সাম্প্রতিক বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে এলোমেলো হয়ে গেছে মানুষের জীবন-জীবিকা, ব্যবসা-বাণিজ্য। বাংলাদেশেও ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে। গরিব জনগোষ্ঠী জীবন-জীবিকা বাঁচাতে রীতিমতো লড়াই করছে। করোনা মহামারির মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট আলোচনা বেশ গুরুত্ব পেয়েছে। এবারের বাজেটে প্রকৃতি-পরিবেশ ও স্বাস্থ্য খাতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। নির্বাচনী ইশতেহারে জলবায়ু ও পরিবেশ ইস্যুকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। সে অনুযায়ী বর্তমান সরকার নদী রক্ষা, বদ্বীপ পরিকল্পনা, জলবায়ু প্রভাব মোকাবিলায় কাজ করে যাচ্ছে। করোনা মহামারিকালে সারা পৃথিবীতে প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। বলা হচ্ছে, প্রকৃতির প্রতি মাত্রাতিরিক্ত অত্যাচারের কারণেই পৃথিবীতে বিভিন্ন মহামারি আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে এবং হচ্ছে! প্রকৃতি-পরিবেশ ভালো না থাকলে বিভিন্ন রোগ বিস্তারের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতে তার প্রভাব পড়ে! স্বাস্থ্য খাতের সঙ্গে প্রকৃতি-পরিবেশের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। কেননা প্রকৃতি-পরিবেশের বিরূপ প্রভাব শেষমেশ কোনো না কোনোভাবে স্বাস্থ্য খাতের ওপরই পড়বে! প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষার মাধ্যমে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় থাকলে সবার জন্যই লাভ।
আশা করি, এবারের বাজেটে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও পরিবেশগত অন্যান্য সমস্যাগুলো সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকবে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে কোনো দেশ-ই এখন নিরাপদ নয়! পৃথিবীব্যাপী প্রকৃতি-পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। মূলত জলবায়ুগত সমস্যার কারণে উন্নয়ন টেকসই ভিত্তি পাচ্ছে না। দারিদ্র্য দূরীকরণসহ অন্যান্য উন্নয়নে জলবায়ু পরিবর্তন বাধা হিসেবে কাজ করছে! জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যার কারণে উপকূলীয় এলাকা সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলের নদ-নদীগুলোতে লবণাক্ততার পরিমাণ বাড়ছে। ফলে বিভিন্ন কারণে মানুষ শহরমুখী হতে বাধ্য হচ্ছে। বর্তমান বাস্তবতায় জলবায়ুগত দুর্যোগ তথা ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, ভূমিধস, জলোচ্ছ্বাস ও লবণাক্ততায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোকে ব্যাপকভাবে ভুগতে হচ্ছে। এর ফলে জীববৈচিত্র্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব কমানো জরুরি হয়ে পড়েছে। দেশের নদ-নদীগুলো অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। নদীমাতৃক এদেশের নদ-নদী না বাঁচলে বাংলাদেশের নামক বদ্বীপটার অস্তিত্ব রক্ষা কঠিন হয়ে পড়বে। শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, মাটিদূষণ ও পানিদূষণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েই চলেছে। শহরাঞ্চলে শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বায়ুদূষণসহ সব ধরনের দূষণে শিশুদের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দূষণজনিত রোগব্যাধি নগরবাসীর জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। প্লাস্টিক ও নিষিদ্ধ পলিথিন দূষণের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার বাজেটে থাকতে হবে। প্লাস্টিকের রিসাইক্লিং ব্যবস্থার ওপর জোর দিতে হবে। বনভূমি বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। তামাক জাতীয় পণ্যের ব্যবহার কমাতে পরিকল্পনা দরকার। এ ছাড়া পাহাড়, বন রক্ষায় সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকতে হবে। করোনাকালে প্রকৃতির ইতিবাচক পরিবর্তন টেকসই ভিত্তি পাক, প্রকৃতি-পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকুকÑএটাই কাম্য।
সাধন সরকার
পরিবেশকর্মী, নারিন্দা, ঢাকা