প্রতিনিধি, বান্দরবান:বান্দরবানে চারদিন ধরে অবিরাম বর্ষণে বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসে ঘরবাড়ি ও সড়ক বিধ্বস্ত হয়েছে। পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিতে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে দুর্গত পরিবাররা।
গতকাল রোববার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় এ বছরের সর্বোচ্চ ১৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বান্দরবান মৃত্তিকা ও পানি সংরক্ষণ গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহাবুবুল ইসলাম।
প্রশাসন ও স্থানীয়রা জানায়, গত বৃহস্পতিবার থেকে বান্দরবান জেলার সাতটি উপজেলায় অবিরাম বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে জেলার সাতটি উপজেলায় ১৯২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় তিন শতাধিকের মতো লোকজন আশ্রয় নিয়েছে।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ধসে পড়েছে জেলা সদরের ইসলামপুর, কাসেমপাড়া, লেমুঝিরি এলাকা, বালাঘাটা, কালাঘাটা, বনরূপাপাড়া, হাফেজঘোনা এলাকায় ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অপরদিকে বান্দরবান-কেরানীহাট-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, বান্দরবান-রাঙামাটি সড়ক, লামা-সুয়ালক সড়ক, রোয়াংছড়ি-রুমা, থানচি অভ্যন্তরীণ সড়কের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অন্যদিকে কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে বান্দরবানে সাঙ্গু ও মাতামুহুরি দুটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদী তীরবর্তী কয়েক শতাধিক ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিতে আর্মিপাড়া, ইসলামপুর, শেরেবাংলা নগর এলাকার নিন্মাঞ্চলের শতশত ঘরবাড়ি ডুবে গেছে।
জলাবদ্ধতায় বালাঘাটা, কালাঘাটা, বনরূপা সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীর অভিভাবক জাহাঙ্গীর আলম, সত্যজিত চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, ছড়াখাল দখল করে স্থাপনা তৈরি করায় পানি নিষ্কাশনের পথগুলো সরু হয়ে যাওয়ায় বালাঘাটা বান্দরবান-রাঙামাটি সড়কটি তলিয়ে যায়। এতে ক্যান্ট পাবলিক স্কুল-কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ, পুলিশ লাইনস স্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে পড়েছে। রাস্তার দু’পাশের গাড়ির দীর্ঘলাইন লেগে যায়। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে হাঁটুপানি দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে।
এদিকে প্রাণহানির আশঙ্কায় পাহাড়ধস এবং নদীর তীরবর্তী লোকজনদের ঝুঁকিপূর্ণ বসতিগুলো ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। লোকজন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া মো. ইব্রাহিম, শেলিনা আক্তার বলেন, পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিতে ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু এখানে খাবার পানি ও রান্নাবান্নার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, কয়েকদিনের বৃষ্টিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের শঙ্কা বেড়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলায় ১৯২টি আশ্রয়কেন্দ্রগুলো খোলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় আশ্রয় নিচ্ছে লোকজন। পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী মজুত রয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে প্রশাসনের।