Print Date & Time : 9 July 2025 Wednesday 1:30 am

বাজেটে নেই সুষ্ঠ নির্বাচন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নির্দেশনা

জাফরুল্লাহ চৌধুরী :

গতকালের পর

ইউনিয়ন পর্যায়ে দুই বছর কর্মরত চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে পরীক্ষা পাসের পর জুনিয়র বিশেষজ্ঞ পদে উন্নত করুন এবং ৫০ হাজার টাকা প্রান্তিক ভাতা, ৫০ হাজার টাকা বিশেষজ্ঞ ভাতা, বিনা ভাড়ায় বাসস্থান সুবিধা, ২৫ হাজার টাকা যাতায়াত ভাতা এবং ৫০ হাজার টাকা শিক্ষকতা ভাতার সুবিধা এবং স্থানীয়ভাবে নিয়োগ ব্যবস্থার প্রবর্তন করলে স্থানীয় পর্যায়ে চিকিৎসক রাখা সম্ভব হবে। ইউনিয়ন পর্যায়ে সুষ্ঠু চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হলে তাদের জন্য ২৫০-৩৫০ বর্গফুটের একক বাসস্থান, ৫০০-৮৫০ বর্গফুটের ২০টি পারিবারিক বাসস্থান, শিক্ষার্থীদের ডরমিটারি, ৩০ শয্যার হাসপাতাল ও বহির্বিভাগ সম্প্রসারণ, ইমারজেন্সি, এক্স-রে ব্যবস্থা একাধিক অপারেশন থিয়েটার ও ল্যাবরেটরির জন্য প্রায় ৩৫ হাজার বর্গফুট নতুন নির্মাণ করতে হবে, সঙ্গে নিরাপত্তা বেষ্টনী, ইলেকট্রিক সাব স্টেশন ও নলকূপ সংস্কার করতে হবে। এসব নির্মাণের জন্য গড়ে প্রতি ইউনিয়ন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে মাত্র ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রয়োজন হবে। এক হাজার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পুনর্নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পর্যাপ্ত হবে।

চার কোটি টাকার বিবিধ যন্ত্রপাতি ও প্রতিষ্ঠিত জনবলের ব্যবস্থা করলে ৫০-এর অধিক আধুনিক পদ্ধতিতে রোগ নির্ণয় পরীক্ষা করা যাবে এবং একমাত্র মস্তিষ্ক, হƒৎপিণ্ড ও ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি ছাড়া অন্য সকল প্রকার সার্জিকেল, গাইনোলজিক্যাল, চক্ষু ও কানের অপারেশন নিরাপদে করা সম্ভব হবে। ব্যাপকসংখ্যক মেডিকেল ছাত্র ও তরুণ চিকিৎসক উন্নতমানের চিকিৎসা সেবায় দক্ষতা অর্জন করতে পারবে। পেশাজীবীদের প্রদেশ/জেলা কর্তৃপক্ষ মনোনীত করলে চিকিৎসকরা বিভিন্ন প্রণোদনায় কারণে কাজের আনন্দে ইউনিয়ন পর্যায়ে সার্বক্ষণিকভাবে অবস্থান করবেন, জনগণকে উন্নত সেবা দেবেন। ১২ কোটি প্রান্তিক নাগরিকের জন্য প্রথম বছরে মূলধনীয় ও অমূলধনীয় ব্যয় এ বছরের বাজেটের সুদ পরিশোধের মাত্র ১/৫ অংশে বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। আকর্ষণীয় বেতন-ভাতায় খরচ হবে প্রতি বছর মাত্র চার কোটি টাকা। ব্যবস্থাপনার মৌলিক পরিবর্তন ব্যতিরেকে কেবল বরাদ্দ বৃদ্ধিতে কোনো কাজ হবে না কেবল অর্থের অপচয় ও দুর্নীতি বাড়াবে মাত্র।

মেডিকেল ছাত্ররা তিন প্রফেসনাল সময়কালে এক মাস করে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে অবস্থান করে জ্ঞান অর্জন করবে। এতে বছরে সরকারের মাত্র ২৪ কোটি ব্যয় বৃদ্ধি হবে। বর্তমানে কেবল গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ শিক্ষা কার্যক্রমে নিবিড়ভাবে এই নিয়ম অনুস্মরণ করা হয়। এ পদ্ধতি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক উচ্চ প্রশংসিত হচ্ছে।

