বারংবার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি কাম্য নয়

‘বিদ্যুৎ বিলে ৬ শতাংশ উৎসে আয়কর আরোপ: উৎসে করের কারণে আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়ার শঙ্কা’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, তা পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। খবরে বলা হয়, নিজস্ব কেন্দ্রের পাশাপাশি বেসরকারি খাত থেকে বিদ্যুৎ কিনে বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বিক্রি করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। বেশি দামে কিনে কম দাম বিদ্যুৎ বিক্রি করায় প্রতি বছর বাড়ছে সংস্থাটির লোকসান। গত জুন পর্যন্ত পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। এর পরও পিডিবির ওপর চাপানো হয়েছে ছয় শতাংশ উৎসে আয়কর। নতুন করে উৎসে আয়কর আরোপের ফলে সংস্থাটির ক্ষতি আরও বাড়বে বলে মনে করছে পিডিবি।

পিডিবি বলছে, ক্ষতি কমাতে বাড়াতে হবে বিদ্যুতের দাম। কিন্তু বিকল্প কিছু না ভেবেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কথা বিবেচনা করা জনস্বার্থবিরোধী বলেই আমরা মনে করি। অন্যভাবে সমাধান মিললে কেন বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে? সে ধরনের ভাবনা উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোরই নামান্তর।

বিদ্যুতের দাম বাড়লে তা শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যকে প্রভাবিত করবে। এতে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে, যার অভিঘাত পড়বে পণ্যের দামে। তাই দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। ভাড়া ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে অপচয় ও লুটপাট এবং অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দিলে লোকসান কমবে। নিজেদের দুর্নীতি ও অদক্ষতার কারণে লোকসানের মাশুল সাধারণ মানুষের ওপর যেন না চাপানো হয়। গ্রাহক অবশ্যই যৌক্তিক দাম দেবে। আবাসিক পর্যায়ে ব্যবহারকারীদের অপচয় ঠেকাতে না হয় প্রিপেইড মিটার! কিন্তু যোগসাজশেও অনেক বিদ্যুৎ চুরি হয়। চুরি বন্ধ করলে সংস্থার আয় বাড়বে। বিদ্যুৎ তো উৎপাদন প্রক্রিয়ায়ও সম্পৃক্ত। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি মানে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া। শিল্পমালিকদের ওই বাড়তি খরচ ভোক্তদেরই দিতে হবে। শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ মানুষ। সাধারণত জ্বালানির মূল্য বেড়ে গেলে বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে। কিন্তু জ্বালানির না বাড়লে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কোনো যুক্তি নেই।

নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে সহজ উপায় দাম বাড়ানো। এটি না করে সিস্টেম লস, অবৈধ সংযোগ ও বিদ্যুতের অপচয় কমানোর দিকে মনোযোগ দিলে দাম বাড়াতে হবে না। পিডিবি একটি লোকসানি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। লোকসানি সংস্থা পিডিবি অনন্তকালের জন্য লোকসানি থাকতে পারে না।

দাম না বাড়ালে রাষ্ট্রকে ভর্তুকি দিতে হবে। তাও জনগণের অর্থ। সেটিও কাম্য নয়। কভিডকালে চালের দামসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এমনিতেই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এ অবস্থায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি তাদের কষ্ট আরও বাড়াবে। সামগ্রিকভাবে বিদ্যুৎ খাতের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং অপচয় ও দুর্নীতি কমানোর মাধ্যমেও পিডিবির লোকসান কমিয়ে আনার বিষয় বিবেচনা করতে হবে। এসব উদ্যোগ না নিয়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর মতো সহজ পথ ধরার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।