বাকৃবিতে দুই কোটি টাকার গবেষণা প্রকল্পের উদ্বোধন

প্রতিনিধি, বাকৃবি:বাকৃবিতে ফল ও সবজির সংরক্ষণ ক্ষতি কমানো, নাইল তেলাপিয়ার উৎপাদন এবং জলবায়ুু অভিযোজন বৃদ্ধি ও মুরগির এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের দেশীয় স্ট্রেইন নিষ্ক্রিয়করণ করে ভ্যাকসিন তৈরি-বিষয়ক তিনটি গবেষণা প্রকল্পের উদ্বোধন কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রকল্প তিনটিতে মোট আর্থিক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে দুই কোটি টাকা।

গতকাল শনিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলন কক্ষে ওই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় উপস্থাপিত প্রতিটি প্রকল্পের মেয়াদকাল ১৮ মাস (জুলাই ২০২৩ থেকে ডিসেম্বর ২০২৪)। প্রকল্পগুলোর উপস্থাপনা শেষে মুক্ত আলোচনা পর্ব পরিচালনা করা হয়।

কর্মশালার শুরুতেই ‘বাংলাদেশে ফল ও সবজির সংরক্ষণ ক্ষতি কমানোর জন্য হিমাগার সমস্যার সমাধান’ শীর্ষক একটি উপস্থাপনা প্রদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিশক্তি ও যন্ত্র বিভাগের অধ্যাপক চয়ন কুমার সাহা। এসময় তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে মোট ৭২ প্রজাতির ফল এবং ১৫৬ প্রজাতির সবজি উৎপাদিত হয়। সবজি উৎপাদনে দেশের অবস্থান তৃতীয় এবং ফল উৎপাদনে দশম হলেও রপ্তানিতে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। এতে সংরক্ষণজনিত ক্ষতি হয় প্রায় ২২ থেকে ৪৪ শতাংশ। এই ক্ষতি কমাতেই হর্টিকুল (হর্টিকালচার এবং কোল্ড স্টোরেজ পদ্ধতির সমন্বয়) পদ্ধতির মাধ্যমে নির্ধারিত কিছু ফল ও সবজির ওপরে গবেষণা করা হবে। এতে প্রায় ৫০ শতাংশ সংরক্ষণ ক্ষতি কমানো যাবে। সংরক্ষিত উৎপাদন বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

পরবর্তীকালে উৎপাদন ও জলবায়ুু অভিযোজন বৃদ্ধির জন্য নাইল তেলাপিয়া (নাইলোটিকা) মাছের একটি উচ্চ-ফলনশীল জাতের বিকাশ বিষয়ে উপস্থাপনা প্রদান করেন ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ গোলাম কাদের খান। এসময় তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তেলাপিয়ার বিশুদ্ধ প্রজাতি নিয়ে এসে মলিকুলার ট্যুলস ব্যবহার করে প্রজনন ঘটিয়ে অধিক উৎপাদনশীল প্রজাতি তৈরি করা হবে। এতে উৎপাদন প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।

সবশেষে বাংলাদেশে মুরগির এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের একটি নিষ্ক্রিয় ভ্যাকসিনের উন্নয়ন বিষয়ক নিজস্ব গবেষণার ওপর আলোকপাত করেন প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. জাহান আরা বেগম। তিনি বলেন, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের দেশীয় স্ট্রেইন থেকে তৈরি করা হবে ওই ভ্যাকসিন। গবেষণা সফলভাবে সম্পন্ন হলে ভ্যাকসিনের আর কোনো অপ্রতুলতা থাকবে না।

উপাচার্য বলেন, আমাদের গবেষণার অবস্থান প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এগিয়ে। তবে বরাবরই গবেষণাগুলোর কার্যক্রম নির্ধারিত হয় প্রকল্পের অর্থায়নের ওপর। এতে গবেষণাগুলো কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারে। উন্নত মানের শিক্ষা ও গবেষণা নিশ্চিত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক হলো যথাযথ পরিবেশ। এটি নিশ্চিত করতে আমাদের কাজ করতে হবে।

কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. মঞ্জুরুল আলমের সভাপতিত্বে কর্মশালার প্রধান অতিথি ছিলেন ডিবিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন। অনুষ্ঠানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এমদাদুল হক চৌধুরী।