ঙ. প্রধানমন্ত্রী সাহস করে সঠিক কাজ করুন

কয়েক বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ সদ্যপাস চিকিৎসকদের ইন্টার্নশিপের মেয়াদ এক বছরের স্থলে দুই বছর স্থির করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিলেন। তরুণ চিকিৎসকরা প্রথম বছর নিজ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং দ্বিতীয় বছর ইউনিয়ন ও উপজেলা হাসপাতালে কাজ করবেন। উল্লেখ্য, ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রদের সামান্য চাপে আপনি এক মাসের মধ্যে অত্যন্ত দেশ উপযোগী প্রজ্ঞাপনটি প্রত্যাহার করে নেন। দেশের সর্বত্র সমমানের উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হলে চিকিৎসক ও অন্যান্য সেবা কর্মীদের ২৪ ঘণ্টা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। পূর্বতন প্রজ্ঞাপনটির প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। নতুবা সদ্য আমদানিকৃত আধুনিক যন্ত্রপাতিসমূহ বাস্কবন্দি হয়ে পড়ে থাকবে, জং ধরে যাবে। বিনা ব্যবহারে ওয়ারেন্টি সময় পার হয়ে যাবে।

১৯ জুন ২০২২ দৈনিক আমাদের সময়ে পূর্ণ পৃষ্ঠাব্যাপী ভোলা জেলার স্বাস্থ্য অব্যবস্থাপনার দুর্ভাগ্যজনক চিত্র প্রকাশিত হয়েছে। যার বিভিন্ন শিরোনাম বিশেষ প্রণিধানযোগ্য। টেকনিশিয়ানের অভাবে ইসিজি বন্ধ, এক্স-রে মেশিন আছে নেই টেকনিশিয়ান, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় উদ্বোধনের পর থেকে হাসপাতালে সিজার অপারেশন হচ্ছে না, পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে নতুন হাসপাতাল চালু হয়নি, টাকা ছাড়া চরফ্যাসনে সেবা মিলে নাÑসবাই হাত পাতে ইত্যাদি মূল কথা, নিয়োগ পরিচালনার মৌলিক নীতির পরিবর্তনের জন্য কতক বিনিয়োগ করতে হবে, ঢাকাকেন্দ্রিক প্রশাসন ভেঙে স্থানীয়ভাবে নির্বাচিত ব্যক্তিদের কাছে প্রশাসন, নিয়োগ উন্নতি ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দিতে হবে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণে ক্ষমতাচ্যুতি ঘটে না। সুশাসন এবং সেবায় আনন্দ প্রতিষ্ঠিত হয়।

চ. ১৯৮২ সালের জাতীয় ওষুধনীতি উন্নতমানের সুলভ ওষুধের নিয়ামক

১৯৮২ সালের জাতীয় ওষুধনীতির বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি অনুসরণ করলে দেশে প্রস্তুত ওষুধের বিক্রয়মূল্য ৪০ শতাংশ-৬০ শতাংশ কমে আসবে। কোম্পানিগুলোকে ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করতে দেয়া অনৈতিক এবং জনসর্বসাধারণকে প্রতারণার মাধ্যম মাত্র।

ছ. একটি সংস্কার দুর্নীতি কমাবে, কারাগার মানবিক হবে

প্রতিরক্ষা ও সশস্ত্র বাহিনীকে উল্লেখ্যযোগ্য বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। আর্মি মেডিকেল সার্ভিস (এএমসি) পরিচালিত ক্যান্টনমেন্ট হাসপাতালগুলোর সেবার সুনাম আছে। তাদের অধীনে পুলিশ হাসপাতাল ও কারাগার হাসপাতালের পরিচালনা ব্যস্ত করুন। তাদের নিয়ন্ত্রিত ৫টি সামরিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল আছে। অভিযুক্তদের এএমসি পরিচালিত হাসপাতালে সব ধরনের চিকিৎসা নেয়া উচিত। বিএসএমএমইউতে কেবিন দিয়ে তাদের রাজার হালে রাখা বিচারের নামে প্রহসন মাত্র।

প্রথম বছর এক-পঞ্চমাংশ অর্থাৎ ১ হাজার পরীক্ষামূলক ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সংস্কার, মেরামত, নির্মাণের ও উন্নয়নের জন্য ১৬ হাজার কোটি টাকা মূলধনীয় বরাদ্দ পর্যাপ্ত হবে। মেডিকেল, নার্সিং ও অন্যান্য সহকারীদের ট্রেনিং নিমিত্তে অবস্থান সময়ে আহার বাসস্থান বাবদ প্রতি বছর ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রয়োজন হবে। প্রশিক্ষিত চিকিৎসকদের প্রান্ত্রিক ভাতা, শিক্ষকতা ভাতা, যাতায়াত ভাতা, জুনিয়র বিশেষ ভাতা প্রভৃতি প্রণোদনার জন্য অতিরিক্ত ৯০০ কোটি টাকা প্রতি বছর বরাদ্দের প্রয়োজন হবে; যাতে সহজলভ্য ও প্রাপ্য হবে আধুনিক সুষ্ঠু স্বাস্থ্যব্যবস্থা। প্রয়োজন মৌলিক পরিবর্তন। এ নিমিত্তে এই বছর থেকে সব মেডিকেল কলেজ ছাত্রভর্তি দ্বিগুণ করা প্রয়োজন। এই রূপ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবলের ন্যূনতম ১/৫ অংশ বিদেশে কাজ করে সরকারের বিনিয়োগ অধিক ডিভিডেন্ড অন্যান্য উন্নত দেশগুলো থেকে বৈধ পথে দেশে পাঠাবেন। এমন কি জগ-এ থেকেও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা সমধিক।

অতিরিক্ত বরাদ্দ কোথা থেকে জোগাড় হবে? মদ, মাদকদ্রব্য, পান-জর্দা, বিড়ি ও প্রসাধনীর বর্ধিত শুল্ক থেকে।

উপরোক্ত ভয়ানক ক্ষতিকর সামগ্রী ব্যবহার নিরস্ত করার জন্য প্রতিনিয়ত দেশের সব শিক্ষা ব্যবসায়ী, ধর্মীয়, পরিবহন, সভা-সমিতিতে ব্যাপক প্রচারণার পাশাপাশি এসব সামগ্রীর ওপর এরূপ হারে বিভিন্ন কর, শুল্ক, অগ্রিম আয়, সম্পূরক কর, পরিবেশ বিধ্বংসী কর, স্বাস্থ্যসেবা অতিরিক্ত ব্যবহার পান পিক দিয়ে রোগ-জীবাণু বিস্তার রোধ প্রভৃতি কর এরূপ পর্যায়ে প্রতিটি বিড়ি শলাকার ন্যূনতম মূল্য হবে ৫ টাকা। নি¤œস্তরের প্রতি শলাকা সিগারেট ৩০ টাকা। উচ্চস্তরের বিদেশি প্রতি শলাকার সিগারেটের মূল্য হবে ১০০ টাকা, ১০ গ্রাম গুলের মূল্য বিক্রয় মূল্য হবে ২০০ টাকা। উপরোক্ত ক্ষতিকর সামগ্রী উৎপাদন কোম্পানির ধার্য আয়কর উচিত হবে ব্যাংক, বিমা কোম্পানির দ্বিগুণ। বরাদ্দ প্রয়োজন সুষ্ঠু নির্বাচন, নির্বাচিত স্থানীয় সরকার ও জবাবদিহিমূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে।

তথ্যসূত্র:

১. জাতীয় বাজেট বক্ততা ২০২২-২৩: কভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন, অর্থ মন্ত্রণালয়। ৯ জুন ২০২২। -মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি, ২০২২-২৩ থেকে ২০২৪-২৫, ঐ

-জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদন ২০২২-২৩, ঐ

-সম্পূরক আর্থিক বিবৃতি ২০২১-২২, ঐ

-বার্ষিক বাজেট ২০২২-২৩ : বাজেটের সংক্ষিপ্তসার, ঐ

-বার্ষিক বাজেট ২০২২-২৩ : বার্ষিক আর্থিক বিবৃতি, ঐ

২. 2. Bangladesh Customs Tariff Solution ২০২১-২২। (শেষ)

ট্রাস্টি, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র