দেশের প্রধান নগরী ঢাকার বাসযোগ্যতা দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্নবিদ্ধ। বিভিন্ন সময় রাজধানীর উন্নয়নে অনেক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, সেগুলোর একটিও পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করা হয়নি বা যায়নি। অথচ এসব পরিকল্পনার মূল লক্ষ্যই ছিল বাসযোগ্য ঢাকা মহানগরী।
রাজধানীর বাস্তবতায় কোনো পরিকল্পনা করা কঠিন বটে। তাই বলে একটি পরিকল্পনা যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়া দুঃখজনক। কর্মসংস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা এবং দাপ্তরিক প্রয়োজনে নিয়তই রাজধানীতে জনসে াত বাড়ছে। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ এবং ইপিজেড-এসইজেড-ইজেড স্থাপন করে মানুষকে সরিয়ে নেয়া হলেও চিকিৎসা-শিক্ষাসহ নানা কারণে মানুষের ঢাকায় আসা বন্ধ করা যাবে না।
ঢাকা মহানগরীর ১ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে সংশোধিত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) চূড়ান্ত হয়েছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এটি চূড়ান্ত করা হয়। এর মেয়াদ হবে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত।
ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকার জনসংখ্যার ঘনত্বকে নাগরিক সুবিধার সঙ্গে আনুপাতিক রেখে ও ২০৩৫ সালের মধ্যে পরিকল্পিত অবকাঠামো গড়ে তুলে আরও ৬০ লাখ মানুষকে বসবাসের সুবিধা দেয়া, পথচারীবান্ধব অবকাঠামো গড়ে তুলে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমিয়ে আনা, নগরবাসীর জন্য পর্যাপ্ত মাঠ-পার্ক তৈরি, সড়ককে গণপরিসরে পরিণত করাসহ বিভিন্ন প্রস্তাব এই পরিকল্পনায় রয়েছে।
রাজধানীতে ২০০৮ সালের পর সুউচ্চ আবাসিক ভবন নির্মাণ শুরু হয়। ওই বছর রাজউকের আওতাধীন এলাকায় ঢাকা মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় প্রথমবারের মতো ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর) যুক্ত করা হয়। এফএআর হচ্ছে একটি প্লটে কত আয়তন বা উচ্চতার ভবন নির্মাণ করা যাবে, তা নির্ধারণ করার সূচক। এফএআরের মান কমবেশির সঙ্গে ভবনের আয়তন বা উচ্চতা কমে বা বাড়ে। সাধারণত একটি এলাকার পরিবহন সক্ষমতা, অবকাঠামো ও নাগরিক সুবিধা বিশ্লেষণ করে এফএআরের মান নির্ধারণ করা হয়। ড্যাপে প্রতি তিন বছর অন্তর এফএআরের মান সংশোধনের বিধান রাখা হয়েছে। জনঘনত্বের ভিন্নতায় নাগরিক সেবায় তারতম্য হতে পারে। যেমন, উত্তর সিটির মোহাম্মদপুর ও শ্যামলীর (২৯ থেকে ৩৪ ওয়ার্ড) আয়তন ২ হাজার ৪৭০ একর, যাতে প্রায় তিন লাখ মানুষ থাকার কথা, আছে দ্বিগুণের বেশি। এতে স্বাভাবিকভাবেই চাপ পড়ছে নাগরিক সেবায়। ফলে নাগরিক সেবার মান কম ও অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এলাকায় এফএআরের মান কমানো হয়েছে। কোনো এলাকায় এফএআরের মান কম হয়েছে বলে কেউ যৌক্তিক আবেদন করলে তা বিবেচনা করবে রাজউক। এ সুযোগ রাখায় বিশৃঙ্খলা ও দুর্নীতির সুযোগ রয়েছে। যে বেশি অর্থ দিতে পারবে, তার প্রস্তাব ‘যৌক্তিক’ হয়ে যেতে পারে। ফলে ড্যাপ বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। কেননা, সবাই তো অসাধু কর্মকর্তাদের খুশি করতে পারে না।
নতুন ড্যাপকে আমরা পরিপূর্ণ পরিকল্পনা বলতে পারি। কিন্তু বাস্তবায়ন করা না গেলে ‘পরিপূর্ণ পরিকল্পনা’ও নগরবাসীর জন্য কোনো সুফল বয়ে আনবে না। আমরা বিশ্বাস করি, বাস্তবায়ন করা হবে না, এমন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ড্যাপ প্রণীত হয়নি। তাই এটির পূর্ণ বাস্তবায়নে রাজউকের সর্ব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীলতা কাম্য।