এমএ শাহরিয়ার, বান্দরবান: বান্দরবানে সাম্প্রতিক বন্যা ও পাহাড়ধসে বিধ্বস্ত সড়কগুলোয় জনদুর্ভোগ বেড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো কোথাও কোথাও পরিণত হয়েছে মৃত্যুফাঁদে। বিধ্বস্ত অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো সংস্কারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি), সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডÑএ তিনটি বিভাগ ১৩ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে প্রস্তাব করেছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। তবে এরই মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়ক সংস্কারের কাজও শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
প্রকৌশল বিভাগ ও জনপ্রতিনিধিরা জানান, সাম্প্রতিক বন্যা ও পাহাড়ধসে বান্দরবানের সাতটি উপজেলায় অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা, আলীকদম, রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলায়। কোথাও কোথাও সড়ক ধসে পড়ায় এবং নদী, খাল ও ছড়ার ভাঙনে সড়কের চিহ্নও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর কোথাও কোথাও ধসে মৃত্যুর ফাঁদে পরিণত হয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে হালকা যানবাহন এবং মানুষ চলাচল করতে গিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনাও। তবে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর গুরুত্ব বিবেচনায় জরুরি ভিত্তিতে সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের কাছে ১৩ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকৌশলীরা। এর মধ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) প্রায় চার কোটি টাকা, সড়ক ও জনপথ বিভাগ দুই কোটি টাকা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ, বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম ও সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনি মারমা বলেন, ঘুমধুম, বাইশারী ও সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বন্যা ও পাহাড়ধসে সড়কের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অনেক স্থানে ধসের কারণে সড়কের চিহ্নও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। স্থানীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো সংস্কার করা সম্ভব নয়। তাই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে শিগগির সড়কগুলো সংস্কার করে জনদুর্ভোগ লাঘবের দাবি জানাচ্ছি।
বান্দরবান এলজিইডি সিনিয়র প্রকৌশলী মো. জামাল উদ্দিন বলেন, সাম্প্রতিক বন্যা ও পাহাড়ধসে নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা, আলীকদম ও রুমা উপজেলায় এলজিইডির নির্মিত সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো সংস্কারের জন্য প্রায় চার কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তবে জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় কয়েকটি সড়ক জরুরি ভিত্তিতে ঠিকাদারদের অনুরোধ করে সংস্কারের কাজও শুরু করেছি।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের স্টিমিটার মো. শরীফ বলেন, সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতে দুই কোটি টাকার বেশি লাগবে। তবে আমরা বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক এবং সেনাবাহিনী, সড়ক ও জনপথ বিভাগের বাস্তবায়িত সড়কগুলোর সংস্কারে সর্বমোট ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। প্রাপ্ত বরাদ্দ অনুপাতে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো সংস্কার করা হবে। কিন্তু অতি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো নিজস্ব থোক বরাদ্দ থেকে মেরামত করা হচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবান ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বিন ইয়াছির আরাফাত জানান, সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে চার উপজেলায় সড়কের বেশি ক্ষতি হয়েছে। পুরোনো ক্ষতিগ্রস্ত সড়কও রয়েছে। সাম্প্রতিক বন্যায় বিধ্বস্ত ও পুরোনো ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো মেরামতের জন্য প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। তবে জনগণের ভোগান্তি কমাতে জনস্বার্থে ঠিকাদারদের দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি সড়ক দ্রুত মেরামতের কাজও শুরু করেছি।