প্রতিনিধি, বাকৃবি: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘এ ধরনের বাঁধাকপিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে এবং প্রাকৃতিক অ্যান্টিহিস্টামিনও থাকে, যা অ্যালার্জি প্রতিরোধে সহায়তা করে।’
তিনি বলেন, ‘স্যাভয় ক্যাবেজ বাঁধাকপির একটি জাত, এটি বাংলাদেশে একদম নতুন একটি শীতকালীন সবজি। এর নামটি এসেছে ফ্রান্সের একটি জায়গার নাম থেকে। ইতালিতে একে মিলান ক্যাবেজ বলা হয়। এর বিশেষ গুণ হলো এটি খুব মচমচে ও ভিন্ন ধরনের। সাধারণ বাঁধাকপি যেমন পরিপক্ক হলে শক্ত হয়ে যায়, কিন্তু স্যাভয় ক্যাবেজের পাতাগুলো মচমচে হওয়ায় রান্না করে খাওয়ার পাশাপাশি কাঁচা অবস্থায় বা স্যুপ করে খেলেও অত্যন্ত সুস্বাদু লাগে। এটি বিভিন্ন ফাস্ট ফুড, যেমন বার্গার, স্যান্ডউইচ ইত্যাদির সঙ্গে খাওয়া যায়।’
স্যাভয় ক্যাবেজ নিয়ে গবেষণায় বাকৃবির অধ্যাপকের সাথে গবেষণা দলে সহযোগী হিসেবে যুক্ত আছেন স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী সাদিয়া রহমান মাইশা।
এটি গঠনের সম্পর্কে তিনি জানান, স্যাভয় ক্যাবেজের আরেকটি বিশেষত্ব হল এর মাথার ওজন দেড় থেকে দুই কেজি এবং পাতা সহ ওজন প্রায় তিন কেজি। পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অধ্যাপক বলেন, ‘ভিটামিন সি এর পাশাপাশি এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন কে থাকে, যা মানুষের স্বাভাবিক হার্টবিট বজায় রাখতে এবং কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ ও স্ট্রোক কমাতে সাহায্য করে। এতে বিদ্যমান ফোলেট ও ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড বাচ্চাদের মস্তিষ্ক গঠনে সাহায্য করে।’
এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে, সি, ফলেট ও ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড থাকে। ফলেট থাকার কারণে এটি হূদরোগ কমাতে সাহায্য করে। ওমেগা ৩ বাচ্চাদের হাড় গঠন, শরীর বৃদ্ধি ও বুদ্ধির বিকাশে সাহায্য করে। তাছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে, স্যাভয় ক্যাবেজে আইসোথায়োসায়ানাইড থাকে, যা ফুসফুসের ক্যান্সার ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত কমায়।’ তাছাড়া এটি ওয়েট লস ড্রিঙ্ক হিসেবে খাওয়া যায়, যা শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি একই সাথে ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য সহায়ক বলেও জানান তিনি।
বিদ্যমান ভিটামিন সম্পর্কে অধ্যাপক বলেন, ‘সাধারণত সবুজ শাকসবজিতে বিটা ক্যারোটিন থাকে, কিন্তু স্যাভয় ক্যাবেজে প্রচুর বিটা ক্যারোটিন থাকে এবং এটি ভিটামিন এ এর অন্যতম উৎস।’ চাষাবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি জানান, ‘এটি আমরা ইংল্যান্ড থেকে নিয়ে এসেছি। জৈব মালচিং পদ্ধতিতে আমরা এই স্যাভয় ক্যাবেজ চাষ করেছি। এর চাষাবাদ পদ্ধতি অন্যান্য ক্যাবেজের মতোই। গবেষণা প্লটে ২৫ দিনের চারা চাষ করেছি। চারা লাগানো থেকে হারভেস্টিং পর্যন্ত সময় লেগেছে ২ মাস। সাধারণ ক্যাবেজের তুলনায় এর ফলন বেশি। ম্যাচিউর হওয়ার পরও সতেজ ও মচমচে থাকায় এর পাতাও পশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়।’
গবেষণার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে অধ্যাপক বলেন, ‘পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ নতুন সবজিটির চাষাবাদকে কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয় করে তোলা এবং তা উৎপাদন ও বিতরণের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য। এ গবেষণার মাধ্যমে কৃষকদের আধুনিক চাষাবাদ প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে, যাতে তারা এই নতুন ফসলের সর্বোচ্চ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারেন। একইসাথে, এটি মানুষের পুষ্টিচাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং স্থানীয় কৃষি ও অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’