অর্থবছরের সাত মাস

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন হার পাঁচ বছরে সর্বনিম্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) মোট বরাদ্দের ২৭ দশমিক ১১ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে এটি সর্বনিম্ন বাস্তবায়ন হার। সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন নীতির কারণে এডিপি বাস্তবায়ন কম হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) গতকাল এডিপি বাস্তবায়নের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাস ২০২৩ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে ৭৪ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকার। এটি অর্থবছরের মোট এডিপি বরাদ্দের ২৭ দশমিক ১১ শতাংশ। এর আগের অর্থবছর প্রথম সাত মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ২৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ বাস্তবায়ন হার ছিল ৩০ দশমিক ২১ শতাংশ। এমনকি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে দেশে কভিড অতিমারির প্রভাব থাকা সত্ত্বেও চলতি অর্থবছরের তুলনায় বেশি হারে এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছিল। ওই অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ২৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৩২ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের এডিপিতে মোট বরাদ্দের পরিমাণ দুই লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন এক লাখ ৬৯ হাজার কোটি, বৈদেশিক ঋণ বা প্রকল্প সাহায্য ৯৪ হাজার কোটি এবং বিভিন্ন সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ১১ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। বাস্তবায়নের হার পর্যালোচনায় দেখা যায়, সরকারি অর্থায়ন অংশে বাস্তবায়ন হার সবচেয়ে কম। এক্ষেত্রে বাস্তবায়িত হয়েছে ২৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ বা ৪২ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা। এটি প্রথম সাত মাসের গড়

বাস্তবায়নের চেয়ে কম। বৈদিশিক সহায়তা অংশে বাস্তবায়িত হয়েছে ৩০ দশমিক ২০ শতাংশ বা ২৮ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা। আর সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন অংশে বাস্তবায়িত হয়েছে ২৭ দশমিক ৮০ শতাংশ বা তিন হাজার ২৪৫ কোটি টাকা।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এডিপি বাস্তবায়ন পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাস্তবায়ন হারে বরাবরের মতোই সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এডিপিতে এ মন্ত্রণালয়ের বিপরীতে বরাদ্দ রয়েছে ৯৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে মাত্র তিন কোটি ৩৩ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের মাত্র তিন দশমিক ৫৬ শতাংশ। এডিপি বাস্তবায়নে পিছিয়ে থাকর দিক থেকে এর পরের অবস্থানে রয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। ৩১৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকার এডিপি বরাদ্দের বিপরীতে অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে বিভাগটি বাস্তবায়ন করেছে মাত্র ২১ কোটি ১২ লাখ টাকা। এটি মোট বরাদ্দের মাত্র ছয় দশমিক ৬৪ শতাংশ। এছাড়া ১৩ শতাংশের নিচে বাস্তবায়িত হয়েছে এমন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে রয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ।

বাস্তবায়নে সবচেয়ে এগিয়ে থাকার সংস্থার তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে আইএমইডি। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে সংস্থারটির বিপরীতে বরাদ্দের পরিমাণ ১২২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। প্রথম সাত মাসে সংস্থাটি বাস্তবায়ন করেছে ১১৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৯৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ। বাস্তবায়ন হারে এর পরের অবস্থানে রয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে মন্ত্রণালয়টি তাদের ১১৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকার বরাদ্দের বিপরীতে বাস্তবায়ন করেছে ৯১ কোটি ৯ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৭৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ। বাস্তবায়নে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। সংস্থাটির বাস্তবায়নের হার ৭১ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ। আর চতুর্থ অবস্থানে থাকা আইন ও বিচার বিভাগের বাস্তবায়নের হার ৫৩ দশমিক ১১ শতাংশ। মন্ত্রণালয়টি ১৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে সাত মাসে ব্যয় করেছে ৮৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।