Print Date & Time : 5 July 2025 Saturday 5:42 am

বাজেট এলেই যেন নিত্য পণ্যের দাম না বাড়ে

‘বিস্কুট, পাউরুটি, কেকের প্যাকেট ছোট হচ্ছে; কষ্টে শ্রমজীবী মানুষ’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে একটি সহযোগী দৈনিকে, তাতে প্রকৃত অবস্থাই সামনে এসেছে বলে ধারণা। তথ্য মতে, ভ্যাট আরোপের পর প্রতিটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হয় প্যাকেটে পণ্যের পরিমাণ কমিয়েছে, নয়তো দাম বাড়িয়েছে। পাউরুটি বিস্কুট কেকের মতো পণ্যে শুল্ক-কর বসানো হলে তা মূলত খেটে খাওয়া গরিব মানুষের কাছ থেকে আদায় করা হয়। কারণ, শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষের বিশাল অংশ দিনের বেলায় ভাতের সস্তা বিকল্প হিসেবে এসব খাবারের ওপর নির্ভরশীল হচ্ছে।

এমনিতেই উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে চরম সংকটে সীমিত আয়ের শ্রমজীবী বিশেষ করে রিকশাচালক, দিনমজুর, শিক্ষার্থীসহ নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত নাগরিকরা। বাজেট ঘোষণার সময় এলেই উৎপাদক, পরিবেশকরা পণ্যের দাম বাড়ানোর জন্য প্রস্তুতি নেন। সুযোগসন্ধানী আগেই দাম বাড়িয়ে দেন। বাজেট ঘোষিত হওয়ার পর আরেক দফা বাড়ান। নীতিনির্ধারকরাও নিত্যপণ্যের ওপর কার বাড়ানোর মধ্যে সমাধান খোঁজেন। কিন্তু রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা, আহরণকারী প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় তেমন মনোযোগ দেন না।

বাজেট ঘোষণার আগে নীতিনির্ধারকরা বলে থাকেন, নতুন বাজেটে মানুষের ওপর করের বোঝা বাড়ানো হবে না। তবে করের আওতা বাড়িয়ে রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হবে। সেটিই করা উচিত, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।

আমরা বিশ্বাস করি বাজেট প্রণয়নে আপামর জনতার প্রয়োজন গুরুত্ব পাবে। গত কয়েক বছর বাজেট বরাদ্দে প্রয়োজনীয়তার চেয়ে রাজনীতি গুরুত্ব পেয়েছে। কায়েমি স্বার্থ বরাদ্দ বিভাজনকে প্রভাবিত করে। বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, তা গণতান্ত্রিক সমাজে থাকা উচিত নয়। অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তাই আসন্ন জাতীয় বাজেটে গণমানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন থাকবে। যেন প্রমাণ হয়, মানুষের জন্য বাজেট, বাজেটের জন্য মানুষ নয়।

বাজেটকে গণমুখী করতে বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য হতে হবে এবং তাতে গণমানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন থাকতে হবে। শুধু মধ্যম আয়ের দেশে কিংবা উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করা নয়, সাধারণ মানুষ সুফল না পেলে উচ্চ প্রবৃদ্ধি মাথাপিছু নিছক সংখ্যায় পরিণত হবে। বেশিসংখ্যক দরিদ্র মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে আনলে দারিদ্র্য কমবে এবং কম দেখানো যাবে, কিন্তু তা স্থায়ী সমাধান নয়। মানুষ যেন কর্মসংস্থানের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল হতে পারে, সে লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

আমাদের মন্ত্রণালয়গুলো বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে বরাবরই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। ফলে ঘোষিত বাজেটে উন্নয়ন খাতে টাকা বরাদ্দ করা হয়, বড় অংশই অব্যয়িত থেকে যায়। বাজেট প্রণয়ন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, বাজেট যথাসময়ে বাস্তবায়নও গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে বাজেট প্রণয়নই বেশি গুরুত্ব পায়, যথাসময়ে বাস্তবায়ন নয়। ফলে বাজেট থেকে প্রত্যাশিত ফল মেলে না। এ প্রবণতা থেকে বেরিয়ে এসে বাস্তবায়নে মনোযোগ বাড়াতে হবে। তবেই সুফল পাবে সাধারণ মানুষ।