বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য তিন সুখবর

নিজস্ব প্রতিবেদক : দীর্ঘ সময় ধরে বাজেটে অবহেলিত থাকা দেশের পুঁজিবাজার খাতের জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছরে করহার কমানোসহ বেশ কিছু সুবিধা রাখা হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট বক্তৃতায় গতকাল এই সুবিধাগুলোর ঘোষণা দেন।

তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর ব্যবধান আড়াই শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘দেশি-বিদেশি লাভজনক ও নামিদামি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে লিস্টেড এবং নন-লিস্টেড কোম্পানির করহারের ব্যবধান ৫ শতাংশ হতে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।’

ব্রোকারেজের উৎসে কর কমানোর ঘোষণা দিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ও লেনদেন বৃদ্ধি উৎসাহিত করতে সিকিউরিটিজ লেনদেনের মোট মূল্যের ওপর ব্রোকারেজ হাউসগুলোর কাছ থেকে উৎসে কর সংগ্রহের হার শূন্য দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কর রেয়াত সুবিধা পাওয়ার শর্তও শিথিল করা হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কর পরিপালন সহজ করার জন্য লিস্টেড কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে আড়াই শতাংশ কর হার সুবিধা পাওয়ার শর্ত শিথিল করে আয়, ব্যয় ও বিনিয়োগের পরিবর্তে কেবল সব ধরনের আয় ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে সম্পন্ন করার শর্ত আরোপ করা হয়েছে।’

মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার ১০ শতাংশ কমানো হয়েছে। সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী (ইন্টারমেডিয়ারিজ) হিসেবে কাজ করা মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার সাড়ে ৩৭ শতাংশ হতে কমিয়ে সাড়ে ২৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।’

বিগত সরকারের অনিয়ম, কারসাজি ও দুর্নীতির কারণে দেশের পুঁজিবাজার প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘পুঁজিবাজারে পুনরায় গতি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোতে সরকারের শেয়ার কমিয়ে পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্তকরণ, বেসরকারি খাতের দেশীয় বড় কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য উৎসাহ প্রদান, বাজারে কারসাজি রুখতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা এবং ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরতা কমাতে পুঁজিবাজার থেকে বন্ড ও ইক্যুইটির মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহের সুযোগ বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়ে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের মতে, পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের ফলে বিনিয়োগকারীরা এতটাই ভীত হয়ে পড়েছেন যে, তারা নতুন করে বিনিয়োগ করতে সাহস পাচ্ছেন না। এমনকি অনেকেই তাদের বিদ্যমান বিনিয়োগ থেকে সরে আসছেন। ফলে লেনদেনের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। অধিকাংশ ব্রোকারেজ হাউসে এখন বিনিয়োগকারীদের ভিড় নেই বললেই চলে।

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য বাজার সংশ্লিষ্টরা সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তাদের মতে, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং বাজারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা অপরিহার্য। অন্যথায় এই সংকট আরও গভীর হতে পারে এবং দেশের অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।