাহবাগ থানায় নেওয়া হয়েছে।’
সোনাগাজী থানা পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে মারুফ হোসেন সর্দার জানান, তাদের কাছে মোয়াজ্জেমকে হস্তান্তর করা হবে।
ফেনীতে হত্যাকাণ্ডের শিকার মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দির ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানোর অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এক মামলার আসামি সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন।
গত মার্চ মাসে নুসরাত তার মাদরাসা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করার পর মোয়াজ্জেম তাকে থানায় ডেকে নিয়ে জবানবন্দি নিয়েছিলেন। তার কয়েক দিনের মাথায় নুসরাতের গায়ে অগ্নিসংযোগ করা হলে তা নিয়ে সারা দেশে আলোচনা শুরু হয়। তখনই ওই জবানবন্দির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
অগ্নিদগ্ধ নুসরাতের মৃত্যুর পর গত ১৫ এপ্রিল ওই ভিডিও ছড়ানোর জন্য ওসি মোয়াজ্জেমকে আসামি করে ঢাকায় বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মাদ আস সামছ জগলুল হোসেন ওই অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)।
এরই ধারাবাহিকতায় পিবিআই যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়, সেখানে ওসি মোয়াজ্জেমের নিজের মোবাইল ফোনে জবানবন্দি রেকর্ড করার এবং তা ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়।
পিবিআই’র দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মাদ আস সামছ জগলুল হোসেন গত ২৭ মে মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন।
হাসপাতালে নুসরাতের মৃত্যুর পর ওসি মোয়াজ্জেমকে প্রথমে সোনাগাজী থানা থেকে প্রত্যাহার করে রংপুর রেঞ্জে পাঠানো হয়। পরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় পুলিশ বাহিনী থেকে।
কিন্তু আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে তা তামিল করা নিয়ে ফেনী ও রংপুর পুলিশের মধ্যে বেশ কয়েক দিন অবহেলা পরিলক্ষিত হয়। এ পরিস্থিতিতে সংবাদমাধ্যমে পরিদর্শক মোয়াজ্জেমের লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার খবর আসে।
সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ শেষে গতকাল আদালত খুললে হাইকোর্টের নিয়মিত বেঞ্চে নতুন করে আবেদন করেন ওই পুলিশ পরিদর্শক। সেখান থেকে ফেরার সময়ই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।