Print Date & Time : 12 September 2025 Friday 11:42 pm

বান্দরবানে পর্যটকদের ঢল

প্রতিনিধি, বান্দরবান: প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিখ্যাত বান্দরবানে ঢল নেমেছে পর্যটকদের। বিজয় দিবসের ছুটির সঙ্গে টানা তিন দিনের ছুটিতে পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো। জেলা শহরসহ রুমা, থানচি, আলীকদম, রোয়াংছড়ি উপজেলার সবগুলো আবাসিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, গেস্টহাউস এবং সরকারি রেস্টহাউসগুলোর কোথাও কোনো রুম খালি নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় বান্দরবানে প্রকৃতির নির্মল ছোঁয়া পেতে প্রতিদিনই ভিড় জমাচ্ছেন পর্যটকরা। তবে টানা তিন দিন ছুটি পেয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে পর্যটকরা এখন বান্দরবানে এস ভিড় করছেন।

জেলার অন্যতম পর্যটন স্পট নীলাচল, মেঘলা, চিম্বুক, শৈলপ্রপাত, নীলদিগন্ত, দেবতাখুম, নীলগিরি, বগালেক, ডিমপাহাড়, তমাতুঙ্গী, রেমাক্রী সবগুলো দর্শনীয় স্থানেই এখন পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়। পর্যটকরা ছুটে বেড়াচ্ছে কখনও নীলাচলের ভিউ পয়েন্ট, মেঘলা ঝুলন্ত সেতু, কেব্লকার, চিম্বুক পাহাড়, প্রান্তিক লেকের পানিতে প্যাডেল বোটে, সাঙ্গু নদীতে ইঞ্জিন বোটে। আবার কখনও ঘুরে বেড়াচ্ছেন পাহাড়ের প্রকৃতির গাছগাছালির মাঝে মনোরম পরিবেশে।

ভ্রমণকারী পর্যটক জিমি আহমেদ এবং তুহিনা আক্তার বলেন, প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বান্দরবান। এ যেন অন্যরকম ভালো লাগায় ছুঁয়ে যায় মনপ্রাণ।

পর্যটন স্পটগুলোও খুবই সাঁজানো গোছানো এবং নিয়মশৃঙ্খলার মধ্যে পরিচালিত হচ্ছে। তবে কদিনের ছুটিতে পর্যটকদের বাড়তি চাপে কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।

আবাসিক হোটেলগুলোতে সিট পাওয়া যায়নি এবং যানবাহনের সংকটেও ভোগান্তি বাড়িয়েছে। কিন্তু সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেছে প্রকৃতির স্পর্শে।

এদিকে ক’দিনের টানা ছুটিতে চিরচেনা বান্দরবান যেন সম্পূর্ণ বদলে গেছে। মনোরম শান্ত প্রকৃতির সৌন্দর্যময় বান্দরবান জেলা পরিণত হয়েছে লোকে লোকারণ্য। যানবাহনের জ্যাম এবং ব্যস্ত নগরীতে রূপ নিয়েছে জেলা শহর। আবাসিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, গেস্টহাউস এবং সরকারি রেস্টহাউসগুলোর কোথাও কোনো রুম খালি নেই। আবাসিক হোটেলগুলোতে রুম না পেয়ে রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি, আলীকদম উপজেলাসহ জেলা সদরের আশেপাশের পাহাড়ি পল্লিগুলোতে পাহাড়িদের মাচাংগুলোকে অর্থের বিনিময়ে থাকার বিকল্প স্থান হিসাবে বেছে নিচ্ছে। পর্যটকবান্ধব স্থানীয় পাহাড়িরা অর্থের বিনিময়ে পর্যটকদের রাত্রীযাপন এবং খাবারের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন।

পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, কভিড মহামারির ধকল কাটিয়ে প্রায় দুই বছর পর বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে বান্দরবানের পর্যটন জেগে উঠেছে। মাসের শুরু থেকে পর্যটকরা হোটেল-মোটেল ও অবকাশ যাপনকেন্দ্রগুলোতে আগাম ভাড়া নিতে থাকেন। কোথাও কোনো সিট খালি নেই। জেলা শহর ও শহরতলীতে ছোট-বড় ৬৫টি আবাসিক হোটেল-মোটেল ও অবকাশকেন্দ্রে চার হাজার পর্যটক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এসব পর্যটন স্পটে কোথাও কোনো জায়গা খালি নেই।

এ বিষয়ে জেলা ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার আব্দুল হালিম বলেন, পর্যটকদের নিরাপদ ও আরামদায়ক ভ্রমণ নিশ্চিত করতে যাবতীয় পরামর্শ এবং সহায়তা করছেন ট্যুরিস্ট পুলিশ। পর্যটক হয়রানি বন্ধে শৃঙ্খলা মেনে ভ্রমণকারীদের ঘুরে বেড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, নতুন রং লাগিয়ে এবং ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে সাজানো হয়েছে সব পর্যটন স্পট এবং আবাসিক হোটেল। পর্যটকদের বরণে জেলা প্রশাসন, ট্যুরিস্ট পুলিশ এবং স্থানীয় আবাসিক হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও ট্যুরিস্ট পরিবহন মালিক সমিতি বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তার মধ্যে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে জেলা প্রশাসন পরিচালিত সবগুলো পর্যটন স্পটের প্রবেশ ফি একদিনের জন্য ফ্রি করে দেন। ট্যুরিস্ট পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা ভ্রমণকারীদের ফুলের স্টিক দিয়ে বরণ করে নেন।

কক্সবাজার সৈকতে চার লাখ পর্যটক: এদিকে তিন দিনের ছুটিতে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত দেখতে এসেছেন কয়েক লাখ পর্যটক। ফলে স্থানীয় হোটেল-মোটেলে থাকার জায়গা না পেয়ে অনেকে রাস্তায় গাড়িতেও রাতযাপন করছেন। ট্যুরিস্ট পুলিশ ও ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের (টুয়াক) তথ্যমতে, গতকাল শুক্রবার সৈকত এলাকায় অন্তত চার লাখ পর্যটকের সমাগম হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার সময় কক্সবাজার কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল থেকে কলাতলী হাঙর ভাস্কর্য মোড় পর্যন্ত চার কিলোমিটার সড়কে পাঁচ শতাধিক দূরপাল্লার বাস দাঁড়িয়ে আছে। এছাড়া রয়েছেÑশত শত ছোট আকৃতির যানবাহন মাইক্রোবাস, সিএনজিচালিত ইজিবাইক ও ব্যক্তিগত গাড়ি।

ট্যুরিস্ট পুলিশ ও টুয়াকের তথ্যমতে, সৈকত এলাকায় আছেন অন্তত চার লাখ পর্যটক। এর মধ্যে দুই লাখের মতো পর্যটক হোটেল-মোটেলে উঠেছেন। কিছু পর্যটক সেন্টমার্টিন, টেকনাফ, ইনানি, হিমছড়ি, চকরিয়ার সাফারি পার্ক, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির ভ্রমণে গেছেন। আরও অন্তত ২০ হাজার পর্যটক হোটেল কক্ষ না পেয়ে বাসে কিংবা রাস্তাঘাটে ঘোরাফেরা করে সময় পার করছেন।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, সকালে এক লাখের বেশি পর্যটক সৈকতে নেমে লোনাজলে শরীর ভিজিয়েছেন। তিনি বলেন, বিপুলসংখ্যক পর্যটকের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর।