নিজস্ব প্রতিবেদক: বাজেটের ঘাটতি পূরণ করতে বৈদেশিক উৎস ও ব্যাংক থেকে ঋণ নেয় সরকার। তবে অর্থগুলো অপচয় না করার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনা আরও শক্তিশালী করতে হবে বলে মনে করেন তিনি। গতকাল বিআইবিএম সার্টিফাইড এলাইনাই অ্যাসোসিয়েশেন আয়োজিত ‘বাজেট ও ব্যাংক ঋণ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন সাবেক এই গভর্নর।
সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকগুলো সরকারকে ঋণ দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। ক্ষুদ্র ঋণ দিতে আগ্রহী নয়। এটা আসলে দেশের জন্য ক্ষতি। কারণ, সরকারকে ঋণ দিলে সহজেই মুনাফা করতে পারে ব্যাংক। অল্প পরিশ্রমে লভ্যাংশ পাওয়া যায়। কিন্তু এসএমই ঋণ দিলে ব্যাংকের পরিশ্রম বেশি হলেও কর্মসংস্থান তৈরি হয়ে। যেটা দীর্ঘমেয়াদে দেশের জন্য কল্যাণকর।
তিনি আরও বলেন, ‘সত্যিকার অর্থেই আমাদের ঋণের বোঝা বাড়ছে। তবে লক্ষ্য করতে হবে আমাদের সক্ষমতা কতটুকু। অনেক দেশ ঋণ নেয়ার জন্য প্যাডেল (উদ্বুদ্ধ) করবে। মেগা প্রকল্পের জন্য ঋণ দিতে চাইবে। তবে বিষয়গুলো সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা করা উচিত। প্রয়োজন অনুযায়ী ঋণ নিয়ে তার ব্যবহার নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। অপচয় রোধ করতে হবে।’
জ্যেষ্ঠ এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিলে মনিটরি পলিসি (মুদ্রানীতি) দুর্বল হয়ে পড়ে। বাজেটে নির্ধারিত অনেক অর্থ অপচয় হয়। এটা কমাতে হবে। অপচয় মোটেও ঠিক হবে না।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, সম্প্রতি বেসরকারি ঋণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা অর্থনীতির জন্য সুখবর। কিন্তু আসলেই বেসরকারি ঋণ বাড়ছে নাকি ডলারের দাম বৃদ্ধিতে এলসি খরচ বাড়ার কারণে খরচ বেশি হচ্ছে তাও দেখতে হবে। তিনি আরও বলেন, করোনার সময়ে লক্ষ্য করেছি ব্যাংকগুলো প্রণোদনার ক্ষুদ্র ঋণ দিতে আগ্রহী নয়। কিন্তু এখানেই বেশি কর্মসংস্থান তৈরি হয়। বারবার সতর্ক করেও ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণে শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি কোনো ব্যাংক। কিন্তু পোশাক খাতে বৃহৎ ঋণ ঘোষণা পরপরই বিতরণ শেষ। বিষয়গুলো সবই বাজেটের আগে বিবেচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ বিষয়ে লিগ্যাল ইকোনমিস্ট এম এস সিদ্দিকী বলেন, সাধারণ জনগণের জন্য সঞ্চয়পত্রকে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে রাখা হয়েছে। তবে এই সুবিধা আসলে কারা পাচ্ছে? সাধারণ মানুষ, নাকি অন্য কেউ। এ নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। আমার মতে খরচ কম করলেই লোন করতে হবে কম।
মেট্ররেলের একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, কয়েকটা রেলের বগি আনতে পরিদর্শনের জন্য কয়েকজন কর্মকর্তা বিদেশে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই দেশের সাড়া না পাওয়ায় তারা যেতে পারেনি। আর সঙ্গে সঙ্গেই প্রজেক্টের সময় বৃদ্ধি করা হলো ছয় মাস। বেড়ে গেল খরচ। এভাবেই প্রকল্পের সময় ও খরচ বেড়ে যায়। এই জায়গাটাতে আরও স্বচ্ছ হওয়া দরকার।
তথ্যমতে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের গৃহীত ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ৮৭ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। করোনার কারণে এ বছর ব্যাংক থেকে কম ঋণ নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ২৬ মে পর্যন্ত ব্যাংক খাত থেকে ২৫ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে ব্যাংক থেকে ৪৫ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা ।
অন্যদিকে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ অব্যাহতভাবে কমছে। তথ্যে মতে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) ১৬ হাজার ৫০৪ কোটি ১৩ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে অর্ধেকেরও কম। গত ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩৩ হাজার ২০২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।