Print Date & Time : 4 August 2025 Monday 9:22 am

বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শোধ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদায়ী অর্থবছর সরকারের ব্যাংকঋণ ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকমুখী। তবে চলতি অর্থবছরে সেই প্রবণতা কমেছে। এখন সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করছে। ব্যাংকগুলোর তারল্য পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার পরও সরকারের ঋণ এ খাতে চাপ বাড়াচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ১৮ হাজার ৮০৫ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে। একই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পরিশোধ করেছে ২২ হাজার ৮৮ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নিচ্ছে সরকার। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারকে সরাসরি ঋণ সরবরাহের মানে নতুন টাকা ছাপিয়ে বাজারে ছাড়ার মতো, যা মূল্যস্ফীতিকে উস্কে দেয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ স্থিতি ছিল ১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। আর আগস্টে তা কমে দাঁড়ায় ১ লাখ ৩৫ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা। অর্থাৎ দুই মাসে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকে ২২ হাজার ৮৮ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে।

অপরদিকে গত জুন শেষে ব্যণিজ্যিক ব্যাংকে সরকারের ঋণ স্থিতি ছিল ২ লাখ ৩৬ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা। আর আগস্টে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ দুই মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ বেড়েছে ১৮ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা।

সব মিলিয়ে দুই মাসে ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের নিট ঋণ কমেছে ৩ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা। জুন শেষে সরকারের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে মোট ঋণ ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। আর আগস্টে তা কমে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৯০ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দু-এক মাসের চিত্র দেখেই বলা যাবে না, এবার সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ কম নেবে। কেননা অর্থবছরের শুরুতে এমনিতেই সরকারের খরচ কম হয়। রাজস্ব আয় এবং বিদেশি উৎসের ঋণ দিয়ে খরচ সামাল দেয়া যায়।

জানা যায়, তারল্য সংকটে পড়ে এখন ধার করে চলছে অনেক ব্যাংক। সাম্প্রতিক সময়ে দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে এক ব্যাংক আরেক ব্যাংক থেকে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের ধার নিচ্ছে। সাধারণভাবে ব্যাংকগুলোকে এত বেশি ধার নিতে দেখা যায় না। আমানত সংগ্রহ কমে যাওয়া এবং ঋণ আটকে থাকা এর বড় কারণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ডলার কিনতে বড় অঙ্কের টাকা পরিশোধ করাও অন্যতম কারণ। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোতে সরকার ঋণ নিলে তারল্য সংকট আরও গভীর হবে বলে আশঙ্কা করেন ব্যাংকাররা।

তারা জানান, করোনা কিংবা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণ দেখিয়ে ঋণ পরিশোধে বিভিন্ন ছাড় দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আবার বড় গ্রাহকদের একটি অংশ বছরের পর বছর ঋণ বাড়ালেও টাকা ফেরত দিচ্ছে না। এতে করে ব্যাংকের নগদ প্রবাহে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ডলার সংকটের কারণে রিজার্ভ থেকে গত দুই বছরে ২ হাজার ২৫০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর বিপরীতে বাজার থেকে উঠে এসেছে ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। যে কারণে ডলারের পাশাপাশি বাজারে টাকারও সংকট রয়েছে। অবশ্য বিকল্প উপায়ে বাজারে তারল্য বাড়ানো হয়েছে। তারল্য না বাড়ালে ডলারের মতো টাকা নিয়ে ব্যাপক হইচই শুরু হতো।

প্রসঙ্গত, গত অর্থবছর ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার রেকর্ড ১ লাখ ২২ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা নেয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক সরবরাহ করে ৯৭ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে গত জুন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারের ঋণস্থিতি দাঁড়ায় ১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। আর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো দেয় ২৫ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকে সরকারের ঋণস্থিতি দাঁড়ায় ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।