শেয়ার বিজ ডেস্ক: ‘বাদাম বাদাম দাদা কাঁচা বাদাম, আমার কাছে নাই গো বুবু ভাজা বাদাম…” গত কদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খুললেই দেখা মিলছে এক ব্যক্তির গাওয়া এমন একটি গান। যা রীতিমত ভাইরাল। এই গানের কথায় সুরে মজেননি এমন মানুষ হাতে গোনা। কিছুদিন আগে ভাইরাল হওয়া ‘মানিকে মাগে হিথে’-এর মতোই কিশোর থেকে বুড়ো, সবাই বুঁদ এই ‘বুবু ভাজা বাদাম’-এর ছন্দে। ফেসবুক, ইউটিউব, রিলস খুললেই বেজে উঠছে এই গান।
সবার মনে প্রশ্ন কে এই ব্যক্তি? কে এই গানের জাদুকর? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেলিব্রেটি এই বাদাম ওয়ালার নাম ভুবন বাদ্যকর। ভারতের দুবরাজপুর ব্লকের অন্তর্গত লক্ষীনারায়ণপুর পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত গ্রাম কুড়ালজুড়ির গ্রামের বাসিন্দা তিনি।
জানা যায়, পেটের টানে কাঁচা বাদাম বস্তায় করে সাথে নিয়ে এই গ্রাম থেকে সেই গ্রামে ঘুড়ে বেড়ান ভুবন। সেটা বাংলা হোক বা পাশের ঝাড়খণ্ড। আগে সাইকেলে করে ঘুরলেও এখন পুরনো একটা মোটর সাইকেল কিনে তাতে চেপেই বাদাম বিক্রি করতে বের হন তিনি। গ্রামের পথে কাঁচা বাদাম বিক্রি করতে গিয়েই মনের ভাবে গান বেঁধেছেন- ‘বাদাম বাদাম দাদা কাঁচা বাদাম, আমার কাছে নাই গো বাবু, ভাজা বাদাম…’ যা সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন ভাইরাল।
বাদাম বিক্রির ফাঁকে সব সময়ই গান গাইতেন ভুবন। প্রায় সময় তার সেই গান মুঠোফোনে ধারণ করতেন অনেকে। কিন্ত সম্প্রতি অজানা এক ব্যক্তি মুঠোফোনে ধারণ করা ভুবনের বাদাম গানের সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করেন। আর তারপরই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, মজ সব যায়গাতেই ছড়িয়ে পড়ে ভুবনের সেই গান। ভিউ হয় কয়েক মিলিয়ন। আর ভুবনের এই গান দেখে আশেপাশের দূর এলাকা থেকেও আসছেন মানুষ, কিনছেন বাদাম।
নিজের ভাইরাল কীর্তি নিয়ে ভুবন বাদ্যকর সহাস্যে বললেন, ‘হ্যাঁ, এই গান আমিই লিখেছি, আমারই তৈরি। আমারই সুর, আমারই গলা। চিন্তাভাবনা করতে করতেই করেছি।’ তিনি জানান, ‘এর আগে বাউল গান করেছি। এখন আমি ঝাড়খণ্ড থেকে বাংলার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ঘুরে বাদাম ফেরি করি। সেই বাদাম কী করে বিক্রি করা যায়, সেই থেকেই ভাবনাচিন্তা। তারপরই গান লেখা।’
ভুবনবাবু জানান, ‘আমি প্রতিদিন নানা গ্রামে ঘুরে গান করতে করতে বাদাম বিক্রি করি। বিগত ১০ বছর ধরে বাদাম বিক্রি করছি। আমি বাদাম বিক্রি করতে গিয়ে এই গান করি। সেই সময় কোনও একটি ছেলে সেই গান ক্যামেরা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দিয়েছে, কিন্তু আমি সেই ছেলেটিকে চিনি না।’
ভুবন বাদ্যকর জানান, ‘গান শুনে বহু মানুষই বাদাম কিনতে আসছেন। কেউ ৫ টাকার বাদাম কিনছেন, কেউ ১০ টাকার। বিক্রিবাটা ভালোই চলছে। আগে পায়ে হেঁটে বাদাম ফেরি করতাম। কিছুদিন সাইকেলেও করেছি। এখন ১৫০০০ টাকা দিয়ে একটি মোটরসাইকেল কিনেছি। তাতে করেই বাদাম ফেরি করি।’
বাদাম বিক্রি করে প্রতিদিন ২০০-২৫০ টাকা উপার্জন হয় হয় ভুবনবাবুর। ত্রিপল দেওয়া তাঁর মাটির বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক কন্যা।
বাদামওয়ালা ভুবনবাবুর এই গানের সুরের টানে ছুটে আসেন অনেকে। শুধু গান শোনা নয়, পাশাপাশি তাঁর কাছে ক্রেতারা বাদামও কেনেন। শুধু টাকা দিয়ে নয়, পুরনো সিটি গোল্ডের চেন, চুড়ি, হাতের বালা, মোবাইল ভাঙা, হাঁসের পালক, মাথার চুল ইত্যাদির বিনিময়েও বাদাম কেনা যায় ভুবনের কাছ থেকে।
সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে রাতারাতি সেলিব্রিটি হয়ে যাওয়া ভুবন বাবু বলেন, ‘শুনে খুব ভাল লাগছে যে আমার গাওয়া গান সারা বিশ্বে বহু মানুষ দেখে ফেলেছেন। সুযোগ পেলে তাহলে আরও কিছু ভালো গান শোনাব, যদিও আমি কোনওদিন গান শিখিনি।’
বিখ্যাত পরিচালক তরুণ মজুমদারের চলচ্চিত্র ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’-এর জনপ্রিয় একটি গান ছিল ‘হরিদাসের বুলবুল ভাজা, টাটকা তাজা খেতে মজা…’। সেই বুলবুল ভাজা এতই জনপ্রিয় ছিল যা নাকি ইংল্যান্ডের রাণীরও বড় পছন্দের ছিল। নিজেদের সামগ্রী বিক্রি করতে নিয়ে গ্রামের পথে গাওয়া গান, আজ সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে ভাইরাল। এখন সময় বদলেছে। তবে এই সব বিক্রেতা-শিল্পীর কদর কমেনি।