বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাজেটোত্তর এক আলোচনা সভায় বাংলাদেশের অবাস্তবায়িত বাজেটের ব্যাপারে যে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, তাতে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের ধারাবাহিক ব্যর্থতার চিত্র স্পষ্ট। বস্তুত এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে উন্নয়ন বাজেটের একটি অংশ বাস্তবায়ন না হওয়ায়। জাতীয় বাজেট ঘোষণার পর এ ইস্যুতে মানুষের মনে যে আশার সঞ্চার হয়, তা বলা বাহুল্য। উন্নয়ন বাবদ বরাদ্দ দেখে অনেকে ধরে নেয়, এটি অবদান রাখবে তাদের ভাগ্যোন্নয়নে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা কাটছাঁট হওয়ায় এবং সেটিও পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন না হলে আশাহত হয় মানুষ। ফলে শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়নই গতি হারায় না, জীবনাযাত্রার কাক্সিক্ষত মানোন্নয়নও হয় ব্যাহত। আমাদের ধারণা, এতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যগুলো কাক্সিক্ষত সময়ে অর্জন করা কঠিন হবে। তাতে দীর্ঘ মেয়াদে যেসব টার্গেট নিয়ে এগোচ্ছি, সেসবের অনেক ক্ষেত্রে প্রাক্কলনের কাছাকাছিও পৌঁছানো যাবে না। আমরা চাইবো, সংশ্লিষ্টদের প্রচেষ্টা থাকুক বাজেটের শতভাগ বাস্তবায়নে।
সন্দেহ নেই, বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে সরকারের ভাবমূর্তির প্রশ্ন। সেজন্য এটিকে ‘বড়’ করে দেখানোর প্রচেষ্টাই লক্ষ করা যায় সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। কিন্তু অর্থবছর শেষ হওয়ার আগ দিয়ে কাটছাঁট করলে ও পরিকল্পনার শতভাগ বাস্তবায়ন না হলে, তাও পরিণত হয় আলোচনার ইস্যুতে। মনে রাখতে হবে, এতে কিন্তু উজ্জ্বল হয় না সরকারের ভাবমূর্তি। বাজেট প্রণয়নের মতো কাজে যারা যুক্ত থাকেন, এসব বিষয় তাদের অজানা থাকার কথা নয়। তারপরও প্রতিবছর একই ধারায় এগোনো থেকে উন্নয়নকেন্দ্রিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সংশ্লিষ্টদের অদূরদর্শিতাই প্রমাণ হয়। দেশের উন্নয়নের বর্তমান ধারাকে স্বাভাবিক রাখার জন্যও এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ কাম্য।
তথ্যমতে, বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রতিবেশী ভারত ও উগান্ডার চেয়েও পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। বস্তুত গত কয়েক বছরে এক্ষেত্রে তারা যখন ক্রমে উন্নতি করেছে, সেখানে বাংলাদেশের হয়েছে অবনতি। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, সমপর্যায়ের কোনো দেশ যে ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ সে ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে কেন? প্রকৃত উত্তর নীতিনির্ধারকদেরই ভালো জানা। তারা আন্তরিকতা দেখালে বাজেট যে শতভাগ বাস্তবায়ন সম্ভব, সেটাও জানা কথা। যেসব দেশে বাজেট শতভাগ বাস্তবায়ন হচ্ছে, এটা সম্ভব হচ্ছে ওই দেশগুলোর রাজনৈতিক মহলের সদিচ্ছা ও সিদ্ধান্তের কারণে। এজন্য এক্ষেত্রে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের কার্যকর পদক্ষেপই আমরা প্রত্যাশা করি। বাজেট শতভাগ বাস্তবায়নে সরকার বিশেষভাবে মনোযোগ দিলে ফি বছর উন্নয়ন পরিকল্পনায় যেসব জটিলতা সৃষ্টি হয়, তাও অনেকটা এড়ানো যাবে।
আসন্ন অর্থবছরের জন্য যে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে, তার বিশেষ লক্ষ্য হলো সব ক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত করা। সন্দেহ নেই, এর অনুপস্থিতিতে উন্নয়ন যেমন গতি হারায়, তেমনি মানুষের জীবনে বেড়ে ওঠে ভোগান্তি। সুশাসনের অভাব নেতিবাচক প্রভাব ফেলে দেশের আর্থিক খাতে। বস্তুত এটি ত্বরান্বিত করা গেলে তা মানুষের জীবনবোধ উন্নত করার পাশাপাশি তার মধ্যে জাগ্রত করে উন্নয়নমুখী চিন্তাধারা। অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে স্তরে আমরা রয়েছি, এখান থেকে দেশকে আরও বেশি গতিতে এগিয়ে নিতে এমন মানুষ বাড়ানো প্রয়োজন। এজন্য সুশাসন নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। এমন পরিবেশের অনুপস্থিতিতে অনেক করদাতাকে দেখা যায় আস্থাহীনতায় ভুগতে। সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে কর প্রদানে মানুষের উৎসাহ যেমন বাড়বে, তেমনি সহজ হবে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন। এতে আয়ের জন্য অভ্যন্তরীণ খাতে নির্ভরতা আরও বাড়াতে পারবে সরকার। এটা যে সরকারের সামর্থ্য বাড়িয়ে তুলবে, তাতে সন্দেহ নেই। আমরা চাইবো, সরকারের দৃষ্টি থাকুক বাজেট শতভাগ বাস্তবায়নেÑযা সুশাসন ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে এগিয়ে নেবে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নকে।