নিজস্ব প্রতিবেদক : কর অব্যাহতি তুলে নেয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে বহুল আলোচিত মৎস্য ও পোলট্রি খাতের বিদু্যুমান আয়কর সুবিধা বাতিল করে স্বাভাবিক করহার প্রবর্তনের কথা ভাবছে অন্তর্বর্তী সরকার।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এসব খাত থেকে আয় করলে তার ওপর তিন থেকে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ হারে আয়কর প্রদান করতে হয়। তবে আগামী বাজেটে এনবিআরের নতুন পদক্ষেপের পরে এসব খাতের আয়ের ওপর নিয়মিত হারে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কর দিতে হতে পারে।
এ তালিকায় আসতে পারে হাঁস-মুরগি ও চিংড়ি হ্যাচারির আয়ও। এ ছাড়া তালিকায় যুক্ত হতে পারেÑপোলট্রির পেলেটেড ফিড উৎপাদন, গবাদিপশু, চিংড়ি ও মাছের পেলেটেড ফিড উৎপাদন, বীজ উৎপাদন ও বিপণন, গবাদিপশুর খামার, দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্যের খামার, ব্যাঙ উৎপাদন খামার, হর্টিকালচার, তুঁত চাষ, মৌমাছি চাষ প্রকল্প, রেশম গুটিপোকার খামার, মাশরুম খামার ও ফ্লোরিকালচারের আয়।
বিশেষজ্ঞরা এ উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তবে প্রকৃত খামারিদের কিছুটা সুরক্ষার পক্ষে মত দিয়েছেন তারা। পাশাপাশি পোলট্রি, মাছ ও গবাদিপশুর খাদ্য উৎপাদনের ওপর কর বাড়লে এসব খাদ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে বলেও তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
এনবিআর সূত্র জানায়, বর্তমানে যে আদেশ (এসআরও) দুটির মাধ্যমে এই কর অব্যাহতি প্রদান করা হচ্ছে, সেগুলো পর্যালোচনার আওতায় আনা হয়েছে এবং বাতিল করা হতে পারে।
বর্তমানে এসব খাত থেকে বার্ষিক আয় হলে প্রথম ১০ লাখ টাকার ওপর পাঁচ শতাংশ, পরবর্তী ১০ লাখ টাকার ওপর ১০ শতাংশ এবং অবশিষ্ট আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর দিতে হয়। অথচ এর বিপরীতে ব্যক্তি করদাতাদের সর্বোচ্চ করহার বর্তমানে ৩০ শতাংশ এবং অধিকাংশ কোম্পানিকে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ হারে কর দিতে হয়।
মূলত দেশের মৎস্য, পোলট্রি ও গবাদিপশু খাতে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে এই কম করহার সুবিধা চালু হয়েছিল। তবে অভিযোগ রয়েছে, এ সুবিধার সুযোগ নিয়ে অনেকে মৎস্য খাতের আয় দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ কালোটাকা সাদা করেছেন। বিশেষ করে প্রভাবশালী রাজনীতিক, আমলা ও ব্যবসায়ীরা এই সুবিধার অপব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে এ খাতে কম হারে কর আদায়ের ফলে সরকার কোম্পানি পর্যায়ে ১৪৩ কোটি টাকা এবং ব্যক্তি পর্যায়ে ২ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকার করছাড় দিয়েছে।
বর্তমানে ট্যাক্স ইন্টেলিজেন্স কর্মকর্তারা এসব খাতে বড় অঙ্কের আয় দেখানো শতাধিক ব্যক্তির তথ্য নিয়ে কাজ করছেন। সূত্র জানায়, কয়েকজন রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী শত শত কোটি টাকার আয় মৎস্য খাতের বলে দেখিয়ে কর সুবিধা নিয়েছেন। এতে একদিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে কালোটাকার মালিকরা কম কর দিয়ে বৈধতার সুযোগ নিচ্ছেন।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, সাবেক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস তিন বছরে মৎস্য খাত থেকে ৯৫ কোটি টাকার বেশি আয় দেখিয়েছেন। তিনি ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয়।
এনবিআর সূত্র জানায়, অতীতেও এনবিআর আয়কর সুবিধা বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছিল, কিন্তু রহস্যজনক কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি।
এ বিষয়ে এনবিআরের সাবেক সদস্য (আয়কর নীতি) ড. সাইদ মো. আমিনুল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এসব খাত হ্রাসকৃত কর সুবিধা পাচ্ছে। এখন সময় এসেছে তাদের রেগুলার রেটে কর প্রদান করার।’
তিনি আরও বলেন, ‘মৎস্য খাতের আয় দেখিয়ে কম কর দিয়ে অনেকেই কালোটাকা বৈধ করেছেন। স্বাভাবিক করহার প্রবর্তনে এ সুযোগ বন্ধ হবে।’