বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই: বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। পেঁয়াজ আমদানি ক্ষেত্রে এলসি মার্জিন ও সুদের হার কমানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকও পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশের স্থল ও নৌবন্দরগুলোতে আমদানিকৃত পেঁয়াজ দ্রুত ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খালাসের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বন্দর কর্তৃপক্ষ নিয়েছে এবং ফোনে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব পদক্ষেপের কথা জানানো হয়েছে।
‘দেশে কোনো বাজারেই পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। ভোক্তাদের আতঙ্কিত হবার কোনো কারণ নেই। মূল্য দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে আসবে’ বলে মন্ত্রণালয়ের তরফে দাবি করা হয়েছে।
তথ্যমতে, ভোমরা, সোনামসজিদ, হিলি ও বেনাপোল বন্দরে পেঁয়াজ আমদানি নির্বিঘ্ন করতে সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। স্থল-নৌবন্দরগুলোতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমদানিকৃত পেঁয়াজ খালাস করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে পেঁয়াজ দ্রুত ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পৌঁছানোর জন্য সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সে সঙ্গে পেঁয়াজ পরিবহন নির্বিঘ্ন করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিংয়ের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের ১০ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া করা হয়েছে।
এদিকে পরিস্থিতি মনিটরিংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা গতকাল থেকে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, যশোর, দিনাজপুর, পাবনা, সাতক্ষীরা, সিরাজগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলার বাজারগুলোয় তদারকি শুরু করেছেন। সে সঙ্গে প্রতিটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এলসির মাধ্যমে মিয়ানমার, মিসর ও তুরস্ক থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বন্দরে খালাস করা শুরু হয়েছে। এছাড়া মিয়ানমার থেকে বর্ডার ট্রেডের মাধ্যমে টেকনাফ বন্দর দিয়ে আমদানিকৃত পেঁয়াজ এবং দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারি হাটগুলোয় বিক্রীত পেঁয়াজ দ্রুত সারা দেশে নির্বিঘ্নে পৌঁছে যাচ্ছে। তাই পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক অবস্থায় আছে।
‘দেশে পেঁয়াজের মূল্য ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ট্রাক সেলে ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোয় ন্যায্যমূল্যে বিক্রি শুরু করেছে’ উল্লেখ করে বলা হয়েছে, রাজধানীতে ১৬টি ট্রাকের মাধ্যমে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪৫ টাকা মূল্যে বিক্রি করা হয়েছে। আজ (বুধবার) থেকে ৩৫ ট্রাকের মাধ্যমে পেঁয়াজ বিক্রি করা হবে। এতে স্বল্প আয়ের মানুষ ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজ কিনতে পারবেন।’
এদিকে সরকারি হিসাবমতে, দেশে বছরে মোট পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২৪ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ২৩ লাখ ৩০ হাজার টন। আর এর মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ পেঁয়াজ স্বাভাবিকভাবেই নষ্ট হয়েছে। পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বছরে আমদানি হয়ে থাকে আট থেকে ১০ লাখ টন। এ হিসেবে দেশে পেঁয়াজের কোনো সংকট নেই। দেশের পেঁয়াজ সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোর পাইকারি হাট-বাজারে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। সারা দেশের হাট-বাজারগুলোতে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ পর্যাপ্ত, বাজারে দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজের সরবরাহের কোনো ঘাটতি নেই।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে পেঁয়াজ আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে বেশ কয়েকটি সভা করেছে, ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ আমদানি বৃদ্ধি ও নৈতিকতার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনার অনুরোধ করা হয়েছে। কোনো ব্যবসায়ী পেঁয়াজ মজুত, কৃত্রিম উপায়ে মূল্য বৃদ্ধির চেষ্টা, স্বাভাবিক সরবরাহে ব্যাঘাত সৃষ্টি করলে তাদের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, সহজ পরিবহনের কারণে সারা বছরই ভারত থেকে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। ভারতের মহারাষ্ট্র ও অন্য এলাকায় বন্যার কারণে পেঁয়াজের ফলন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে কিছুদিন আগে রফতানির ক্ষেত্রে ভারত প্রতি টন পেঁয়াজের মিনিমাম এক্সপোর্ট প্রাইস (এমইপি) নির্ধারণ করে দিয়েছে। আগে প্রতি টন পেঁয়াজের আমদানি মূল্য ছিল প্রায় ২৫০ মার্কিন ডলার। গত ১৩ সেপ্টেম্বর ভারত সরকার তা ৮৫০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করে দেয়। এরপর গত ২৯ সেপ্টেম্বর বিকালে ভারত কর্তৃপক্ষ পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণা করে। বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশ মায়ানমার থেকে এলসি এবং বর্ডার ট্রেডের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেছে। বাংলাদেশ মিসর ও তুরস্ক থেকেও এলসির মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি শুর করেছে। উক্ত পেঁয়াজ দেশে পৌঁছাতে শুরু করেছে, অল্প সময়ের মধ্যে দেশের বাজারে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ স্বল্পমূল্যে পাওয়া যাবে। তাছাড়া ভারত থেকে এবং দেশে উৎপাদিত নতুন পেঁয়াজ শিগগিরই বাজারে আসবে।